Explained, Gold Price Hike: কেন চড়চড়িয়ে বাড়ছে সোনার দাম? ভারতের জন্য ভাল না খারাপ?
Gold Price: সোনার দাম বাড়লে সেটা হয়তো বিনিয়োগকারীদের জন্য ভাল। কিন্তু এমন হলে বিভিন্ন দেশ যাদের সোনা আমদানি করতে হয় তাদের আমদানির খরচ বাড়ে। আর তার প্রভাব পড়ে ট্রেড ব্যালেন্সের উপর।

বিয়ে হোক বা কোনও অনুষ্ঠান, উপহার হিসাবে সবসময়ই অগ্রাধিকার পায় সোনা। মধ্যবিত্ত সোনা কেনে শুধুমাত্র গয়না হিসাবে, এটা যে সর্বৈব সত্য কথা, তা মেনে নেওয়া যায় না। সংসারের কোনও অর্থনৈতিক সমস্যার সময় মা, ঠাকুমারা তাঁদের স্ত্রীধন হিসাবে পাওয়া গয়না বিনাবাক্যব্যয়ে সেই সমস্যা সমাধানের জন্য দিয়ে দিতেন। ফলে সেক্ষেত্রেও সোনা একপ্রকার বিনিয়োগেরই কাজ করত। অন্যদিকে, সোনা আবার বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় বেশ উপরের দিকে থাকে। আর থাকবে নাই না কেন? ঐতিহাসিক ভাবে সোনা বেশ ভালোই রিটার্ন দেয়। আর কোনও বিনিয়োগকারী ইক্যুইটি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে সোনায় বিনিয়োগ করলে তার পোর্টফোলিও ডাইভার্সিফাই হয়। ফলে যখন বাজারের টালমাটাল অবস্থা, যুদ্ধ বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক কারণে পড়তে থাকে বাজার, তখন সোনা পোর্টফোলিওর রিটার্নকে সামাল দেয়। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি এই ৩ মাসে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। শতাংশের অঙ্কে তা প্রায় ৬৩ শতাংশ।
সোনার দাম কেন বাড়ে?
সোনার দাম বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় প্রথম কারণ অবশ্যই চাহিদা ও সাপ্লাই। যখন সোনার চাহিদা বেড়ে যায়, তখন দাম বাড়তে থাকে সোনার। আবার একই ভাবে যোগান কমে গেলেও তা প্রভাবিত করে সোনার দামকে। আর তখনই বাড়িতে থাকে সোনার দাম।
সোনার দাম বৃদ্ধির আরও একটা বড় কারণ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনা। সাম্প্রতিক অতীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ হোক বা মধ্যপ্রাচ্য ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত, এই সবের কারণেও দাম বেড়েছে সোনার। আর কোনও অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কোনও ঘটনার কারণে ভারত বা বিশ্বের অর্থনীতি টলমল করে, বাজার যখন ক্রমশ নিম্নমুখী হয় তখন বিনিয়োগকারীরা অন্য জায়গা থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে সোনায় বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। ফলে সোনার চাহিদা বাড়তে থাকে। আর অর্থনীতির নিয়মে সোনার চাহিদা বাড়লেই বাড়তে থাকে সোনার দাম। যে কারণে বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক ঘটনার সময় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজার পড়েছে। কিন্তু সোনার দামকে বশে রাখা যায়নি কোনও ভাবেই।
বিনিয়োগকারীদের দিক থেকেও সোনার একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শেয়ার বাজার বা রিয়েল এস্টেট বা ক্রিপ্টো কোথাও বিনিয়োগের তুলনায় খুচরো বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় সব সময়ই থাকে সোনা। সে দোকান থেকে কেনা সোনার বারই হোক বা ডিজিটাল গোল্ড কিম্বা সরকারের জারি করা গোল্ড বন্ড। আমাদের দেশে অবশ্য গোল্ড বন্ড কিনলে সোনায় রিটার্ন পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। এর ঠিক পরেই থাকে গোল্ড ইটিএফে বিনিয়োগ। আর সেই কারণেই নতুন প্রজন্মের বিনিয়োগকারীরা দোকান সোনা কেনার বদলে ডিজিটালি সোনার কেনায় বেশি স্বাছ্যন্দ বোধ করেন।
একটি তথ্য বলছে সবচেয়ে বেশি সোনা কেনে বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলো। টালমাটাল সময়ে অর্থনীতিকে বাঁচাতে সোনা কিনে রাখে বিভিন্ন দেশ। যে দেশের কাছে যত দেশি সোনা থাকে, সেই দেশের অর্থনীতি ততই স্বচ্ছল ভাবে চলতে পারে। আর যতই দিন যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ তাদের রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। নভেম্বর ২০২৪-এর তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। আর এই তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা আমাদের দেশের কাছে রয়েছে প্রায় ৮৭৬.২ টন সোনা।
সোনার দাম বাড়ার কী প্রভাব?
তথ্য বলছে গত ৩ বছরে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। আর গত ১ বছরে হিসাব করলে সেই অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশে। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর দুপুর ১২টার সময় ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ভারতীয় টাকায় ৮৭ হাজার ১০০ টাকা। আর সোনার দাম বাড়ায় তার প্রভাব পড়েছে সোনার গয়না বিক্রির উপর। দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই কমছে সোনার গয়না কেনার হিড়িক। কিন্তু গয়না বিক্রি কমলেও ক্রমশই বিনিয়োগকারীদের প্রথম পছন্দ হিসাবে উঠে আসছে সোনার নাম। স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট সমর দে বলছেন, “শুরুতে একটু থমকে গিয়েছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁরা সোনা কিনতে আসছেন তাঁরাও জানেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়বে সোনার দাম। ফলে সেটা জেনেই কিনছেন তাঁরা। গয়না কিনলেও বলা যায় একপ্রকার বিনিয়োগ হিসাবেই সোনা কিনছেন তাঁরা। যার দাম বাড়ে মানুষ তো সেখানেই বিনিয়োগ করবে”।
সোনার দাম বাড়লে সেটা হয়তো বিনিয়োগকারীদের জন্য ভাল। কিন্তু এমন হলে বিভিন্ন দেশ যাদের সোনা আমদানি করতে হয় তাদের আমদানির খরচ বাড়ে। আর তার প্রভাব পড়ে ট্রেড ব্যালেন্সের উপর। সোনার দাম বৃদ্ধি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির একটা হাওয়া তুলতে পারে। প্রভাব পড়ে সুদের হার ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে। কোনও দেশের ফেডারেল ব্যাঙ্কের সুদের হার যখন কমানো হয় তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেই দেশের বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য ছুটে আসে। আর সেই দেশের বাজার চাঙ্গা হতে থাকে। আর বাজার চাঙ্গা হলে বিনিয়োগকারীরা চেষ্টা করে সোনায় থাকা বাড়তি অর্থ তুলে নিয়ে তা বাজারে বিনিয়োগ করতে। ফলে কমতে থাকে সোনার দাম।
সোনার দাম বৃদ্ধি ডলারকে শক্তিশালী করে। ফলে দুর্বল হতে থাকে টাকা। আর তখনই আমদানিকৃত জিনিসের দামও বাড়তে থাকে। যা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
বিনিয়োগ করতে চাইলে সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও অ্যানালিসিস করুন। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।





