ফান্ড অফ ফান্ড অন্যান্য ফান্ডের মতো শেয়ার বাজার, বন্ড বা অন্য কোনও সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন ফান্ডেই বিনিয়োগ করে। এই ধরণের ফান্ড যা আসলে অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ ভাবে একাধিক ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে ফান্ড অফ ফান্ডে বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিয়োয় বৈচিত্র নিয়ে আসতে সাহায্য করে। তবে এই ফান্ড অফ ফান্ড আদৌ ভাল, নাকি খারাপ?
ফান্ড অফ ফান্ডের বেশ কিছু ভাল দিক হয়েছে। প্রথমত, ফান্ড অফ ফান্ড এমন কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয় যেখানে কোনও সাধারণ মানুষ বিনিয়োগকারী হিসাবে বিনিয়োগ করার কথা হয়তো কল্পনাও করতে পারে না। যেমন কোনও হেজ ফান্ড বা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে গেলে প্রথমেই বেশ অনেকটা পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ফান্ড অফ ফান্ড এমন কিছু সুযোগ দেয় যেখানে এই ধরণের সিকিউরিটিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সুযোগ পায়।
দ্বিতীয়ত, ফান্ড অফ ফান্ডস বিনিয়োগকারীদের একটা বৈচিত্রময় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়। যার ফলে বিনিয়োগের রিস্ক ফ্যাক্টর অনেকাংশে কমে যায়। তৃতীয়ত, FoF-এ বিনিয়োগ করলে সেই বিনিয়োগ একাধিক ফান্ড ম্যানেজারের নজরে থাকে। প্রাথমিক ফান্ডের ম্যানেজার সেই ফান্ডগুলোকে ম্যানেজ করে। পরবর্তীতে FoF-এর ম্যানেজারও প্রাইমারি ফান্ডের রিটার্নের উপর নজর রাখে। ফলে একাধিক দক্ষ ম্যানেজার অ্যাসেট অ্যালোকেসন, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ও পার্ফরম্যান্সের মতো বিনিয়োগের ফ্যাক্টরগুলোয় নজর রাখে। যে কারণে FoF-এ বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। চতুর্থত, ফান্ড অফ ফান্ডস একাধিক ফান্ডে আলাদা আলাদা করে বিনিয়োগের যে সমস্যা তা সমাধান করে। ফলে একটা বিনিয়োগেই একসঙ্গে একাধিক ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়।
তবে কি ফান্ড অফ ফান্ড খুবই ভাল? না, ফান্ড অফ ফান্ডের একাধিক অসুবিধাও রয়েছে। ফান্ড অফ ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও অনেক বেশি। কারণ এই ক্ষেত্রে প্রথমে FoF ম্যানেজমেন্টকে একটা ফি দিতে হয়। তারপর এই FoF যে যে ফান্ডে বিনিয়োগ করে তার ম্যানেজমেন্টকেও ফি দিতে হয়। ফলে, FoF-এর খরচ অনেক বেশি হয়।
দ্বিতীয়ত, ফান্ড অফ ফান্ডের অতিরিক্ত বৈচিত্র অনেক সময় রিটার্নেও প্রভাব ফেলে। শুধুমাত্র এই কারণেই অনেক সময় রিটার্ন কম আসে। যদিও এই ক্ষেত্রে রিটার্নের রিস্ক খানিকটা কম হয়। তৃতীয়ত, FoF বেশ জটিল একটা বিষয়। ফান্ড অফ ফান্ডের বিনিয়োগের স্ট্র্যাটেজি বোঝার জন্য শুধুমাত্র এই ফান্ডের স্ট্র্যাটেজি বুঝলেই হয় না। FoF যে যে ফান্ডে বিনিয়োগ করে, তাদের স্ট্র্যাটেজিও বুঝতে হয়। ফলে এই ধরণের মাল্টিলেয়ার্ড ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের রিস্ক টলারেন্স বুঝতেও একই রকম সমস্যা হয়। চতুর্থত, FoF সরাসরি বিনিয়োগের তুলনায় অনেক কম স্বচ্ছ। এই ধরণের ফান্ডের একাধিক স্তর থাকায় টাকা কোন শেয়ারে কতটা বিনিয়োগ হচ্ছে তা বোঝা বেশ সমস্যার হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? মিউচুয়াল ফান্ড ডিস্ট্রিবিউটর সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে,”FoF-এ ঝামেলাটা কম। কিন্তু খরচটা একটু বেশি। তবে যারা মিউচুয়াল ফান্ড সদ্য শুরু করছে, তারা জন্য ফান্ড অফ ফান্ড করতে পারে। একটা তথ্য বলছে ৮৭ শতাংশ ভারতীয় মিউচুয়াল ফান্ড ব্যাপারটাই জানে না। সেই ক্ষেত্রে ফান্ড অফ ফান্ডের এক্সপার্ট ফান্ড ম্যানেজারের হাতে টাকাটা দিলেই তো হল। তাঁরা যেমন বোঝেন সেইভাবে বিনিয়োগ করলে, বিনিয়োগকারীর একটা ডাইভারসিফায়েড পোর্টফোলিওর এক্সপোজার পেয়ে যাবেন”।