কলকাতা: তিনি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ (BJP MP)। অথচ একুশের কলকাতা পুরভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে এবং নির্দল প্রার্থী গৌরব বিশ্বাসের সমর্থনে প্রচার করেছিলেন রূপা গাঙ্গুলি (Roopa Ganguly)। জানিয়েছিলেন ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃতা কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের হয়ে তিনি লড়বেনই। আর রূপা বনাম বিজেপির এই লড়াইয়ে হাতছাড়া হল গেরুয়া শিবিরের হাতে থাকা ওয়ার্ডটি। তা ছিনিয়ে নিয়ে গেল ঘাসফুল শিবির। প্রথমবার নির্বাচনী যুদ্ধে জয়ের স্বাদ পেলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের পুত্র সৌরভ বসু (Sourav Bose)।
এবারের পুরভোটে দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজনীতিকদের তুলে ধরতে অনেক নেতা মন্ত্রীর সন্তানকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূল। সেই ধারাতেই ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিট পেয়েছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের ছেলে সৌরভ। তাঁর অন্যান্য নবীন সহযোদ্ধার মতো সৌরভও ছিনিয়ে আনলেন জয়। তাও আবার বিজেপির জেতা ওয়ার্ডে বিজয়ী হলেন তিনি। সবুজ আবির মাখিয়ে তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকরা।
একুশের পুরভোটে ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্যতম চর্চিত ওয়ার্ড দক্ষিণ কলকাতার এই ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড। গত নির্বাচনে এই ওয়ার্ডটি বিজেপির দখলে ছিল। একুশের পুরভোটে রাজ্য বিজেপি মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নেননি দলেরই রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গাঙ্গুলি। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুর পর সেই ওয়ার্ডে লড়ার টিকিট তাঁর স্বামী গৌরবকে না দেওয়ায় কার্যত রাজ্য বিজেপির মুণ্ডুপাত করেন রূপা। তাঁর দাবি, তিস্তা খুন হয়েছেন।
এর পর তিস্তার স্বামী নির্দল প্রার্থী গৌরবের হয়ে প্রচারে নামেন রূপা। বিজেপি সাংসদ বনাম রাজ্য বিজেপির এই চাপানউতরে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। ফলত আলাদা ভাবে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। মঙ্গলবার গণনা শেষে দেখা গেল, রূপার নির্দল প্রার্থী গৌরব বিশ্বাস নন, বিজেপি প্রার্থী রাজর্ষি লাহিড়িও নন, গেরুয়া শিবির থেকে এই আসন ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন তৃণমূলের নবীন যোদ্ধা সৌরভ বসু।
রূপার বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিস্তা। পুজোর সময় পূর্ব মেদিনীপুরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। তাই পুরভোটে ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর স্বামী গৌরবকে প্রার্থী করা হবে জল্পনা তৈরি হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেন দলের সাংসদ রূপা। জানান, তিনি থাকবেন তিস্তা ও তাঁর পরিবারের পাশে। এ নিয়ে পুরভোটের আগে বিতর্কিত ফেসবুক পোস্টও করেন। আবার গৌরবের সমর্থনে প্রচারে এসে জানান তিনি রাজ্য বিজেপির কেউ নন। এমনকি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব টাকার বিনিময়ে ভোটের টিকিট দিয়েছে বলে আরেক বিস্ফোরণ ঘটান তিনি।
আবার ১৯ তারিখ ভোটের দিনও ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিজেপি প্রার্থী আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। অবশেষে নির্দল ও বিজেপির ভোট কাটাকাটিতে শেষ হাসি হাসল তৃণমূল। জয়ী মন্ত্রী-তনয় সৌরভ বসু।