মুম্বই: সাফল্যই সেরা প্রতিশোধ। এই শিক্ষাকে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি করে দেখিয়েছিলেন যিনি, তিনিই রতন টাটা। আজ তিনি আর নেই। তবে দেশবাসীর মনে চিরন্তন স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর উত্থান, কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবন অনুপ্রাণিত করে চলেছে বহু মানুষকে।
বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে রতন টাটা যখন টাটা গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিলেন,সেই সময় সংস্থার অবস্থ খুব একটা ভাল ছিল না। ১৯৯১ সালে যখন টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পদে বসেন রতন টাটা, তখন সংস্থার আয় ৫.৮ বিলিয়ন বা ৫৮০ কোটি টাকা ছিল, সেখানেই ২০১১-১২ সালে দাঁড়িয়ে তাঁর নেতৃত্বেই সংস্থার লাভ ১০০ বিলিয়ন ডলার পার করে।
রতন টাটার স্বপ্নের প্রজেক্ট ছিল টাটা ইন্ডিকা। ১৯৯৮ সালে টাটা মোটরস এই গাড়িটি বাজারে আনে। দেশের প্রথম ডিজেল ইঞ্জিন সহ হ্যাচব্যাক গাড়ি ছিল এটি। কিন্তু শুরুতে তেমন ছাপ ফেলতে পারেনি। বরং টাটা মোটরসের অবস্থা আরও খারাপ হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯৯৯ সালে, টাটা গ্রুপ তাদের গাড়ির ব্যবসা ফোর্ড কোম্পানিকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল।
বিক্রি নিয়ে ফোর্ডের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ডের সঙ্গে কথা বলতেই ডেট্রয়েট গিয়েছিলেন রতন টাটা। কিন্তু তিন ঘণ্টার বৈঠকে গাড়ি বা ব্যবসা নিয়ে কোনও আলোচনা নয়, বরং পদে পদে অপদস্থ করা হয়েছিল রতন টাটা-কে। শোনা যায়, বিল ফোর্ড রতন টাটাকে বলেছিলেন যে তিনি গাড়ি সম্পর্কে কিছু জানেন না, এই ব্যবসাতেই থাকা উচিত নয় ওঁর। ফোর্ড টাটা মোটরস কিনে কার্যত দয়া করছে সংস্থার উপরে।
এই কথা শোনার পরও চুপ ছিলেন রতন টাটা। বিনা বাক্য ব্যয়ে ভারতে চলে আসেন। সিদ্ধান্ত নেন যে ফোর্ডের কাছে ব্যবসা বিক্রি করবেন না। বরং টাটা মোটরসকেই এমন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন যে বাকিরা অবাক হবে।
এরপর কেটে যায় ৯ বছর। ততদিনে টাটা কনগ্লোমারেটে পরিণত হয়েছে। ইস্পাত থেকে নুন, তথ্য প্রযুক্তি-সর্বত্রই টাটা গোষ্ঠীর বিচরণ। এদিকে, ভাগ্যের চাকা ঘুরে ফোর্ডের তখন দেউলিয়া হওয়ার জোগাড়। সেই সময়ই ফোর্ড কোম্পানির ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন রতন টাটা। ২০০৮ সালে ২.৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ফোর্ড কোম্পানির আইকনিক জ্যাগুয়ার-ল্যান্ড রোভার কিনে নেন।
যে বিল ফোর্ড বলেছিলেন যে গাড়ি সম্পর্কে কিছু জানেন না রতন টাটা, তিনিই ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, “জ্যাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কিনে বড় উপকার করলে।
ফোর্ড আশা করেছিল, রতন টাটার হাতেও ব্যর্থ হবে জ্যাগুয়ার, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই তা টাটা মোটরসের সবথেকে বিক্রিত গাড়িতে পরিণত হয়।