
১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেই বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে গিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান(Tarique Rahman), এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দেশে ফেরার সময় কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ও ভিড় চোখে পড়লেও, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহে স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা। কট্টরপন্থী ও মৌলবাদীদের প্রভাব উপেক্ষা করে রাজনীতি করা যে আর সম্ভব নয়, তা বুঝে গিয়েছেন তারেক, এমনই ইঙ্গিত মিলছে।
সূত্রের খবর, একদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) ও জামাতের মধ্যে জোট আলোচনা চলছে। অন্যদিকে, জামাতের মতোই কট্টর ও গোঁড়া তিনটি ছোট দলের সঙ্গে জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে দাবি, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ তারেক রহমানকে এই পথেই এগোনোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, এবং খালেদা জিয়ার ছেলে তাতে সম্মতি দিয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য, জুলাই আন্দোলন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরই গঠিত হয় এনসিপি। জুলাই আন্দোলনের সামনের সারির ছাত্রনেতারাই এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। প্রথম দিকে ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তমনা বাংলাদেশের স্লোগান তুললেও, হঠাৎ করেই দলটি জামাতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অথচ বাংলাদেশের জামাতের অতীত, গণহত্যা ও হিংসার ইতিহাস, তাদের অজানা নয় বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে কট্টরপন্থীরা শক্ত শিকড় গেড়েছে। এই পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারেন না হাসিনাও। সেই সুযোগেই ইসলামিক স্টেট (IS) আবার মাথা তুলছে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে প্রভাব বিস্তারের জন্য বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে দেখছে IS—এমন ইঙ্গিতও মিলছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক স্তরেও তৎপরতা বেড়েছে। নাইজেরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটিতে মার্কিন বিমানহানা চালানো হয়েছে। বড়দিনের রাতে জর্ডনের মার্কিন সেনাঘাঁটি থেকে এফ-১৫ যুদ্ধবিমান উড়ে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার আইসাবাফোর এলাকায় প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ করে। এরপরই Truth সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প(Donald Trump) পোস্ট করেন—“মেরি ক্রিসমাস, নিহত জঙ্গিদেরও”। তাঁর মন্তব্য, সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের হত্যার ঘটনা চলতে থাকলে এমন অভিযান আরও হবে।
আইএস বিরোধী অভিযানে মার্কিন তৎপরতা এখানেই থামেনি। ২০ ডিসেম্বর দিন ও রাতে সিরিয়াতেও মার্কিন বায়ুসেনা বিমানহানা চালায়, লক্ষ্য ছিল আইএসের অস্ত্রভাণ্ডার। গতকালও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় হামলা হয়েছে, যেখানে খ্রিস্টান নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই বিষয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারার বিরুদ্ধে সরাসরি আঙুল তোলেননি ট্রাম্প। কূটনৈতিক মহলের মতে, বর্তমানে আল-সারা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা।
এর আগে, দু’মাস আগে হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামফোসাকে তীব্র প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন ট্রাম্প। ওভাল অফিসে আলো নিভিয়ে তাঁকে বিভিন্ন ভিডিও দেখিয়ে অভিযোগ করা হয়, গোষ্ঠী সংঘর্ষের আড়ালে সে দেশে খ্রিস্টানদের হত্যা করা হচ্ছে।