বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তথা গোটা বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম চর্চিত লোকসভা কেন্দ্র বসিরহাট। কারণ, এই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে সন্দেশখালি। যা এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার অন্যতম বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। শুধু বাংলা নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও কাঁটাছেড়া শুরু হয়েছে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ নিয়ে। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ি সাংসদ অভিনেত্রী নুসরত জাহান। প্রশ্ন উঠেছিল, এলাকার সাংসদের ভূমিকা নিয়েও। কেন সাংসদ একবারও সন্দেশখালি গেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে বিরোধীরা। বিতর্কের আবহে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এবার লোকসভা ভোটে আর তৃণমূলের টিকিট পাননি নুসরত।
বিধানসভার নিরিখে কার দাপট?
বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র। সন্দেশখালি, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, বসিরহাট উত্তর ও বসিরহাট দক্ষিণ - এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে বসিরহাট লোকসভা। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র বর্তমানে কার্যত তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। একুশের বিধানসভা ভোটের নিরিখে দেখলে, সাতটি বিধানসভাতেই উড়েছে সবুজ আবির। বিরোধীদের কেউ দাঁত ফোটানোর সুযোগ পায়নি বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভায়। যাঁরা তৃণমূলের ধ্বজা উড়িয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। চব্বিশের লোকসভা ভোটে তারকা সাংসদ নুসরতের পরিবর্তে পোড় খাওয়া রাজনীতিক হাজি নুরুলের উপরেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল।
বাম-দুর্গ দুরমুশ হয়ে যায় ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে
বাম জমানায় এই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের উপর ছিল সিপিআই-এর একচ্ছত্র দাপট। ১৯৮০ সাল থেকে সিপিআই একাই রাজ করেছে বসিরহাটে। তার মধ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে টানা সাংসদ ছিলেন সিপিআই নেতা অজয় চক্রবর্তী। কিন্তু ২০০৯ সালে অজয় চক্রবর্তীর বিজয়-রথ থামিয়ে দেয় তৃণমূল। তৃণমূল থেকে এখানে সেবার প্রার্থী করা হয়েছিল নুরুল ইসলামকেই। চারবারের সাংসদের বিরুদ্ধে লড়াই মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু, সবাইকে চমকে দিয়ে অজয় চক্রবর্তীকে হারিয়ে দেন নুরুল ইসলাম। তৃণমূলের নুরুল পেয়েছিলেন প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজারের কাছাকাছি ভোট। অন্যদিকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইয়ের অজয়বাবু পেয়েছিলেন ৪ লাখ ১৯ হাজার ভোট। বিজেপি প্রার্থী স্বপনকুমার দাস পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ৬৯০ ভোট।
২০১৪ সালের ভোটে শক্তি পরখ করে বিজেপি
তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই বসিরহাটে নিজেদের শক্তি বাড়াতে শুরু করেছিল বিজেপি। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি যেখানে সাড়ে ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ১৮.৩৬ শতাংশ। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র অবশ্য এবারও তৃণমূলের হাতেই থেকে গিয়েছিল। তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৯২ হাজার ভোট। সিপিআই প্রার্থী নুরুল শেখ পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ভোট। আর বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ভোট। কংগ্রেসের আব্দুর রহিম কাজি পেয়েছিলেন ১ লাখ ২ হাজার ভোট।
উনিশে তৃণমূলের তারকা প্রার্থীকে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর বিজেপির
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি এখানে ক্ষমতা আরও বাড়ায়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ১৮.৩৬ শতাংশ থেকে এবার বিজেপির প্রাপ্ত ভোট বেড়ে হয় ৩০.১২ শতাংশ। প্রায় ১২ শতাংশ ভোট বাড়ে বিজেপির। তবে আসন এবারও অধরা থেকে যায়। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এখানে তুরুপের তাস ছিলেন টলিউডের তারকা অভিনেত্রী নুসরত জাহান। নুসরতের জনপ্রিয়তা বসিরহাটে বাড়তি সুবিধা জুগিয়েছিল তৃণমূলকে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৭ লাখ ৮২ হাজার ভোট পেয়ে বসিরহাট থেকে সাংসদ হন নুসরত। এবার নুসরতের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু। তিনি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ভোট। কংগ্রেসের কাজি আব্দুর রহিম পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪ হাজার ভোট। আর ভোট রাজনীতিতে দুর্বল হতে হতে সিপিআই এবার নেমে আসে চতুর্থ স্থানে। জোটে ১ লাখেরও কম ভোট। সিপিআই প্রার্থী পল্লব সেনগুপ্ত উনিশের লোকসভা ভোটে পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ভোট।
ফের নির্বাচন, সামনে সন্দেশখালির মতো হাতে গরম ইস্যু
সামনে এবার আরও একটা নির্বাচন। বিজেপির হাতে রয়েছে সন্দেশখালির মতো হাতে গরম ইস্যু। কাজে লাগাতে পারবে বিজেপি? গত কয়েকটা লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে বসিরহাটে ক্রমেই নিজেদের শক্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। আবার একুশের বিধানসভা নির্বাচনের হিসেবে বসিরহাট লোকসভা অন্তর্গত সবকটি বিধানসভা কেন্দ্রেই বর্তমানে তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপট। এমন অবস্থায় সন্দেশখালির ইস্য়ুতে শান দিয়ে খেলা কি ঘোরাতে পারবে বিজেপি? সে দিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।
প্রার্থীদের নাম | ফলাফল | মোট ভোট | ভোট শতাংশ |
---|---|---|---|
Nusrat Jahan Ruhi তৃণমূল কংগ্রেস | Won | 782078 | 54.56 |
Sayantan Basu BJP | Lost | 431709 | 30.12 |
Quazi Abdur Rahim কংগ্রেস | Lost | 104183 | 7.27 |
Pallab Sengupta সি পি আই | Lost | 68316 | 4.77 |
Parimal Mistri আইএনডি | Lost | 10953 | 0.76 |
Nota NOTA | Lost | 9106 | 0.64 |
Abul Kashem Dhali বিএসপি | Lost | 4680 | 0.33 |
Subhasis Kumar Bhowmik আইএনডি | Lost | 4301 | 0.30 |
Amiya Sarkar আইএনডি | Lost | 4065 | 0.28 |
Jay Kumar Bain এস ইউ সি আই সি | Lost | 3824 | 0.27 |
Abdul Hannan Sardar আইএনডি | Lost | 3433 | 0.24 |
Md Tabarok Hossain Molla AILBP | Lost | 2707 | 0.19 |
Mizanoor Rahaman আইএনডি | Lost | 2375 | 0.17 |
Mamul Hasan Mallik BNARP | Lost | 1609 | 0.11 |
Phase | Date | State | Seat |
---|---|---|---|
1 | April 19, 2024 | 21 | 102 |
2 | April 26, 2024 | 13 | 89 |
3 | May 07, 2024 | 12 | 94 |
4 | May 13, 2024 | 10 | 96 |
5 | May 20, 2024 | 8 | 49 |
6 | May 25, 2024 | 7 | 57 |
7 | Jun 01, 2024 | 8 | 57 |