পশ্চিম বর্ধমান: আগামী ২২ জানুয়ারি রাজ্যের যে পাঁচ পুরসভায় ভোট রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আসানসোল। আসানসোল বিজেপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটিগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু, সম্প্রতি সেই শক্ত ঘাঁটিতেও যেন খানিক ঘুণ ধরেছে অন্তত এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। কারণ, জটিলতা প্রার্থী নিয়ে। বিজেপির তরফে অবশেষে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল (Agnimitra Paul) সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্টই জানালেন পুরভোটে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বছরের শেষ শুক্রবারেই বিজেপি আসানসোল পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে অগ্নিমিত্রা বলেন, “তৃণমূল তো প্রার্থী দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। সাংবাদিক বৈঠক করে প্রার্থী বাছাই করার সাহসও হয়নি। অনলাইনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। গোষ্ঠীকোন্দলের ভয়ে ঢাক গুড়গুড় করছে ওদের।” এরপরেই অগ্নিমিত্রা বলেন, “আমরা শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করব। আমাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়ে গিয়েছে।”
বেশ কিছুদিন ধরেই আসানসোলে বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পুরভোটে প্রার্থী বাছাই করতে ড্রপবক্সও বসিয়েছে বিজেপি। কিন্তু, বিজেপির দলীয় কোন্দল এড়ানো যায়নি। শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হলে কি কিছুটা হলেও কাটবে জট? অন্তত সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
আসানসোলে দলের অন্দরের বিক্ষোভ নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর সাফ দাবি, দল কারোর দিকে তাকিয়ে চলবে না। টিকিট না পেলেই হতাশ হয়ে পড়েন অনেকে। কিন্তু, যিনি যোগ্য তাঁকেই প্রার্থী পদ দেওয়া হবে।
প্রবীণ বিজেপি নেতার মন্তব্য, “অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে ভাবেন আমার টিকিট পাওয়া উচিত। না পেলেই মনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় তাঁদের। কিন্তু পার্টি একটা সিস্টেমে চলবে। কোনও ব্যক্তি দেখে বা কারোর পছন্দমতো পার্টি চলবে না।” তাঁর আরও সংযোজন, “নতুন-পুরনো মিলিয়েই প্রার্থী করা হচ্ছে। যাঁরা জিততে পারবেন তাঁদেরকেই প্রার্থী করা হবে। পুরনো কর্মীদের সুযোগ দেওয়া হবে।”
ঘাতে-অন্তর্ঘাত
কিছুদিন থেকেই আসানসোল বিজেপির অন্দরে ধিকি ধিকি চলছে বিরোধের আগুন। বহিরাগতদের নয়, দলের পুরনো কর্মীদেরই পুরভোটে টিকিট দিতে হবে, এই দাবিতে জেলা নেতৃত্বের কাছেই ক্ষোভ উগড়ে দেন বিজেপি কর্মীরা। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের দাবি, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দলের হয়ে কাজ করছেন তাঁদের একটি পরিচিতি রয়েছে। এলাকায় জনভিত্তি রয়েছে। সেসব না দেখে যদি দলে নবাগতদের আগে জায়গা দেওয়া হয় বা মনের মতো প্রার্থী না দেওয়া হয় তাহলে ‘বসে যাবেন’ সকলে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কুলটির পদ্ম কর্মীরা।
বুধবার কুলটির বরাকরে অজয় পোদ্দারের কার্যালয়ে প্রার্থী সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠকে বসেছিল বিজেপি। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল, দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ ঘোড়ুই, আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে-সহ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ উগড়ে দেন কিছু মহিলা নেত্রী ও কর্মীরা।
বিজেপি নেত্রী শিল্পা রায়ের কথায়, ” সারা বছর যারা ওয়ার্ডে কাজ করেছে তাদের মধ্যে থেকেই প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় আমরা বাড়িতে বসে যাব।” কুলটি এক নম্বর মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভাপতি মৌসুমি লায়েকেরও এক কথা। তাঁর মন্তব্য, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই ওয়ার্ডে কাজ করছি। অনেকেই রয়েছেন এরকম যাঁদের জনভিত্তি রয়েছে। তাঁদের প্রার্থী না করে কেন নতুনদের প্রার্থী করা হবে!”
যদিও, রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ ঘোড়ুই জানান, যোগ্য লোককেই প্রার্থী করা হবে। দলের উপরে কেউ নয়। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় কটাক্ষ হেনে বলেছেন, “বিজেপি মানুষের কাজ করবে কী! নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা মেটাতে পারে না!”
তবে বিরোধীদের কটাক্ষেই কি ইতি সমস্যার? আসানসোলে বিজেপির আদি-নব্য কোন্দল নতুন ঘটনা নয়। বিধানসভা নির্বাচনেও বিভিন্ন সময়ে গোষ্ঠীকোন্দলের ছবি সামনে এসেছিল। ভোট পরবর্তী হিংসাতেও নিচুতলার দলীয় কর্মীরা অভিযোগ করেছিলেন দলের জন্য তাঁদের ঘর ছাড়তে হয়েছিল। হিংসার শিকার হতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ফের পুরভোটে নব্যদের আগমন কার্যত দলের পুরনো কর্মীদের কাছে ক্ষোভের কারণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: রাজ্যের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবৈধ’ উপাচার্য নিয়োগ! ফের টুইটযুদ্ধে ধনখড়