
নয়া দিল্লি: কেন্দ্রের নয়া নিয়মে আগামী মাস থেকে কমে যেতে পারে আপনার বেতন। প্রতি মাসে আপনি বেতন হিসাবে যে টাকা পান, তা কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে। কেন হঠাৎ বেতন কমে যাবে জানেন? কেটে নেওয়া টাকাই বা কোথায় যাবে?
চালু হয়েছে নতুন ৪ শ্রম কোড (Labour Code)। ২১ নভেম্বর থেকেই নতুন ৪ শ্রম কোড কার্যকর হয়েছে। আর এই নতুন শ্রম কোডের ধাক্কাতেই কমে যেতে পারে কর্মচারীদের ইন হ্যান্ড স্যালারি বা হাতে পাওয়া বেতন। এর কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, কর্মীদের বেসিক স্যালারি মোট বেতনের ৫০ শতাংশ হতেই হবে।
আগে অধিকাংশ কোম্পানিই বেতন কাঠামো তৈরির সময় কর্মীদের বেসিক স্যালারি ধার্য করত মোট বেতনের (CTC) ৩০-৩৫ শতাংশ। বাকি টাকা দেওয়া হত বিভিন্ন ভাতা হিসাবে অর্থাৎ এইচআরএ (HRA), ডিএ (DA), স্পেশাল অ্যালাওয়েন্স (Special Allowence), স্ট্যাচুটরি বোনাস (Statutory Bonus) বাবদ। এবার কেন্দ্রের নিয়মে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে যে কর্মীদের বেতনের ৫০ শতাংশ তাদের বেসিক স্যালারি হতে হবে।
আগে যেহেতু বেসিক স্যালারি কম হত, তাই বিভিন্ন ভাতা বা অ্যালাওয়েন্স মিলিয়ে কর্মীরা হাতে বেশি টাকা পেতেন। প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ন্যাশনাল পেনশন স্কিমে জমানোর জন্য টাকা কম কাটা হত। এবার কেন্দ্রের নিয়মে যেহেতু বেসিক স্যালারি ৫০ শতাংশ হতেই হবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই পিএফ ও এনপিএসের জন্য অনুদানও বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার বেতন থেকে বেশি টাকা কাটবে। ফলে ইন হ্যান্ড স্যালারি কমে যাবে।
আপাতদৃষ্টিতে ইন হ্যান্ড স্য়ালারি বা হাতে পাওয়া বেতন কমে যাওয়া কর্মীদের কাছে খারাপ বলে মনে হলেও, ট্যাক্স এক্সপার্ট ও বিনিয়োগ এক্সপার্টরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে বরং কর্মীদের লাভই হবে। হাতে বেতন কমলেও, অবসর ফান্ডে টাকা বেশি জমবে।
ট্যাক্স এক্সপার্ট সুজিত বাঙ্গার জানিয়েছেন, নতুন শ্রম কোডে হাতে পাওয়া বেতন কমে গেলেও, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ন্যাশনাল পেনশন স্কিমে জমা টাকার পরিমাণ বাড়বে, কারণ এই সমস্ত খাতে অনুদান বা কন্ট্রিবিউশন বেসিক স্যালারির উপরেই হিসাব করা হয়।
যদি কারোর সিটিসি ১২ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে আগে ৭২০০ টাকা কাটা হত পিএফ ও এনপিএস বাবদ। এবার বেসিক স্যালারি যেহেতু বেড়ে যাবে, তাই পিএফ-এনপিএস কন্ট্রিবিউশন বেড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে আপনার বেতন থেকে ৪৮০০ টাকা কাটবে। এতে পিএফ অ্যাকাউন্টে ১.২৪ কোটি টাকা জমা পড়বে অতিরিক্ত। এনপিএসেও ১.০৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত জমা পড়বে। অর্থাৎ ৩০ বছরে আপনার যেখানে অবসরকালীন ফান্ড ৩.৪৬ কোটি টাকা জমা হত, তা এবার বেড়ে ৫.৭৭ কোটি টাকা হবে।
হঠাৎ বেতন কমে গেলে, প্রাথমিকভাবে একটু সমস্যা হলেও, ভবিষ্যতের জন্য এটি বরং লাভদায়ক হবে। আপনার অবসর নেওয়ার সময়ও এগিয়ে আনতে পারবেন।