
সময় যত যাচ্ছে আমাদের দেশের গরমের প্রকোপ যেন ততই বাড়ছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন রেকর্ড সেট করছে থার্মোমিটারের রিডিং। কিন্তু স্টক মার্কেট সে দিক থেকে আলাদা। গরমের সময় দেশের শেয়ার বাজার একটা নির্দিষ্ট চক্র ফলো করে। আর এই একই ধরণের প্যাটার্ন ফলো করে প্রতি বছরই প্রচণ্ড গরমের সময় লভ্যাংশ পেতে পারে বাজারের বিনিয়োগকারীরা।
বিদ্যুতের চাহিদা:
গরমের সময় ঘরে ঘরে পাখা, এসি বা কুলার চলতে থাকে সারা দিন। আর এর ফলে দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। এই সময়, এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ২৭০ গিগা ওয়াট ছাড়িয়ে যায়। আর এই পরিস্থিতিতে লাভবান হবে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো। এর মধ্যে রয়েছে এনটিপিসি, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন, আদানি পাওয়ার, টাটা পাওয়ার ও জেএসডব্লিউ পাওয়ার।
ঠান্ডা পানীয়:
গরমে মানুষ একটু ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দিতে চায়। এর ফলে, কোল্ড ড্রিঙ্কস, সফট ড্রিঙ্কসের মতো জিনিসের চাহিদা বাড়ে। আর এর ফলে যে সব সংস্থা এই ধরণের পানীয় তৈরি করে, তাদের শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, বরুণ বেভারেজেস ও রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংস্থা।
এসি, কুলার, পাখা:
এই সময় এসি, কুলার বা পাখা প্রস্তুতকারী সংস্থা বা তার জন্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী সংস্থার পোয়াবারো। গরমে এসি, কুলার বা পাখার চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে সংস্থাগুলোর শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে। ভোল্টাস, ব্লু স্টার, ওয়ার্লপুল, হ্যাভেলসের মতো সংস্থাগুলোর শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে এই সময়।
আইসক্রিম:
শুধুমাত্র ঠান্ডা পানীয় সংস্থা নয়, এই সময় চাহিদা বাড়ে আইসক্রিমেরও। আর সেই কারণে আইসক্রিম সংস্থাগুলোর শেয়ারের দামও বাড়তে থাকে চড়চড়িয়ে। ভাদিলাল এমন একটা সংস্থা যাদের শেয়ারে এই সময় একটা বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।
ট্রাভেল ও হস্পিটালিটি:
গ্রীষ্মের ছুটির সময় অনেকেই বেড়াতে যায়। কারণ, সেই সময় বাচ্চাদের স্কুল ছুটি থাকে। এ ছাড়াও গরমে কাবু ভারতবাসী এই সময় কাশ্মীর, হিমাচল, দার্জিলিং বা উত্তর পূর্বে বেড়াতে যেতে চায়। ফলে, এই সময় ট্রেন, বিমানের টিকিটের চাহিদা যেমন বাড়ে, তেমনই বাড়ে হোটেলের চাহিদা। আর এতেই চড়চড় করে বাড়বে IRCTC, আইটিসি হোটেলস, ইন্ডিয়ান হোটেলস, ইন্টারগ্লোব অ্যাভিয়েশন, ইজ মাই ট্রিপ, যাত্রা-র মতো সংস্থার শেয়ারের দাম।
ত্বকের যত্ন নিন:
গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের চাহিদাও বাড়তে থাকে। এই সময় সূর্যের তাপে মানুষের চামড়া খারাপ হতে থাকে। আর সেই কারণেই এমনটা ঘটে। ফলে নায়কা বা মামাআর্থের মতো সংস্থার শেয়ারের দামে তার একটা প্রভাব পড়তে পারে।
কৃষিকাজে প্রভাব:
গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালে অনেক ধরণের সবজি চাষ হয় দেশে। আর সেই সব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সার বা কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশের চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে বাড়ে সেই সংস্থাগুলোর শেয়ারের দামও।
বছর বদলায়। বদলায় ক্যালেন্ডারও। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলায় না গ্রীষ্মে শেয়ার বাজারের ভাগ্য। প্রতি বছর যেন একই ভাবে ঘুরতে থাকে বাজারের চক্র।
কোথাও বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করুন। এই লেখা শুধুমাত্র শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।