Reason of Congress’s Defeat in 3 States: ভাঙা রথ, অপ্রস্তুত সেনা, দুর্বল ‘হাতে’ একা কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন রাহুল?

Assembly Election Results: ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ছত্তীসগঢ়ের জয় নিয়েই সবথেকে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল কংগ্রেস। বিজেপি সেখানে কোনও মুখ ছাড়াই প্রচার চালাচ্ছিল। হারা নির্বাচন জিততে সবটুকু চেষ্টা করেছিল বিজেপি। 

Reason of Congress's Defeat in 3 States: ভাঙা রথ, অপ্রস্তুত সেনা, দুর্বল 'হাতে' একা কীভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন রাহুল?
রাহুল গান্ধী।Image Credit source: ANI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 06, 2023 | 8:06 AM

পাণিনি আনন্দ (গ্রুপ এডিটর(HSM), টিভি৯ ডিজিটাল)

রাজনীতি ও যুদ্ধে সাহসিকতার থেকেও বেশি জরুরি হল বুদ্ধিমত্তার। নাহলে বড় বড় যোদ্ধার অবস্থাও শেষ অবধি অভিমন্যুর মতো হবে। একদিন বা এক সময়ের জন্য সকলের সামনে উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও, রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য সাহসের পাশাপাশি জ্ঞান ও বিচারবোধের প্রয়োজন। কংগ্রেস (Congress) এখনও অবধি তাদের জ্ঞানের ‘কৃষ্ণ’কে খুঁজে পায়নি আর রাজনীতির নতুন যুদ্ধ প্রায় দোরগোড়ায় রয়েছে।

বিভাজিত হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। কেউ রাগে-ক্ষোভে দল ছাড়ছেন, কেউ আবার সুযোগ পেয়ে। শীর্ষ নেতৃত্বের প্রধান কাজই হল দল ছাড়ার এই রীতি আটকানো এবং যারা দল ছাড়তে চাইছে, তাঁদের সংঘবদ্ধ রাখা। অন্য কোনও যুদ্ধ লড়ার আগে কংগ্রেসকে নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব রুখতে হবে যাতে সাধারণ মানুষের তাঁদের উদ্দেশ্য ও ক্ষমতা নিয়ে কোনও সংশয় না থাকে।

কংগ্রেসের সংগঠনের এই ছন্নছাড়া অবস্থার কারণ হল শীর্ষ নেতৃত্ব বা গান্ধী পরিবারের কথার সঙ্গে রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস সরকার ও নেতাদের বক্তব্যের কোনও মিল নেই। রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে পাথেয় করে সমস্ত কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে লড়াইয়ের কোনও উদ্যোগও নেই কংগ্রেসের মধ্যে। যখন দলের ক্ষমতা বা প্রভাব থাকে, তখন দেখা যায় বিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ের বদলে নিজেদের মধ্য়েই বেশি লড়াই হচ্ছে। দলে নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব। এতে দলেরই ভাবমূর্তি খারাপ হয়।

রাহুল গান্ধী অবশ্যই একা মোদী ও সংঘের বিরুদ্ধে লড়ছেন। কিন্তু শুধু চিৎকার করে লড়াই জেতা যায় না। তাঁর সেনা বা রথ-কোনওটিই প্রস্তুত নেই। যোদ্ধাদের মধ্যে কোনও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নেই। সেই কারণেই যুদ্ধক্ষেত্রে এদের অস্তিত্বও ক্ষণস্থায়ী। গলা ফাটালেও, কোনও পরিবর্তন আসছে না। এই পরিস্থিতিতে জেতার জন্য তাড়াহুড়ো করার থেকে কংগ্রেসের অন্দরে পরিবর্তন আনা বেশি জরুরি। ভাঙা ঘর, গত শতকের মরচে ধরা স্লোগান ও দুর্বল সংগঠন কংগ্রেসের অস্থিরতাকে দূর করতে পারবে না।

রাজস্থানে হারের কারণ-

বিগত ৫ বছরে অশোক গেহলট রাজস্থানে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এমন অনেক কাজ করেছেন, যা দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ওনার কাজের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু, এই বিগত পাঁচ বছরে আমজনতা শুধুমাত্র পারিবারিক বিবাদ দেখেছে। ঠিক যেটা ২০১২ থেকে ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশে অখিলেশ সরকার থাকাকালীন দেখেছিল। কংগ্রেস নিজের সীমাবদ্ধতা ও বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে থাকলেও, শেষের দুই বছরে তাদের অবস্থান কিছুটা স্পষ্ট করতে পেরেছিল। কিন্তু অন্তর্দ্বন্দ্ব যেমন মেটাতে পারেনি, জনগণকে কোনও বার্তাও দিতে পারেনি।

যদি আপনি রাজস্থানকে অন্তর্দ্বন্দ্বে পুড়তে দেন এবং গোটা দেশকে একজোট করার কাজ শুরু করেন, তবে কেউ কেন আপনার জন্য জয় ছিনিয়ে আনবে? বিরোধীরা যত না কংগ্রেসকে দুর্বল করেছিল, তার থেকে অনেক বেশি বিগত ৫ বছরে সচিন পাইলট কংগ্রেসকে দুর্বল করেছেন। এখানে প্রশ্নটা সচিন পাইলটের উচ্চাকাক্ষ্মা বা অশোক গেহলটের জেদের নয়, বরং শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিরোধ জনগণের কাছে কী বার্তা দেয়, তা নিয়ে। এর ফলাফলও সকলের সামনে স্পষ্ট।

টিকিট বিতরণে ক্রমাগত দেরি, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই কথা- জয়পুরের আকাশে কালো মেঘ থেকে রক্ষা করতে দিল্লি ছাদ বা ছাতা- কোনওটাই দেয়নি। একা একজন ব্য়ক্তি কী করতে পারেন? রাজস্থানে ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে কংগ্রেস। রাজস্থানের মানুষও তাঁদের ভোটের রীতি বজায় রেখেছে।

মধ্য প্রদেশে হারের কারণ-

মধ্য প্রদেশ কংগ্রেসের জন্য শক্ত ঘাঁটি হতে পারে, এমন বলা মানুষের সংখ্যাটা কিন্তু কম ছিল না। যেভাবে শিবরাজ সিং চৌহানকে এককোণে করে দেওয়া হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীর মোদীর মুখে ভরসা করে নির্বাচন লড়া হয়েছিল, তাতে বিজেপিও জয় নিয়ে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু কংগ্রেসের অত্যাধিক আত্মবিশ্বাস বিজেপির এই অনিশ্চয়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। আর সেই অত্যাধিক আত্মবিশ্বাসেই ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। যেই মুখদের জনগণ প্রত্যাখান করেছিল, তাদেরই ক্ষমতায় আসা থেকে আটকেছে রাজ্যবাসী।

যে নেতাদের পরিণত ও প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়েছিল, তারাই অত্যাধিক আত্মবিশ্বাসে ডুবে ছিলেন। একাধিক মিটিং-মিছিলে একে অপরকে প্রশ্ন করতে বা চ্যালেঞ্জ করতেও দেখা গিয়েছিল তাদের। নিজেদেরই গ্যাং বানিয়ে নিয়ে তাঁরা প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এর বদলে কংগ্রেস যদি সংগঠনে নতুন মুখ আনত, তবে লাভ হত। গত নির্বাচনে ক্ষমতা হাতছাড়া করার পর নেতারা নিজেদের উপরে যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছিলেন, তা জেতা নির্বাচনে হেরে বন্ধ হয়েছে। অন্যদিকে শিবরাজ সিং নিজেকে ‘জাগলার’ প্রমাণ করেছেন, হারা নির্বাচনও জিতিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ছত্তীসগঢ়ে হারের কারণ-  

ছত্তীসগঢ়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন ভূপেশ বাঘেল। মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থাকাকালীন বাঘেল কংগ্রেসের থেকে এগিয়েই ছিল এবং বিজেপি-কেজরীবালের থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে নেতা হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। প্রচার ও কাজ- দুইয়ের মাধ্য়মেই ভাবমূর্তির উন্নতি করতে চেয়েছিলেন বাঘেল। কিন্তু নিজের ঘরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বাঘেলকে। দিল্লি থেকে বারংবার তলব এসেছে, আর ভূপেশও তাঁর ব্যাখ্যা দিতে হাজির হয়েছেন। আরও বেশি চিন্তার বিষয় হল, আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যে আদিবাসী ভোটই খুইয়েছে কংগ্রেস। দুনিয়ার কাছে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করলেও, ঘরেই যে নিজের ভিত আলগা হচ্ছে, তা খেয়ালই করেনি কংগ্রেস।

৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ছত্তীসগঢ়ের জয় নিয়েই সবথেকে বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল কংগ্রেস। বিজেপি সেখানে কোনও মুখ ছাড়াই প্রচার চালাচ্ছিল। হারা নির্বাচন জিততে সবটুকু চেষ্টা করেছিল বিজেপি।  অন্যদিকে, বাঘেলও কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহার নিয়ে সরব হলেও, তাঁর ‘ভিকটিম কার্ড’ নিজের ভোটারদের কাছেই ব্যর্থ হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের ফলাফল কংগ্রেসকে চরম হতাশ করেছে আর সেই নিরাশার জঙ্গলেই পদ্ম ফুটিয়েছে বিজেপি।

নির্বাচনের আবহেই কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোট গড়েছিল। কিন্তু কোথায় সেই ইন্ডিয়া? কোনও নির্বাচনে বা বিবৃতিতে ইন্ডিয়ার উল্লেখ নেই। দূরদূরান্তেও একতার কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। আসন ভাগাভাগি থেকে ভোট, সব ইস্যুতেই মাটির পুতুল হয়ে বসেছিল ইন্ডিয়া জোট। এই বিধানসভা নির্বাচনের পর বিরোধী জোটের অন্দরে নতুন করে বিরোধ শুরু হবে।

বিরোধীদের মধ্য়ে একতা নয়, কংগ্রেসের প্রয়োজন দলের অন্দরে একতা। বিরোধীদের সহযোগিতার বদলে দলের নেতাদের সহযোগিতা ও মিলেমিশে থাকা বেশি জরুরি। কংগ্রেসের সংগঠন গোড়া থেকে মজবুত হওয়া প্রয়োজন। অন্য়ের দয়া না নিয়ে, কংগ্রেসের উচিত সব আসনে সর্ব শক্তি নিয়ে লড়াই করা। হিমাচল থেকে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাট-সর্বত্রই কংগ্রেস একই গল্প। অন্য় দলগুলিও যে এই দোষে দুষ্ট নয়, তা নয়। কিন্তু কংগ্রেসের এই অন্তর্দ্বন্দ্বকে হজম করার মতো পরিস্থিতি নেই। এখানেই সূচনা ও জয়ের তফাত।