প্রিয়ঙ্কা সম্ভব: সন্তানকে ডাক্তার (Doctor) কিংবা ইঞ্জিনিয়ার (Engineer) তৈরি করা স্বপ্ন থাকে সবারই। তবে এই স্বপ্নপূরণের জন্য অনেকেরই আর্থিক সামর্থ্য থাকে না। সেই ক্ষেত্রে শিক্ষাঋণই স্বপ্নপূরণের অন্যতম উপায়। কিন্তু তথ্য বলছে, এই শিক্ষাঋণের ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপ অর্থাৎ এনপিএ’র পরিমাণ খুব একটা কম নয়। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) এই ঋণ খেলাপের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮,২৪১ কোটি টাকা।
ঋণ খেলাপের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের। দেশের মধ্যে বাংলায় ঋণ খেলাপের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ১৪.২ শতাংশ। এই একই পরিমাণ নিয়ে তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে বিহারও। এর পিছনেই রয়েছে তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক। এই দুই রাজ্যে ঋণ খেলাপের পরিমাণ প্রায় ১২ শতাংশ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই ঋণ ফেরত না হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে তার কারণ করোনা ও তার প্রভাবে কর্মসংস্থান এবং চাকরির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই দুইয়ের প্রভাবে শিক্ষাঋণ খেলাপের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়ছে। তথ্য বলছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ অন্য সব ক্ষেত্রের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) এই ক্ষেত্রেই এনপিএ’র পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসে গোটা দেশে এই ক্ষেত্রে মোট ঋণের পরিমাণ ৩৩,৩১৬ কোটি টাকা। তার ১২.১০ শতাংশকে অনুৎপাদক সম্পদের তালিকাভুক্ত করেছে ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,০৩০ কোটি টাকা। শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, ডাক্তারি ক্ষেত্রে সারা দেশে মোট ঋণের পরিমাণ ১০,১৪৭ কোটি টাকা। তার ৬.২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৬৩০ কোটি টাকা অনুপাৎদক সম্পদের তালিকায় রয়েছে।
পাশাপাশি, এমবিএ কোর্সের জন্য প্রথম ন’মাসে গোটা দেশে মোট ৯,৫৪১ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭.২ শতাংশ বা ৬৮৯ কোটি টাকা অনুৎপাদক ঋণের তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও, নার্সিং ক্ষেত্রে ৩,৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলেও তার ১৪ শতাংশ অর্থাৎ ৫১৪ কোটি আর ব্যাঙ্কে ফিরবে না বলেই জানিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি।
তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে বাড়ি ও গাড়ি ঋণের মতো খুচরো ও জনপ্রিয় ক্ষেত্রে এনপিএ-এর পরিমাণ ২ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি ঋণ ফেরত হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাঋণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো প্রবণতা দেখা গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে এনপিএ-র পরিমাণ ছিল মোট ঋণের ৭.২৯ শতাংশ। ২০১৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ৭.৮৬ শতাংশ, ২০১৮ সালে এই পরিমাণ ছিল ৮.১ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ছিল ৮.৩ শতাংশ। কিন্তু ২০২০ সালে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে হয়েছে ৯.৭ শতাংশ। যা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে মাথাব্যাথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রসঙ্গে গ্লোবালহান্ট সংস্থার এমডি সুনীল গোয়েল বলেন, “এই এনপিএ বৃ্দ্ধি নিয়ে কেবল করোনাকে দায়ি করলেই হবে না। এর সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের সমগ্র বিষয়টি জড়িত। কারণ এখনও অনেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা এমবিএ পড়ে অত্যন্ত কম বেতনের চাকরি পাচ্ছে, যার ফলে তাঁদের ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতাও কমছে। যার প্রভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রমশই ঋণ খেলাপের পরিমাণ বৃদ্ধি।”
তাঁর কথায়, এই ঋণ ফেরত দেওয়া কেবলমাত্র পড়ুয়া কিংবা ব্যাঙ্কের দায়িত্ব হতে পারে না। যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি এই টাকা পাচ্ছে, তাদেরও দায় থাকা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উচিত সব ছাত্র যাতে কোর্সের শেষে চাকরি পায় তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: অবস্থান বদলে পেট্রোপণ্যকে জিএসটি’র আওতায় আনার কথা নির্মলার মুখে