করোনাবর্ষেই বঙ্গে সবচেয়ে বেশি শিল্প বিনিয়োগ, মান্যতা কেন্দ্রের
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের মতো তথাকথিত ‘শিল্পবান্ধব’ রাজ্যগুলিতে ২০১৮ কিংবা ২০১৯–এর চেয়ে ২০২০ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ খানিকটা কমেছে।
অঙ্কুর সেনগুপ্ত: করোনাকালে (COVID) রাজ্যের শিল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সামান্য হলেও দেখা গেল রূপোলি রেখা। কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন ডিপার্টমেন্ট ফর প্রমোশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টার্নাল ট্রেড (ডিআইপিপি) যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই তিন বছরের মধ্যে রাজ্যে প্রস্তাবিত শিল্প বিনিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি করোনাবর্ষ অর্থাৎ ২০২০ সালে।
ডিআইপিপি’র তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১২ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রাজ্যে মোট শিল্প বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ৯,৫৫২ কোটি টাকার। এই প্রস্তাব এসেছে মোট ২৭টি সংস্থার তরফ থেকে। অন্যদিকে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪,৭২২ কোটি টাকা ও ৫,৮৪৪ কোটি টাকা। এই দুই বছরে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে যথাক্রমে ৪৮ ও ৬২টি সংস্থার পক্ষ থেকে। অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে এই প্রস্তাবিত শিল্প বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬৩.৪ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের মতো তথাকথিত ‘শিল্পবান্ধব’ রাজ্যগুলিতে ২০১৮ কিংবা ২০১৯–এর চেয়ে ২০২০ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ খানিকটা কমেছে। রাজ্য সরকারের শিল্প দফতরের কর্তাদের দাবি, রাজ্যে শিল্পস্থাপনের পরিবেশ যে ইতিবাচক, কেন্দ্রীয় সরকারের এই তথ্যের মাধ্যমেই তা স্পষ্ট হয়েছে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় এসে রাজ্যে বিনিয়োগ টানার জন্য বিশ্ববঙ্গ শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। রাজ্য সরকারের তথ্য বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই শিল্প সম্মেলন থেকে মোট ১২.৩২ লক্ষ কোটি টাকার শিল্প প্রস্তাব এসেছে। যদিও তার বাস্তবতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। এমনকি এই নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর তদন্তেরও দাবি করেছেন।
শহরের অন্যতম প্রাচীন বণিকসভা এমসিসি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল শুভাশিস রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “রাজ্য সরকার যে যথেষ্ট শিল্পবান্ধব, তা এই শিল্পপ্রস্তাবের অঙ্কই প্রমাণ করে। রাজ্যে বিনিয়োগের পরিকাঠামো যে তৈরি রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি কেন্দ্রের এই তথ্যের মাধ্যমেই মান্যতা পেল।” তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন, এই বিনিয়োগের পরিমাণ চলতি বছর বেশ খানিকটাই বাড়বে।
শিল্প বিশেষজ্ঞ সুপর্ণ মৈত্রের মতে, ডিআইপিপি’র পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট সারা ভারতে করোনাকালে শিল্প বিনিয়োগের পরিমাণ কমলেও বাংলায় উল্লেখযোগ্যভাবে সেই পরিমাণ বেড়েছে। এটা গত ১০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফল। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই শিল্পপ্রস্তাব সবই যে চলতি বছরে এসেছে, তা নয়। সাধারণত ডিআইপিপি যে কোনও শিল্প প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বা কাজ শুরু হলে তখন তা তালিকাভুক্ত করে। ফলে এই প্রস্তাব সব চলতি বছরে আসেনি তা স্পষ্ট।
যদিও এর বিরোধী মতও রয়েছে। সেই পক্ষের দাবি, বাংলায় শিল্পবিনিয়োগের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত কম, সেই কারণেই বিনিয়োগ সামান্য বাড়লেই তা বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি থাকায় করোনাবর্ষে সেই অঙ্ক আর বাড়েনি।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে ঋণ মুকুব নিয়ে বড়সড় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের