কোন দেশ সবচেয়ে সুখী? কেন সেদেশে দুঃখ নেই? জানেন?

হলুদ বনে হারিয়ে যাওয়া নাকছাবিটার খোঁজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ

কোন দেশ সবচেয়ে সুখী? কেন সেদেশে দুঃখ নেই? জানেন?

| Edited By: সোমনাথ মিত্র

Feb 04, 2025 | 8:47 PM

যে যত বড়লোক তার দুঃখ তত বেশি, কারণ ‘ডাকাইতের ভয়ে রেতে ঘুম নাই’। গুপি-বাঘার এই সহজ-সরল জীবনদর্শন আপনি উড়িয়ে দিতে পারবেন না। তাহলে কি যার টাকা-পয়সা কিছুই নেই, সেই বেশি সুখী? এ প্রশ্নের উত্তরেও আপনি হ্যাঁ বলতে পারবেন না… কেউ হয়ত বলবেন, অর্থ নয়, সুন্দর একটা পরিবার, ভালোবাসা, কতগুলো সুন্দর সম্পর্ক… এসবেই লুকিয়ে আছে সুখ। কবি তখন বলবেন, “বধূ শুয়েছিলো পাশে – শিশুটিও ছিলো; প্রেম ছিলো, আশা ছিলো। তবু ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হ’লো তার সাধ; শোনা গেল লাসকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে।” জীবনানন্দ দাশের আট বছর আগের একদিন। কী বলবেন?

কিংবা ধরুন, ব্যর্থ প্রেমিক কী করে? গান গায়। কবিতা পড়ে। ছবি আঁকে। পাহাড়ে বেড়াতে যায়। আর সফল প্রেমিক কী করে? টাকা বাঁচায়। মশারি গোটায়। বাজার যায়। অফিসে বসের গালি খায়। দু-জনের মধ্যে তা হলে কে সুখী? উত্তর দেওয়া সহজ নয়। আসলে সুখ শব্দটা ব্যাখ্যা করাই কঠিন। টাকা থাকলেই কি সুখ আসে। উত্তর যদি না হয়। তাহলে কি আপনি বলতে পারবেন যে মানুষটা রোজ দুবেলা দুমুঠো জোগাড় করার জন্য দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। দুঃখ নিয়ে যাঁর ভাবার সময় নেই। তিনিই সুখী। এরও কোনও উত্তর হয় না। সুখী কে। বনবাসে যক্ষের প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন যাঁর কোনও ঋণ নেই। যিনি প্রবাসে থাকেন না। দিনের শেষে ঘরে ফিরে শাকান্ন রান্না করে খান। তিনিই সুখী। আজকের পৃথিবীর ইট-কাট-পাথরের বাস্তবতার সঙ্গে সুখের এই ডেফিনেশন মেলানোও কিন্তু কঠিন।

মরাল ফিলোজফি বা নীতিবিদ্যায় হেডোনিজম বলে এক শব্দ আছে। গ্রিক শব্দ হেডোন মানে হল প্লেজার। সেই অর্থে হেডোনিজমকে
বাংলায় বলা হয় সুখবাদ। এই তত্ত্বের সমর্থকরা বলেন সব মানুষ সুখী হতে চায়। তাই সুখের পথেই জীবনের সার্থকতা। এটা একটা বিতর্কিত বিষয়। খোলা বই। জানেন কি ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স বা বিশ্ব সুখ সূচক নামে একটা জিনিস আছে? যা প্রকাশ করে গ্যালাপ নামক এক মার্কিন সংস্থা। যাদের রিসার্চকে দুনিয়া মান্যতা দেয়। গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোলের রিপোর্ট বলছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকা নয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চিন নয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া, জার্মানির মতো শক্তিধর দেশ নয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হল ফিনল্যান্ড। এ নিয়ে পরপর ৭ বার সুখ সূচকে তারা প্রথম হল। তারপর আছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, ইজরায়েল, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ের মতো দেশগুলো। দেশগুলো প্রায় সবই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ। যে দেশগুলোয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষের সামাজিক সুরক্ষা।

এই তালিকায় ভারত আছে ১২৬ নম্বরে। সবার শেষে ১৪৩ নম্বরে আফগানিস্তান। আমেরিকা, জার্মানি প্রথম কুড়ি থেকে ছিটকে গিয়েছে। ব্রিটেনের স্থান হয়েছে ঠিক কুড়ি নম্বরে। গ্যালাপের রিপোর্টে কয়েকটা মাপকাঠি ঠিক করে নেওয়া। তার মধ্যে রয়েছে আয়, আয়ু, সুস্থ জীবন, সমাজে সহযোগিতার মনোভাব, স্বাধীনতা, উদারতা, দুর্নীতি এজাতীয় পয়েন্ট। তারা বলছে যে উন্নত দেশগুলোয় সুখের অভাবের বড় কারণ হল তরুণ প্রজন্মের মন খারাপ। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। আর এ যন্ত্রণার অন্যতম বড় কারণ হল সোশাল মিডিয়া।

 

তবে এবিষয়টি সঠিক যে, সুখ নিয়ে সার্ভে করে সঠিক ফলাফল পাওয়া কিন্তু সহজ নয়। তবুও দেশে দেশে চেষ্টা চলছে। গবেষণা হচ্ছে। হলুদ বনে হারিয়ে যাওয়া নাকছাবিটার খোঁজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ।