কলকাতা: আর মোটে একদিন। তারপরেই কলকাতায় পুরভোট। শেষ প্রচারে তাই নিজ নিজ দলের প্রচারে মন দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। শুক্রবার ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী শঙ্কর শিকদারের পক্ষে নবপল্লিতে প্রচারে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) সরাসরি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) নিশানা করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ বলে কটাক্ষ করলেন।
এদিন প্রচারে সুকান্ত বলেন, “বহিরাগতদের এনে ভোট করানোর চেষ্টা চলছে। বাঁকুড়ার থেকে লোক আনা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলে বাইরের জেলা থেকে লোক আনা হয়েছিল। ভোটেও তো লোকগুলোকে এখানেই রেখে দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনকে জানাব। কিন্তু, তাতে লাভ কই! নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ!”
এখানেই না থেমে সুকান্ত আরও বলেন, “বাইরে থেকে যে লোক আনা হচ্ছে সেটা বুঝতে ডানকুনি টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজ বের করা হোক। তাহলেই দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে। অবশ্য যদি সেই ফুটেজ ডিলিট না করা হয়ে থাকে। বিজেপির সমর্থন আরও বাড়বে। আগের চেয়ে বেশি আসনে জিতব।”
শুধু তাই নয়, ভোট প্রচারে বেরিয়ে, অভিষেককে নিশানা করে সুকান্ত আবার বলেছেন, “ওনার (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) উপর থেকে রাজনীতি করা অভ্যাস। প্যারাশুট নিয়ে নেমেছেন। রাজনীতির কিছুই বোঝেন না। ক্ষমতায় আছেন বলে এখন অনেক বড় বড় কথা বলছেন। যেদিন ক্ষমতায় থাকবেন না বুথ সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা নেই ওনার।”
প্রসঙ্গত, শুক্রবার উত্তর কলকাতায় ভোট প্রচারে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এখানে কোনও বিরোধী দল নেই। তাদের কারও কোনও কর্মসূচিও নেই। উত্তর কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ডে তৃণমূলই জিতবে। একই সঙ্গে অভিষেক বার্তা দেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতাকে উন্নয়নের যে পথ দেখিয়েছেন, যেভাবে নাগরিক পরিষেবা উন্নতি করেছেন, সেই পথেই সকলকে চলতে হবে। ভোটে জিতে কাজের দিকে নজর দিতে হবে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতির দাবি, যদি তৃণমূল ১০ বছর ধরে উন্নয়নই করে আসে, তা হলে ইস্তাহারে এতকিছুর উল্লেখ করতে হল কেন। জল জমা নিয়ে কলকাতার সম্প্রতি যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট রাজ্যের রাজধানীও জলযন্ত্রণা থেকে মুক্ত নয়। এরপরই সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এতদিন পর মুখ্যমন্ত্রী-সহ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের মনে হয়েছে এগুলো করতে হবে। এত বছর ক্ষমতায় থাকার পর কী করতে হবে তার ফিরিস্তি না দিয়ে, কী করেছি সেটা বলা দরকার।”
কিছুদিন আগে কলকাতায় পুরভোট প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “মমতার-সরকারে রোহিঙ্গারা উড়ছে। যেখান থেকে পারছে এখানে এসে ঢুকছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দিকগুলোতে আটকানোই যাচ্ছে না অনুপ্রবেশ। ওখানে সর্বত্র বিএসএএফের চৌকি নেই। আব্দুল মান্নান, লাল্টু শেখের মতো এমন ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কিছুই করছে না। বিরোধী দলনেতার পেছনে পড়ে রয়েছে।”
শুভেন্দুর আরও সংযোজন, “হাইকোর্টের যা নির্দেশ তা স্বাগত। কিন্তু, কোনও রাজনৈতিক দল হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে ভোটে জিততে পারে না। হাইকোর্টের দেখা উচিত, বাংলাদেশের ভুয়ো ভোটার এসে যেন বোতাম না টিপে দিয়ে যায়। বিরোধী শিবির যেন বুথে এজেন্ট রাখতে পারে। তৃণমূল নেতারা যেন পাশে দাঁড়িয়ে ছাপ্পা না দিতে পারে।”
এর আগে সিঙ্গুরের ধরনা মঞ্চ থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “কলকাতা পুরনিগমে মারামারি করে ভোট লুঠ করতে চায়। সমস্ত বিধায়করা লোক জড়ো করে রাস্তায় বসে থাকবেন ১৯ তারিখ। আমাদের একটা কর্মীর গায়ে যদি হাত পড়ে কোনও এজেন্টের গায়ে যদি হাত পড়ে শুভেন্দুদা থেকে শুরু করে প্রত্যেক বিধায়ক, প্রত্যেক জেলা সভাপতি রাস্তায় বেরিয়ে সেদিন পশ্চিমবঙ্গকে অচল করে দেবে। পশ্চিমবঙ্গকে স্তব্ধ করে দেবে।”