নয়া দিল্লি : হু হু করে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম (Petrol Diesel Price)। জ্বালানির জ্বালায় ছ্যাঁকা খাওয়ার জোগাড়। এখন তো একাধিক জেলায় ডিজেলের দাম সেঞ্চুরি পার করে গিয়েছে। কলকাতাতেও ১০০ ছুঁইছুঁই ডিজেল। বিরোধীরা বলছে, পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে সংসদে নির্মলা সীতারমন বলছেন, নাহ্, এর সঙ্গে ভোটের কোনও যোগ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য সাপ্লাই চেইন ব্যাহত। তাই দেশে তেলের দাম বাড়ছে। কিন্তু যে দামে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়, তার উপর কতটা দাম বাড়াচ্ছে ভারত? জানেন কি হিসেবটা? প্রতিটি দেশেই আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের বেস প্রাইস বা মূল দরের ওপর কিছু শতাংশ বাড়িয়ে বসানো হয়। ক্রেডিট অ্যানালিসিস অ্যান্ড রিসার্চ (CARE) রেটিংয়ের তুলনামূলক হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে ভারতে পেট্রোপণ্যের খুচরো বিক্রিতে করের হার সবচেয়ে বেশি।
ধরুন যদি অপরিশোধিত তেল ১০০ টাকা প্রতি লিটার দরে আমদানি করা হয়, সেক্ষেত্রে আমেরিকায় সেই তেল পাওয়া যায় ১২০ টাকায়। জাপানে সেই তেলের দাম ১৪৫ টাকা। ব্রিটেনে পাওয়া যায় ১৬২ টাকা। জার্মানি কিংবা ইতালিতে ১৬৫ টাকা। আর ভারতে? অপরিশোধিত তেল ১০০ টাকা প্রতি লিটার দরে আমদানি করা হলে ভারতের বাজারে তার দাম ৩৬০ টাকা। অর্থাৎ ২৬০ শতাংশ বর্ধিত মূল্যে সেই জ্বালানি তেল পাওয়া যায়। কল্পনা করতে সমস্যা হচ্ছে? ভাবছেন এমনটাও আবার হয় নাকি? এত বেশি দামে কিনতে হয় আমজনতাকে? কিন্তু কেন এত চড়া দামে তেল কিনতে হচ্ছে? অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, উত্পাদক দেশের কাছ থেকে কেনা তেল সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে আসতে, তার ওপর বহুবার দাম বসানো হয়।
কোথায় কোথায় দাম বাড়ছে?
প্রথমত, উত্পাদক দেশ থেকে কেনা তেল ভারতে পৌঁছলেই তার দাম বদলে যায়। বন্দরে অয়েল ট্যাঙ্কার পৌঁছলে অপরিশোধিত তেলের যে দাম হয়, তা হল ল্যান্ড কস্ট। মূলত অপরিশোধিত তেলের দামের সঙ্গে পরিবহণ খরচ ও বিমার খরচ যোগ করে বসানো হয় ল্যান্ড কস্ট।
দ্বিতীয়ত, সেখান তেল চলে যায় সংশোধনাগারে। সংশোধনাগার থেকে যে তেল বেরোচ্ছে তার দাম আবার বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সংশোধিত তেলের শোধনের খরচ ও শোধক কোম্পানির মুনাফা যোগ হয় দামের সঙ্গে।
তৃতীয়ত, তৈল সংশোধনাগার থেকে শোধিত তেল পৌঁছে যায় পেট্রোল পাম্পে। পেট্রোল পাম্পে যে দামে তেল বিক্রি হয়, তাতে অনেক আবার ধরনের মূল্য আরোপ করা থাকে। শোধনাগার থেকে পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত পরিবহণের খরচ। পেট্রোল পাম্প ডিলারের মুনাফা বা কমিশন। কেন্দ্রের আদায়কৃত শুল্ক এবং রাজ্যের আদায়কৃত ভ্যাট। কেন্দ্র বা রাজ্য পেট্রোপণ্যে সেসও আদায় করতে পারে।
অর্থাৎ, ১০০ টাকার অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হলে, আমজনতার হাতে সেই তেল পৌঁছাবে ৩৬০ টাকা প্রতি লিটারে। মানে, আমদানি করা দামের উপর ল্যান্ড কস্ট, পরিশোধন মূল্য ও কর – সব মিলিয়ে ২৬০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির বাজার পর্যালোচনা করে এই হিসেব প্রকাশ করেছিল অর্থনৈতিক মূল্যায়ণ সংস্থা ক্রেডিট অ্যানালিসিস অ্যান্ড রিসার্চ। তখনও তেলের বাজারে এমন আগুন লাগেনি। বর্তমানে করের হিসেবটা আরও উদ্বেগজনক বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন : Babul Suprio on CBI: ‘শুনছি অনেক কিছুই…’, সিবিআই-ইডি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন বাবুল? না কি ভোটের কৌশল?