
তেহরান: ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধের মধ্যেই সংঘাতে জড়িয়েছে আমেরিকা। ইরানের তিন নিউক্লিয়ার সাইটে হামলা চালিয়ে ঝড় তুলে দিয়েছে ট্রাম্পের সেনা। এমতাবস্থায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে হরমুজ প্রণালী। বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। তার জেরে একধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে অপরিশোধিত তেলের দাম। তাতেই গোটা বিশ্ব জুড়ে তৈরি হয়েছে আশঙ্কার মেঘ। সূত্রের খবর, আশঙ্কার মেঘ দানা বাঁধতেই অন্তত ৫০টি তেলের ট্যাঙ্কার তড়িঘড়ি হরমুজ প্রণালী ছাড়ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহলের বড় অংশের দাবি, ইরান যদি সত্যিই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে এর প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বরং গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতিতে ভয়াবহ হবে। কিন্তু কেন এতটা গুরুত্ব হরমুজ প্রণালীর?
হরমুজ প্রণালীর কৌশলগত গুরুত্ব কী?
হরমুজ প্রণালী আদতে একটি সংকীর্ণ জলপথ। যা পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ সামুদ্রিক তেল রফতানি হয় এই পথ দিয়েই। প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এখান দিয়ে যায় সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বিশ্ববাজারে।
ইরান কেন এটি বন্ধ করতে চাইছে?
ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের মধ্যে ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ ফলে ইরান তার আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে চায়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক চাপের জবাবে কৌশলগত চাপ সৃষ্টির জন্য এটি ইরানের একটি শক্তি প্রদর্শনের কৌশল। বিশেষজ্ঞারা বলছেন, এটি একটি ‘চোকার পয়েন্ট’ – অর্থাৎ, বন্ধ করে দিলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও জ্বালানি প্রবাহ থেমে যেতে পারে।
কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ববাজারে?
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যেতে পারে তেলের দাম। ব্যারেল প্রতি তা এক্কেবারে ১৫০ মার্কিন ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। যার জেরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কট শুরু হবে। ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ বিপদে পড়বে। পিছনে পিছনে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানি পণ্যের দামও ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে।
ভারতের উপর কী প্রভাব?
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এর জেরে ভারতের অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়তে পারে। কারণ ভারত তার অধিকাংশ তেল এই অঞ্চলের দেশগুলি থেকেই আমদানি করে। অন্যদিকে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ ও চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, তেল আমদানির ক্ষেত্রে ইরানের উপর ভারতের নির্ভরশীলতা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। যা এখন অনেকটাই রাশিয়ার হাত ধরে আসে। রাশিয়ার তেলেই এখন অনেকটা কাজ চালাচ্ছে ভারত। তাই ইরান এই সিদ্ধান্ত নিলে ভারতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হয়। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে অনেকেই বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এটি সরাসরি বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্যের ওপর হামলার সামিল। আমেরিকার নৌবহর ইতিমধ্যেই বাহরাইন, কাতার ও ওমানের ঘাঁটিতে প্রস্তুত রয়েছে।মার্কিন Navy Fifth Fleet এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি পথ নিশ্চিত করার জন্য তৈরি রয়েছে বলে খবর। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চিন, জাপান – যারা এই অঞ্চলের তেলের উপর নির্ভরশীল, তারাও কূটনৈতিক এবং সামরিক চাপ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত হরমুজ সঙ্কটের জল কোনদিকে গড়ায়।