দিলীপ-মুকুল দ্বন্দ্বে দিল্লির হস্তক্ষেপ, ডানা ছাঁটা হল দুই পক্ষের
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এবং মুকুল রায়ের (Mukul Roy) বিরোধ প্রকট থেকে আরও প্রকট হওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
TV9 বাংলা ডিজিটাল: রাজ্য বিজেপির (BJP) গোষ্ঠী কোন্দলে ফের কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। দায়িত্ব কমানো হল কৈলাস বিজয়বর্গীয়র। সেই জায়গায় কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলার ‘দেখভাল’ করবেন শিব প্রকাশ। একই সঙ্গে রাজ্য দলের শীর্ষেও নিয়ে আসা হল আরএসএস-এর ‘আস্থাভাজন’ অমিতাভ চক্রবর্তীকে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এবং মুকুল রায়ের (Mukul Roy) বিরোধ প্রকট থেকে আরও প্রকট হওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
BJP National President Shri @JPNadda has appointed Shri @Amitava_BJP as State General Secretary of West Bengal BJP. pic.twitter.com/xeTeyJH3He
— BJP (@BJP4India) October 28, 2020
সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদাক (সাংগঠনিক) হিসেবে অমিতাভ চক্রবর্তীর (Amitava Chakravorty) নিয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিব প্রকাশকে (Shiv Prakash) বাংলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অতীতে এই দায়িত্বে ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya)। শোনা যাচ্ছে, কৈলাসকে দিল্লির সাফ নির্দেশ, ‘বাংলায় নয় সময় দিন মধ্য প্রদেশে’।
এখন প্রশ্ন, কেন এই পরিবর্তন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা ভোটে বিজেপির পালে যে হাওয়া লেগেছে, তা বিধানসভাতেও যেন সক্রিয় থাকে, তার জন্যই দিল্লির এই তোরজোড়। ২০১৭ সালে কৈলাসের হাত ধরেই জার্সি বদল হয় প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের। এরপর দীর্ঘদিন নতুন দলে বিনা পদেই কাজ করেছেন তিনি। অনেকই মনে করেন সপ্তদশ লোকসভায় মুকুলের ছকেই আশানরূপ ফল করে ভারতীয় জনতা পার্টি।
মুকুল ও মুকুল ঘনিষ্ঠদের পদোন্নতি:
পাহাড়, জঙ্গলমহল এবং বিশেষ করে সীমান্ত লাগোয়া জেলায় পদ্ম ফোটে। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের ১৮টি কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। এরপর প্রত্যাশিতভাবেই মুকুল রায়ের পদোন্নতি ঘটে। তাঁকে সর্বভারতীয় সহসভাপতির পদে বসানো হয়। তাঁর সঙ্গেই কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠনে তুলে আনা হয় মুকুল ঘনিষ্ঠ অনুপম হাজরা এবং সৌমিত্র খাঁয়ের মতো তরুণতুর্কীদের। অন্যদিকে খর্ব করা হয় রাহুল সিনহার মতো আদি নেতার ক্ষমতা। তবে মুকুল এবং মুকুল ঘনিষ্ঠদের এই আকাশছোঁয়া উত্থানে অখুশি সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতারা।
দলের মধ্যে স্পষ্ট থেকে আরও স্পষ্ট হতে থাকে দিলীপ-মুকুল বিভাজন। সম্প্রতি ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার জেলা কমিটি ও তার নেতা নির্বাচন নিয়ে সৌমিত্র ও দিলীপের মতাঅনৈক্য এবং তরপর যুবমোর্চার সব জেলা কমিটি ভোঙে দেওয়া সেই বিবাদকে আরও জোরাল আকার দিয়েছে। এই অবস্থায় জোড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য দলের রাশ হাতে নিল দিল্লি।
দিলীপ ঘনিষ্ঠের অপসারণ:
২০১৪ থেকে রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) থাকা দিলীপ ঘনিষ্ঠ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দায়িত্বে আনা হয়েছে আরএসএস প্রচারক অমিতাভ চক্রবর্তীকে। এই পদক্ষেপকে একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না দিলীপ। ঘনিষ্ঠ মহলে দলের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেছেন তিনি।
কে এই অমিতাভ চক্রবর্তী?
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন নেতা। পরবর্তীতে আরএসএস-এর (RSS) প্রচারকও হন অমিতাভ চক্রবর্তী । ২০১৬ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। সভাপতি থাকাকালীন অমিত শাহ তাঁকে উড়িশা বিজেপির যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর ২০১৯ সালে জেপি নাড্ডা এই অমিতাভ চক্রবর্তীকেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদকের পদে নিয়ে আসেন। এবার তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের (সাংগঠনিক) পদে বসিয়ে রাজ্যে নিজেদের রাশ আরও শক্তপোক্ত করল দিল্লি, এমনটাই মনে করছে গেরুয়া জনতা।
কৈলাসের দায়িত্বে শিব প্রকাশ:
শুধু সুব্রতর অপসারণ নয়, কৈলাসকে পর্যবেক্ষকের জায়গা থেকে সরিয়ে শিব প্রকাশকে নিয়ে এসেছে দিল্লি। যা আসলে মুকুল রায় এবং তাঁর অনুরাগীদেরও বার্তা, ‘বাংলায় বিজেপির লক্ষ্য পরিষ্কার। কোন্দল জিইয়ে রেখে পশ্চিববঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের সম্ভাবনার সলিল সমাধি করা যাবে না। দল তা কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না।’