কলকাতা: সদ্যই পুরভোট পিছিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতকে সম্মান জানিয়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২২ জানুয়ারি ভোট হওয়ার কথা ছিল। তা পিছিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। আর কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, ঠিক এক সপ্তাহ আগেই গত শনিবারই পুরভোট নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছিলেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)।
শনিবার বিকেলে টুইট করে অভিষেক লেখেন, “রাজ্যে পুরভোট ৩ সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য় মাননীয় আদালত ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের কোভিডের বিরুদ্ধে একযোগে লড়তে হবে। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে বাংলার পজিটিভিটি রেট যেন ৩ শতাংশের কম হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।”
I wholeheartedly thank Hon'ble High Court & SEC for postponing polls by 3 weeks in the state.
Let us work UNITEDLY to ensure that the positivity rate in Bengal is BROUGHT DOWN to LESS THAN 3% IN THE NEXT 3 WEEKS. The need of the hour is to strengthen the fight against #COVID !
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) January 15, 2022
অভিষেকের এই টুইট ঘিরেই শুরু হয়েছে আলোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভিষেকের এটি ‘মাস্টারস্ট্রোক’। নীরবে, দলে নিজের অবস্থানটা যেন স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সমস্ত বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ‘স্রেফ মানুষের পক্ষে সওয়াল’ করলেন অভিষেক।
বিতর্কের সূত্রপাত হয়, অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশের বিরুদ্ধে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের মাধ্যমে। তারও আগে, নিজের সংসদীয় এলাকাতে কোনওরকম মিটিং মিছিল জমায়েতে বারণ করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। ডায়মন্ড হারবারে করোনা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপও করেন অভিষেক। তা নিয়ে টুইট করেছিলেন খোদ সাংসদ। এরপরেই, চলতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার, অভিষেকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কল্যাণ। স্পষ্টই জানান, অভিষেক যে পদে রয়েছেন তাতে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত মতামত থাকতে পারে না। এমনকী, অভিষেকের নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়নি বলেও দাবি তোলেন কল্যাণ।
ঠিক কী ছিল অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মত’ ? তিনি বলেছিলেন, “এখন মেলা, খেলা, ভোট সব বন্ধ রাখা উচিত। দু’মাস সব বন্ধ রাখা উচিত। মানুষ বাঁচলে আমরা বাঁচব।” অভিষেকের এই মতের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কল্যাণের মন্তব্য, “অভিষেকের নেতৃত্ব প্রমাণিত হয়নি। অভিষেক একজন পদাধিকারী। নেতা মমতাই। ত্রিপুরা, গোয়া জিতিয়ে দাও, মুখ্যমন্ত্রী করে দাও, তবে অভিষেককে নেতা বলে মেনে নেব।” এমনকী, বর্ষীয়ান সাংসদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দল থেকে বের করে দিলেও তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে নেত্রী মানতে নারাজ।
কল্যাণের এই ‘বিরোধী’ অবস্থানের বিরুদ্ধে সরব হন দলেরই অন্য নেতা ও সাংসদরা। খোদ লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়, শুক্রবার রাতে হোয়াটস্যাপে সতর্কবার্তা দিয়ে জানান, কোনওভাবে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলা যাবে না। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। এই গোটা বিতর্ক যখন বিবদমান, তখন কার্যত নীরব থাকলেন দুটি মানুষ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল না।
এদিকে, পুরভোট পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছে বিরোধীরা। কিন্তু, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশের সাতদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার। সহমত জানায় রাজ্যও। উল্লেখ্য, পুরভোট যেহেতু রাজ্য নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করে তাই প্রথামাফিক সেই ভোট নিয়ে চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণার আগে রাজ্যের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়। রাজ্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই ভোট ঘোষণা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ বারও রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেই ভোট ঘোষণা করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ বলছেন, দলের ব্যাটন এভাবেই নিঃশব্দে অভিষেকের হাতে ন্যস্ত করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। যে ‘অভিষেক মডেল’ নিয়ে এত বিতর্ক, সেই সমস্ত বিতর্কের থেকে কার্যত দূরেই থাকলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। একটি টুইটেই বুঝিয়ে দিলেন, সাধারণের পক্ষেই সওয়াল করেছেন তিনি, আর এখানেই অভিষেকের নতুন ‘অভিষেকের’ ছায়া দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: TMC Clash: ‘প্রকাশ্যে মুখ খুলে বিতর্ক তৈরি করা যাবে না’, সকল তৃণমূল সাংসদদের সতর্কবার্তা