প্রতীকী চিত্র।
নয়া দিল্লি: করোনা সংক্রমণের (COVID-19) জেরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে সাধারণ মানুষের জীবনে। একদিকে যেমন আর্থিক সাশ্রয়ের গুরুত্ব বেড়েছে, তেমনই আবার শরীরকে সুস্থ রাখার চাহিদাও বেড়েছে। লকডাউনে দীর্ঘ কয়েক মাস ঘরবন্দি থাকার পর সাধারণ মানুষ যখন ফের একবার বাইরের জগতে পা রেখেছে, তখন অন্যান্য যানবাহনের থেকেও সাইকেলের (Cycle) চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে। দূষণমুক্ত, নিত্য়দিনের জ্বালানির খরচ থেকে মুক্তির পাশাপাশি সাইকেল চালালে শরীরও সুস্থ থাকে। সেই কারণেই ২০২০ সালের শেষভাগ থেকেই গণপরিবহনের বিকল্প হিসাবে সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই শিল্পক্ষেত্রকেও, সেই কারণেই আসন্ন বাজেটে (Budget 2022) তারা কেন্দ্রের কাছ থেকে বিশেষ সহায়তাই আশা করছে।
শুধুমাত্র দেশই নয়, গোটা বিশ্বজুড়েই করোনাকাল থেকে সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে সেলেব্রিটি বা নেতা-মন্ত্রীরাও সাইকেলের প্রতি নিজেদের ভালবাসা জাহির করেছেন। ভারতে প্রতিবছর ২ কোটি সাইকেল উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়। এবারের বাজেটে আত্মনির্ভর শিল্প পরিকাঠামোর উপর জোর দিতেই সাইকেল শিল্পের জন্য সরকারের বিশেষ আর্থিক প্য়াকেজের আবেদন জানানো হয়েছে।
কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে?
ফের একবার সাধারণ মানুষের মধ্য়ে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়লেও একাধিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে এই শিল্পে। কাঁচামালের জোগানের অভাব, দামী যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদেশী পণ্যে নির্ভরশীলতা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, অতিরিক্ত জিএসটির মতো নানা সমস্য়ার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়াও ইলেকট্রিক সাইকেলের ক্ষেত্রে সুরক্ষাবিধি ও সচেতনতার অভাবও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দেশে সাইকেলের গুণমান পরীক্ষা করার বিশেষ সুবিধা না থাকায়, ইউরোপীয় ও ব্রিটেনের বাজার ধরে রাখার জন্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে হংকংয়ে সাইকেলের গুণমান পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। এরফলে সাইকেলের মূল্যও বৃদ্ধি পায়। চিনা সাইকেলগুলি সেই তুলনায় ভারতীয় সাইকেলের থেকে ১৫ শতাংশ সস্তা হওয়ায়, বিদেশে ওই সাইকেলেরই চাহিদা বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব ভারতের রফতানি বাজারে পড়ছে।
কেন্দ্রের কাছে প্রত্যাশা:
সাইকেল উৎপাদক ও বিক্রেতাদের প্রথম দাবিই হল বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির নির্ভরশীলতা কমপক্ষে ২৫ শতাংশ কম করা। দেশেই যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ মানের সাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়, তবে একদিকে যেমন দেশ আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে, তেমনই আবার সাইকেল উৎপাদনের খরচও অনেক কমবে।
ইলেকট্রিক সাইকেলের গ্রহণযোগ্য়তা আরও বাড়াতে ভারী শিল্পের অধীনে ফেম-২ প্রকল্পের অন্তর্গত করার দাবিও জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের সহায়তা পেলে আগামিদিনে ইলেকট্রিক সাইকেলের উৎপাদনের খরচ কমানো যাবে, যারফলে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে ও বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় ভারতও সামিল হতে পারবে।
বর্তমানে সাইকেলের উপর ১২ শতাংশ জিএসটি রয়েছে। আসন্ন বাজেটে এটিকে, বিশেষত কম দামী সাইকেলের উপর জিএসটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করার আবেদন জানানো হয়েছে। এরফলে গ্রামাঞ্চল ও ছোট শহরগুলিতে, যেখানে সাধারণ মানুষদের আয় খুব বেশি নয়, সেই জায়গাগুলিতেও চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া সাইকেলের গুণমান পরীক্ষা, সার্টিফিকেট প্রদান, স্টার্টআপ শিল্পে সহায়তার মতো দাবিও জানানো হয়েছে।