
বিতর্ক থেকে কীভাবে ডিভিডেন্ট ঘরে তুলতে হয়, সেটা বোধহয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ভাল আর কেউ জানেন না। শুক্রবার, ভারতে যখন রথযাত্রার উৎসব চলছে, সেই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ড্যাডি’ লেখা টিশার্ট বিক্রির কথা ঘোষণা করলেন। আর ট্রাম্প এই পোস্ট করতেই সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ব্যাপক শোরগোল-আলোচনা। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের সবচেয়ে ‘শক্তিশালী’ মানুষটি কেন ‘ড্যাডি’ লেখা টিশার্ট বিক্রিতে নেমেছেন? আজ আপনাদের জানাব পিছনের আসল কারণটা।
টিশার্টে লেখা- “THEY’RE CALLING ME DADDY!”
আসলে এই ঘটনার সূত্রপাত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে ন্যাটো সামিট ২০২৫-এ। ন্যাটো সচিবের সঙ্গে আলোচনার সময় উঠে আসে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের প্রসঙ্গ। বিবাদমান দুই দেশের সংঘর্ষবিরতি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘দুজনেই লড়ছিল। মনে হচ্ছিল যেন দুজন বাচ্চা স্কুলের মধ্যে লড়াই করছে। আপনি জানেন ওরা দুজনেই খুব বিচ্ছু। লড়েই যাবে। আপনি থামাতে পারবেন না। আপনার তখন ওদের দু থেকে তিন মিনিট লড়তে দিতে হয়। তারপর লড়াইটা থামানো সহজ হয়।’ ট্রাম্প একথা বলার পরেই ন্যাটো সচিব বলে বসেন, ‘তখনই ড্যাডি-কে (বাচ্চার বাবাকে) আসরে নামতে হয়, কড়া পদক্ষেপ করতে হয়।’ ব্যাস! ক্যামেরায় ন্যাটো সচিবের এই কথা ধরা পড়তেই ‘ড্যাডি‘ শব্দবন্ধটি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়।
ট্রাম্প কি তাহলে অন্য দেশগুলিকে নিজের ‘সন্তান’ বললেন? মানে ঘুরিয়ে বাকি দেশগুলির উপর কর্তৃত্বের বার্তা দিলেন? ট্রাম্প অবশ্য ঠাট্টা করে এর উত্তরে বলেন, ‘ও (ন্যাটো সচিব) আমাকে খুব পছন্দ করে। যদি না করে, তাহলে আমি আবার ফিরে এসে ওকে খুব জোরে মারব। সেটা ও জানে। তাই আমার আগুপিছু ঘুরতে ঘুরতে আমাকে ড্যাডি ড্যাডি বলে।’ পরে ন্যাটো সচিব অবশ্য সাফাই দেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলির সখ্যতা বোঝাতে গিয়েই তিনি পিতা ও সন্তানের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। কিন্তু সে সব ব্যাখ্যাতে আর তখন চিঁড়ে ভেজার ফুরসৎ নেই। ততক্ষণে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ট্রাম্পের নামের আগে-পরে বসে গেছে ‘ড্যাডি’। ন্যাটো সম্মেলনের পর থেকেই ট্রাম্প যেখানেই যাচ্ছেন, শুনতে হচ্ছে ‘ড্যাডি’ ‘ড্যাডি’ ডাক!
এমনকী ন্যাটো সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সময়ও বারবার উঠে এসেছে ‘ড্যাডি’ প্রসঙ্গ। ট্রাম্পও তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই ট্রাম্প যে হোয়াইট হাউসে ফিরে গিয়ে যে এহেন কাজ করে বসবেন, আগাম আঁচ করা যায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে যে ‘ট্রাম্প ন্যাশনাল জয়েন্ট ফান্ডরেইজিং কমিটি‘, তারা রাতারাতি ‘ড্যাডি’ লেখা টিশার্ট ছাপিয়ে বিক্রি করতে শুরু করে দিল। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার লিঙ্ক শেয়ার করলেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ। বিজ্ঞাপনের প্রচারে লেখা– বাইডেনের আমলে গোটা দুনিয়া আমাদের দেখে হাসত। কিন্তু আমাদের প্রিয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ, তাঁর জন্যই ন্যাটো এখন আমাদের বিশ্বের সামনেই ড্যাডি বলে মেনে নিল।’ ট্রাম্পের ওয়েবসাইটে এক একটি টিশার্টের দাম শুরু হচ্ছে ৩৫ ডলার থেকে। তবে অনুদান দেওয়া যাবে ৩০০০ ডলার বা তার চেয়ে বেশিও।