ওয়াশিংটন: এতদিন উদ্বেগের কারণ ছিল পরিবেশ দূষণ (Pollution), জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change), বিশ্বায়ন (Global Warming)। এবার তার থেকেও বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জলসঙ্কট (Water Scarcity)। দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছিল যে বিশ্বের জলস্তর ক্রমশ কমছে। ভূপৃষ্ঠের নীচে থাকা জলস্তর এতটাই কমে গিয়েছে যে ৪০-৫০ ফুট গভীরে জলের বিন্দুমাত্র মিলছে না। কয়েকশো ফুট গভীরে খনন না করলে জল পাওয়া যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের একাধিক দেশেই এক চিত্র। জল অপচয়ের পাশাপাশি জনসংখ্য়া বৃদ্ধি, নগরোন্নায়ন, শিল্পাঞ্চল তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তনও এই সঙ্কটের অন্যতম কারণ। তবে এই বিপদ কিন্তু আগামী কয়েক বছরের জন্য নয়, এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে সমাজ ও পরিবেশে।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টেই জলসঙ্কটের ভয়ঙ্কর পরিণতি নিয়ে সাবধানবার্তা দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২৫টি দেশ, যার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ, তা চরম জল সঙ্কটের মুখে। বিশ্বের প্রায় ৪ বিলিয়ন অর্থাৎ ৪০০ কোটিরও বেশি মানুষ বছরে অন্তত এক মাস চরম জল সঙ্কটের সম্মুখীন হয়। আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্য়াটি ৬০ শতাংশে পৌঁছে যেতে পারে।
শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের জীবনেই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে জিডিপির ৭০ ট্রিলিয়ন, যা বৈশ্বিক জিডিপির ৩১ শতাংশ, তা জলসঙ্কট মেটাতেই ব্যয় হবে। ২০১০ সালে এই অঙ্কটা ছিল ১৫ ট্রিলিয়ন। ভারত, মেক্সিকো, মিশর ও তুরস্ক- ২০৫০ সালে জিডিপির ব্যয়ের অর্ধেক অংশই এই চারটি দেশ থেকে হবে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৫টি দেশে প্রতি বছর জলসঙ্কট উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে। এর মধ্য়ে বাহরিন, সাইপ্রাস, কুয়েত, লেবানন ও ওমান সবথেকে বেশি প্রভাবিত হবে। এমন পরিস্থিতি হতে পারে যে একটা দীর্ঘ সময় অবধি খরাও হতে পারে এই দেশগুলিতে।
বিশ্বের যে সমস্ত অঞ্চলে সবথেকে বেশি জলসঙ্কট বর্তমানে, তা হল মধ্য় প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা। এখানের জনসংখ্য়ার ৮৩ শতাংশই চরম জলসঙ্কটে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াতেও পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সেখানের জনসংখ্য়ার ৭৪ শতাংশ চরম জলসঙ্কটের মুখে পড়েছে। বিশ্বের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ জল। পৃথিবীর তিনভাগই জল হলেও, তার মাত্র কয়েক শতাংশই পান ও ব্যবহারযোগ্য। ফলে এখনই যদি জল ব্যবহার ও অপচয় নিয়ে সতর্ক না হন সকলে, তবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।