
নাইরোবি: এটাও সম্ভব! বোরখা-নিকাব পরে, চোখে চশমা পরে মহিলাদের দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন এক যুবক। এক রাউন্ড নয়, চার রাউন্ড খেলেও ফেলেন তিনি। খেলার পুরস্কার বাবদ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা একেবারে হাতের নাগালেও চলে এসেছিল। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। একেবারে শেষ মুহূর্তে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন মহিলাবেশী ওই পুরুষ দাবাড়ু। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নাইরোবি (Nairobi) মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় (Chess Competiton)।
জানা গিয়েছে, নাইরোবিতে আয়োজিত মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় ছদ্মবেশে অংশগ্রহণকারী ওই দাবাড়ু কেনিয়ার যুবক। তাঁর নাম মিলিসেন্ট আউয়োর। নাইরোবিতে আয়োজিত ৩১ তম কেনিয়া ওপেন আন্তর্জাতিক মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় মিলিসেন্ট মহিলা সেজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত কেনিয়া দাবা ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটাকি জন মুকাবি বলেন, “গোটা বিশ্বের কোথাও এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে আমি মনে করি না।” তাঁর দাবি, মোটা অঙ্কের টাকার পুরস্কারের লোভেই কেনিয়ার ওই যুবক ছদ্মবেশে মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কী ভাবে ধরা পড়লেন ছদ্মবেশী দাবাড়ু?
জন মুকাবি জানান, বোরখা, নিকাব, চোখে চশমা পড়ে ৩১ তম কেনিয়া ওপেন আন্তর্জাতিক মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় মিলিসেন্ট আউয়োর। তিনি যে মহিলা নন, তা তাঁর বেশভূষা দেখে বোঝা যায়নি। তবে প্রতিযোগীদের সঙ্গে ছবি তোলার সময় মিলিসেন্টের মধ্যে কিছু গলদ থাকতে পারে বলে প্রথম সন্দেহ হয় মুকাবির। তারপর প্রতিযোগিতার বিচারকেরা লক্ষ্য করেন যে, প্রতিটি রাউন্ড খেলার পরই তিনি কিছুক্ষণের জন্য উধাও হয়ে যাচ্ছেন এবং পরের রাউন্ড শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ফিরে আসছেন। এছাড়া অনেকে লক্ষ্য করেন যে, মিলিসেন্টের কাঁধের অংশটি মহিলাদের মতো নয়, পুরুষদের মতো চওড়া। এছাড়া তিনি রাবারের জুতো পরে রয়েছেন এবং মূলত পুরুষদের সঙ্গেই রয়েছেন।
তবে একের পর এক খ্যাতনামা, অভিজ্ঞ, এমনকী, সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় যখন কেনিয়ার হয়ে বিশ্ব দাবা অলিম্পিয়াডে ৬ বারের প্রতিযোগীকে হারান তিনি। তাই চতুর্থ রাউন্ড খেলার শেষে মিলিসেন্ট ‘চেকমেট’ করেন প্রতিযোগিতার বিচারকেরা। জন মুকাবি বলেন, “এক মহিলা বিচারক তাঁকে বাথরুমে নিয়ে যান এবং হিজাব খুলতে বলেন। তখনই তিনি ছদ্মবেশের কথা স্বীকার করে জানান, তিনি পুরুষ।” মিলিসেন্ট জানিয়েছেন, দাবা প্রতিযোগিতার পুরুষ বিভাগে তিনি সুযোগ পাননি। তিনি আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন। তাই দাবা প্রতিযোগিতার মহিলা বিভাগে যোগ দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, মিলিসেন্ট আউয়োর নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তাঁকে প্রতিযোগিতা থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। তবে টাকার প্রয়োজনেই ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন এবং এর জন্য অনুতপ্ত বলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মিলিসেন্ট। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করেনি কর্তৃপক্ষ।