কলকাতা: একুশের বিধানসভা ভোটে জিতে বাংলার মহিলাদের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ উপহার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি মাসে মহিলাদের ৫০০ টাকা করে ‘হাত খরচ’ দেয় তাঁর সরকার। শনিবারই গোয়ার মহিলাদের জন্যও একেবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছে গোয়া তৃণমূল। তবে এখানে হাত খরচের অঙ্কটা বেশ বড়, মাসে ৫ হাজার টাকা। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘এই গৃহলক্ষ্মী একেবারেই অলীক ঘোষণা। ভোটের গিমিক। কিছু পাওয়ার চেষ্টা। কারণ, তৃণমূল জানে গোয়ায় তারা জিতবেও না, আর এত টাকা দিতেও হবে না।’ একই সঙ্গে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়া সফরকেও।
রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ” ওনারা যাচ্ছেন যান। বিজেপি ওখানে খুবই শক্তিশালী। মানুষ বুঝতে পারছেন ওনাদের গোয়ায় যাওয়া শুধুমাত্র ভোট বাড়ানোর জন্য। সেই জন্য মানুষকে প্রলোভন দেখানোর মতো যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই এরকম ঘোষণা করেছেন।”
এ কথার রেশ ধরেই সুকান্ত তুলে আনেন গৃহলক্ষ্মী প্রকল্পের কথা। সুকান্ত মজুমদারের সংযোজন, “৫ হাজার টাকা করে উনি নাকি প্রত্যেক মহিলাকে দেবেন। যদি ওনাদের সরকার আসে। অর্থনীতি যাঁরা সামান্য বোঝেন, তাঁরাও জানেন গোয়ায় জনসংখ্যা কত। গোয়ায় কত মহিলা। তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে দিতে হলে কত লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন। তার আমদানিই বা কোথা থেকে হবে! এটা অবাস্তব ঘোষণা ছাড়া কিছুই নয়।”
সুকান্তের দাবি, ‘এটা ভোট বাড়ানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতির বলেন, “এই অবাস্তব ঘোষণাটা সে কারণেই করা হয়েছে কারণ ওনারা যে ক্ষমতায় আসবেন না সেটা ভাল করেই জানেন। ওনাদের সে টাকা দিতেও হবে না।”
২০২২- এর গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে গৃহলক্ষ্মী প্রকল্প চালু করবে তৃণমূল। গোয়ার তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে এমনটাই ঘোষণা করা হয়েছে। সেই প্রকল্পে মহিলারা মাসে ৫ হাজার টাকা করে পাবেন।
তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২২- এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে প্রত্যেক পরিবারের মহিলাদের টাকা দেবে। মাসে ৫ হাজার মানে প্রত্যেক মহিলা বছরে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, এই স্কিম চালু হলে উপকৃত হবে গোয়ার সাড়ে তিন লক্ষ পরিবার। আরও জানানো হয়েছে যে এই স্কিম কার্যকর করতে হলে রাজ্য সরকারের খরচ হবে ১৫০০ থেকে ২০০০ কোটি টাকা, যা রাজ্য বাজেটের ৬ থেকে ৮ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তৃণমূলের এই প্রতিশ্রুতিকে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছেন গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তিনি লেখেন, “এই সহজ অঙ্কের জন্য অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিৎ। সাড়ে তিন লক্ষ পরিবারকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দিলে মাসে খরচ হবে ১৭৫ কোটি টাকা। বছরে টাকার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ২১০০ কোটি। যে গোয়া রাজ্যের ২০২০ সালের মার্চ অবধি দেনার পরিমান ২৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, সেই রাজ্যের জন্য টাকার এই অঙ্ক কতটাই না ক্ষুদ্র। এখন কী বলা উচিৎ, ঈশ্বর গোয়ার মঙ্গল করুন না ঈশ্বর গোয়াকে বাঁচান?”
যদিও চিদম্বরমের টুইটের পাল্টা তৃণমূল সাংসদ তথা গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মহুয়া মৈত্র টুইট করেন, “হ্যাঁ স্যার, সাড়ে তিন লক্ষ পরিবারকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দিলে বছরে ২১০০ কোটি টাকা খরচ হবে যা গোয়ার মোট বাজেটের ৬ থেকে ৮ শতাংশ। অর্থনীতি বলে করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের হাতে আরও বেশি করে নগদ টাকা দেওয়া কথা কারণ এরফলে মানুষের সাহায্য হবে।”