মিউচুয়াল ফান্ডে অনেকেই বিনিয়োগ করেন। সাধারণ মানুষ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন যাতে ভবিষ্যতে কিছুটা আর্থিক স্বচ্ছলতা তাঁর জীবনে আসে। ভবিষ্যতের সঞ্চয় হিসাবেও অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডে এমন কিছু টার্ম রয়েছে, যেগুলো সম্পর্কে না জেনে বিনিয়োগ করা বেশ কিছুটা ঝুঁকির বিষয়। কারণ এই বিষয়গুলো থেকেই মিউচুয়াল ফান্ডটি সম্পর্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন।
ন্যাভ (NAV)
নেট অ্যাসেট ভ্যালু (Net Asset Value)। সংক্ষেপে ন্যাভ। যে কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের সূচক হিসাবে ন্যাভকে ব্যবহার করা হয়। কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে থাকা আর্থিক সম্পদ বা শেয়ারকে, ওই ফান্ডে থাকা শেয়ার বা আর্থিক সম্পদের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে ন্যাভ নির্ণয় করা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। ন্যাভের বৃদ্ধি ওই মিউচুয়াল ফান্ডের বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ হয়ে থাকা আর্থিক সম্পদ বা শেয়ারের মূল্য ২ কোটি টাকা হয় ও ওই মিউচুয়াল ফান্ড ১০ লক্ষ ইউনিট ১০ টাকা হিসাবে বিনিয়োগকারীদের দিয়ে থাকে তাহলে ইউনিট প্রতি ন্যাভ হবে ২০ টাকা (২ কোটি/১০ লক্ষ)।
বেঞ্চমার্ক (Benchmark)
বেঞ্চমার্ক এমন একটি মান যার সঙ্গে কোনও কিছুর তুলনা করা যায়। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা বিভিন্ন বিনিয়োগের পারফর্ম্যান্স কেমন তা বুঝতে বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করেন।
আলফা (Alpha)
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ হওয়া টাকা বাজারে খাটানোর জন্য ফান্ড ম্যানেজাররা বিভিন্ন রকম ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের আলফা সেই ঝুঁকির পরিমাণ কতটা তা পরিমাপে সাহায্য করে। আলফা সম্ভবত মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমের পারফর্ম্যান্স পরিমাপ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের আলফা যদি ১ হয় তাহলে বুঝতে হবে ওই মিউচুয়াল ফান্ড যে শেয়ারে বিনিয়োগ করে তা বেঞ্চমার্ক যা হয় সেই উত্থানকে ১ শতাংশ হারে আউটপার্ফর্ম করে দিয়েছে। অর্থাৎ, যা আশা করা হয়েছিল তার তুলনায় ১ শতাংশ বেশি রিটার্ন দিয়েছে। একই ভাবে আলফা যদি -১ হয় তার অর্থ যা রিটার্ন আশা করা হয়েছিল তার তুলনায় ১ শতাংশ কম রিটার্ন পাওয়া গিয়েছে।
বিটা (Beta)
একটি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমের বিটা হল স্কিমটির বেঞ্চমার্কের সঙ্গে বাজারের অস্থিরতার সম্পর্ক। যদি একটি স্কিমের বিটা 1-এর বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে ওই মিউচুয়াল ফান্ডের পরিবর্তনশীলতা বা ওঠাপড়া তার বেঞ্চমার্কের চেয়ে বেশি। আর যদি বিটা 1-এর কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে ওই মিউচুয়াল ফান্ডটি তার বেঞ্চমার্কের তুলনায় কম ওঠানামা করে।
শার্প রেশিও (Sharpe Ratio)
রিস্ক-অ্যাডজাস্টেড রিলেটিভ রিটার্ন মাপার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল শার্প রেশিও। এটি কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের বেঞ্চমার্কের অতীতের রিটার্ন বা প্রত্যাশিত রিটার্নের সাথে মিউচুয়াল ফান্ডটির অতীতের রিটার্ন কতটা বেশি বা কম তার তুলনা করে। এই অনুপাত যদি ১ থেকে ৩ এর মধ্যে হয় তাহলে বুঝতে হবে সেই মিউচুয়াল ফান্ড অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত রিটার্ন দিচ্ছে।
এই বিষয়গুলো আপনি জেনে গেলেও বিনিয়োগ করার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে বিনিয়োগের আগে সেই নিয়মগুলো এখানে ক্লিক করে একবার দেখে নিন। তবে আপনি কোন খাতে বিনিয়োগ করলে বেশি লাভবান হবেন সেটা জানতে এখানে ক্লিক করে দেখুন। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে মাথায় রাখতে হবে আরও বেশ কিছু ব্যাপারও। আর বিনিয়োগের জন্য কোন মিউচুয়াল ফান্ড ভাল বিনিয়োগের আগে দেখে নিন সেটাও।
তবে এখানে বলা বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য কোনও উপদেশ নয়। বা এর উপর ভিত্তি করেই আপনাকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে এমনটাও নয়। তবে এই তথ্য আপনাকে বিভিন্ন বিনিয়োগের ধারণা দেবে।
*যে কোনও ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি অবশ্যই ভালভাবে পড়ে নেবেন।