কার্ডিফ: গভীর ঘুম দিতে চান? ঘুম কতটা গভীর হবে বলা যাবে না, তবে মাটির অনেক গভীরে গিয়ে ঘুমোতে পারবেন। সম্প্রতি, ওয়েলসে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৭৫ ফুট বা ৪১৯ মিটার নীচে একটি বিলাসবহুল হোটেল খোলা হয়েছে। এটিকে বিশ্বের ‘গভীরতম হোটেল’ বলে দাবি করা হচ্ছে। এটি আসলে স্নোডোনিয়া পাহাড়ের নীচে অবস্থিত একটি স্টে পাথরের পরিত্যক্ত খনি। সেই খনির মধ্যেই তৈরি করা হয়েছ এই অদ্ভুত হোটেল। আবাসিকরা খনিত রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা পাবেন। তবে, হোটেলে পৌঁছনোর পথটা বড় সহজ নয়। খনিতে কাজ চলার সময়, শ্রমিকরা মাটি-পাথর কেটে কেটে যে খাড়া এবং কঠিন পথ বানিয়েছিলেন, সেটি দিয়েই হোটেলে প্রবেশ করতে হবে। হোটেলটির নাম? ‘ডিপ স্লিপ’ বা ‘গভীর ঘুম’।
হোটেল নির্মাতারা অবশ্য এটিকে হোটেল না বলে ‘রিমোট-ক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চার এক্সপেরিয়েন্স’ বলতে বেশি আগ্রহী। এখানে চারটি প্রাইভেট টুইন-বেড কেবিন এবং একটি ডাবল বেড সহ ‘রোমান্টিক’ গ্রোটো রুম রয়েছে। সপ্তাহে শুধু শনিবার রাতে এটি খোলা থাকে। অতিথিদের শনিবার বিকেল ৫ টার মধ্যে ব্লেনাউ এফফেস্টিনিয়োগ শহরের কাছে গো বেলোর বেসে আসতে হয়। সেখানে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করেন একজন গাইড। তিনিই অতিথিদের হোটেলে নিয়ে যান।
প্রথমে, পাড়ি দিতে হয় ৪৫ মিনিটের পাহাড়ি পথ। তারপর, একটি কটেজে থেকে হেলমেট, টর্চ, ওয়েলিংটন বুটের মতো সাজ-সরঞ্জাম নিতে হয়। এরপর, হোটেলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ‘বহির্বিশ্বকে বিদায় জানানোর এবং বিশ্বের বৃহত্তম এবং গভীরতম পরিত্যক্ত স্লেট খনির গভীরে যাওয়ার সময়।’ ১৮১০ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত খনিটিতে কাজ হয়েছিল। অতিথিদের সেই সময়ের শ্রমিকদের তৈরি করা সিঁড়ি, ক্ষয়ে যাওয়া সেতুর উপর দিয়ে, দড়ি বেয়ে নামতে হবে গভীরে। প্রায় এক ঘণ্টার পথ। হোটেলে নামতে নামতে, খনিশ্রমিকদের গল্প শোনাবেন গাইড।
‘ডিপ স্লিপ’-এর প্রবেশদ্বারটি আসলে একটি বড় ইস্পাতের দরজা। হোটেলে ঢোকার পর, অতিথিদের পানীয় দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। তারপর, এতটা পথ আসার ক্লান্তি দূর করার জন্য হোটেলের পিকনিক টেবিলে খেতে দেওয়া হবে। যে ধরণের খাবার লোকে কোনও অভিযানে গেলে সঙ্গে নিয়ে যায়, সেই ধরনের খাবার। এরপর, গভীর ঘুম দিতে পারেন অতিথিরা। সারা বছরই এই হোটেলের ভিতরে তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু, কক্ষগুলির দেওয়ালে পুরু শীত নিরোধক লাগানো থাকায় ঘরের ভিতরে ঢুকলেই আরাম পাওয়া যায়।
খনির অনুভব দেওয়ার জন্য, হোটেলটির সমস্ত বৈদ্যুতিক আলো কম-ভোল্টেজের এবং মাত্র ১২ ভোল্টের ব্যাটারি-চালিত। তবে, মাটির এত গভীরেও ওয়াইফাই সংযোগের সুবিধা পাও যায়। এর জন্য ভূপৃষ্ঠে একটি ৪জি অ্যান্টেনা লাগিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইথারনেট তারের মাধ্যমে খনিত ওয়াইফাই সরবরাহ করা হয়েছে। এমনকি খনির ভিতর, একটি ঝর্ণা থেকেও জল আসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গাইড এবং কর্মীদের একজন সদস্য রাত্রে হোটেলেই থাকেন। পরেরদিন সকাল ৮টায় অতিথিদের জলখাবার দেওয়া হয়। একেবারেই ‘সাধারণ স্ন্যাকস’ আর গরম পানীয়। এরপর, আবার সেই কঠিন পথ পেরিয়ে ভূপৃষ্ঠে আরোহণের সময়। এই অনন্য অভিজ্ঞতা উপভোগ করার মাসুলটা অবশ্য বড় কম নয়। দুজনের জন্য একটি প্রাইভেট কেবিনের ভাড়া ৩৬,২৫০ টাকা। আর গ্রোটোতে দুজনের থাকার খরচ ৫৬,৯৬০ টাকা।