মঙ্গলবার সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। তার আগে সোমবার শুরু হল ২০২২-এর বাজেট অধিবেশন। অধিবেশন শুরু হওয়ায়র আগে বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তব্যে শুরু হল অধিবেশন। সংসদের সেন্ট্রাল হলে সব সাংসদদের উপস্থিতিতে বক্তব্য পেশ করেন তিনি। শুরুতেই করোনা অতিমারির কথা উল্লেখ করে প্রথম সারির যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানালেন রাষ্ট্রপতি। টিকাকরণের উদ্যোগের পাশাপাশি একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের প্রশংসা করলেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। গত বছর বানিহালের সুড়ঙ্গ খুলে দেওয়া হয়েছে। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বিমান চলাচলও শুরু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের শিক্ষা-স্বাস্থ্য সহ সার্বিক উন্নতিতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমানে সাতটি মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি, ২ টি এইমস তৈরির কাজ চলছে। একটি এইমস তৈরি হবে জম্মুতে ও আরও একটি এইমস তৈরি হবে কাশ্মীরে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মহিলা ক্ষমতায়নে আমাদের সরকার সর্বদাই গুরুত্ব দিয়েছে।’ উজ্জ্বলা যোজনা, বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও প্রকল্পের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীতে মেয়েদের গুরুত্ব বেড়েছে, পুলিশেও মহিলাদের উপস্থিতি বেড়েছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ করার উদ্যোগেরও প্রশংসা করেছেন কোবিন্দ।
তিনি জানিয়েছেন সরকারের উদ্যোগে কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যা। মুসলিম ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের সরকার কৃষকদের শক্তি বাড়াতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। রবি শস্য উৎপাদনের সময়, সরকার যে ফসল কিনেছে, তাতে উপকৃত হয়েছে ৫০ লক্ষ কৃষক। খারিফ শস্য উৎপাদনের সময়, যে পরিমান ধান কিনেছে সরকার, তাতে উপকৃত হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার কৃষক।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘কৃষকেরা যাতে তাঁদের ফসলের জন্য সঠিক দাম পায়, তার জন্য সঠিক বাজারে সেই ফসল পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। তার জন্যই সরকার চালু করেছে কিষাণ রেল। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সবজি, ফল, দুধের মতো সহজে পচন ধরে এমন খাদ্যদ্রব্য পরিবহনে ১৯০০ ট্রেন চালিয়েছে রেল। ৬ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যদ্রব্য বহন করা হয়েছে।’ দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য দেশের ছোট কৃষকদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘দেশের ৮০ শতাংশই ছোট কৃষক। কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার মাধ্যমে সরকার সুবিধা দিচ্ছে সেই ছোট কৃষকদের।’
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পাকা ঘর পেয়েছেন ২ কোটি মানুষ। পাশাপাশি, সব ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে জল জীবন মিশন উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানুষের জীবন পাল্টাচ্ছে। ঘরে ঘরে জল পৌঁছে গিয়েছে। গ্রামের মা বোনেরা উপকৃত হয়েছে।’
জনধন যোজনার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘৪৪ কোটি ভারতবাসীর জনধন অ্যাকাউন্ট থাকায় করোনা-কালে তাঁরা সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা পেয়েছেন।’ পাশাপাশি ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে সরকারে ইউপিআই -এর ভূমিকার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি উল্লেখ করেন ২০২১-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ৮ লক্ষ কোটির লেনদেন হয়েছে ইউপিআই -এর মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ খুব দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। এটা তারই প্রমাণ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বের বড় বড় দেশে খাদ্যের অভাব দেখেছি আমরা। কিন্তু দেশের সংবেদনশীল সরকার নিশ্চিত করেছে যাতে ১০০ বছরের মধ্যে সবথেকে ভয়ঙ্কর অতিমারিতে কেউ অভুক্ত না থাকে। দেশের সব দরিদ্র মানুষকে আমাদের সরকার বিনামূল্যে রেশন দেয়। ৮০ কোটি ভারতবাসীকে ১৯ মাস ধরে বিনামূল্যে রেশন দিতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। ভারতে আজ বিশ্বের সবথেকে বড় খাদ্যদ্রব্য বিতরণের উদ্যোগ চলছে।’
পিছিয়ে পড়া জনজাতিকে সামনে নিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পদ্ম পুরস্কারেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের জন্য কাজ করছে। দেশে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অতিমারির বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে সাধুবাদ জানিয়ে রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক সমাধান নিয়ে আমাদের সরকার কাজ করছে না। দূরদৃষ্টতার সঙ্গে বেশি কিছু পদক্ষেপ সরকার করেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এই লড়াই শুরু করেছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেল্থ ইন্ডিয়া ইনফাস্ট্রাকচার মিশন যার অন্যতম উদাহরণ। এই মিশন শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতির লড়াই করবে না, আগামী দিনেও সঙ্কটমুক্ত করার চেষ্টা করবে। আমার সরকারের সংবেদনশীল মনোভাবের জন্য দেশবাসীর কাছে সহজে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছচ্ছে।’
আয়ুস্মান ভারত সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনি বলেন, ‘আয়ুস্মান ভারতের মাধ্যমে চিকিৎসা পাচ্ছেন দেশের দরিদ্র নাগরিকেরা। কম দামে ওষুধ বিক্রি করার জন্য সরকারের জন ঔষধি কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন তিনি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে ভারতের লড়ার প্রমাণ মিলেছে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ১৫০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ় দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা। আজ গোটা বিশ্বে সবচেয়ে ভ্যাকসিন ডোজ় দেওয়া দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভারত। এই পদক্ষেপ ভারতকে বিশেষ রক্ষকবচ দিয়েছে। এতে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য মনোবলও বেড়েছে নাগরিকের।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনাকালে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সেই কঠিন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে রাজ্য, সব চিকিৎসক, বিজ্ঞানী , নার্স, প্রত্যেকে একটা টিম হিসেবে কাজ করেছে। আমি সেই সব স্বাস্থ্যকর্মী তথা প্রথম সারির যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এবং নাগরিকের মধ্যে এমন পরিস্থিতে বোঝাপড়া, সুসম্পর্ক গণতন্ত্রের জন্য অভূতপূর্ব নজির বলে মনে করি।’
রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মদিবস উপলক্ষে ১৫ নভেম্বর ‘জনজাতি গৌরব দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি, এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান নেতাজির জন্মজয়ন্তী ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমার সরকার মনে করে, অতীতের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত, যা দেশের বর্তমান সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ‘
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ মাথায় রেখে আগামী ২৫ বছরের সঙ্কল্প নিয়ে দেশ এগোচ্ছে। এর জন্য ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের’ ভাবনা নিয়ে আগামী ২৫ বছরে দেশকে শক্ত ভিতে দাঁড় করানোর কাজ করছে সরকার।
সোমবার শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন। আর তার আগে সাংসদদের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সাধারণ বাজেটের ওপর ভিত্তি করেই যে দেশের অর্থনীতির ওপর আস্থা রাখবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, সেই বার্তা দিয়েছেন মোদী।
বিস্তারিত পড়ুন: Budget 2022: ‘ভোট তো চলতেই থাকবে’, সাংসদদের খোলা মনে বাজেট নিয়ে আলোচনার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর