শিলিগুড়ি: ভোট চতুর্থীতে শিলিগুড়ির পর কৃষ্ণনগরে মোদীর (Narendra Modi) প্রচার। শিলিগুড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেন তিনি। কোচবিহার নিয়েও প্রথম প্রতিক্রিয়া মোদীর। তিনি বলেন, “কোচবিহারে যা হয়েছে তা দুঃখজনক। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে আমি তা নিয়ে শোক প্রকাশ করছি। পরিবারকে সমবেদনা।” পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘তোলাবাজিকে’ চরম কটাক্ষ করতে গিয়ে ‘চোরের মা’ গল্প শোনালেন মোদী। এছাড়াও তাঁর আশ্বাস, বিজেপি এলে কোনও কাটমানি ছাড়াই কাজ হবে। পর্যটন শিল্প ও আইটি ক্ষেত্রে উন্নতি নিয়েও শিলিগুড়িবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
জমিতে যারা অবৈধ দখল নিয়েছেন, সকলের ফাইল খুলবে। যাঁরা আপনাদের লুটেছেন তাঁদের সাজা পাওয়া দরকার কি না বলুন? দিদির দুর্নীতি নবদ্বীপকেও বরবাদ করেছে। বাংলার বিজেপি সরকার এখানে রেলপথের উন্নতি করবে। এখানে সব উন্নতি আপনাদের এক ভোটের শক্তি দিয়েই হবে। কার্যকর্তাদের বলছি, আমরা প্রত্যেক বুথে পদ্ম ফোটাব। মনে রাখুন, এ বার কমল ছাপ, তৃণমূল সাফ। ভারত মাতা কি জয়। বন্দেমাতরম: মোদী
দিদির দুর্নীতি কৃষকদের কোমর ভেঙেছে। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার সিন্ডিকেট ভাঙবে। বিজেপি সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই পিএম কিসান সম্মান নিধির ১৮ হাজার টাকা প্রত্যেক কৃষকের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। হাসপাতালগুলিকে বলছি প্রস্তুত করে নাও, আয়ুষ্মান ভারত চালু হতে চলেছে বাংলায়: মোদী
মাটির কথা বলা দিদি মাটির শিল্পকে মাটিতে মিশিয়েছেন। এখানে জাতীয়-আন্তর্জাতিক বাজারের সুবিধা বানাবে বিজেপি: মোদী
“বোনেদের সব জায়গায় কাজ করার অধিকার বিজেপি দিয়েছে। বিজেপি গর্ব করে বলে বিগত বছরে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ভারতে হয়েছে। কিন্তু দিদির দুর্নীতির জন্য এর লাভ বাংলা পায়নি। শিল্প-উন্নতি-চাকরি এসব তৃণমূল বোঝেই না। বরং তারা ছাপ্পা ভোটে এক্সপার্ট।”
“যে মুসলিম বোনেরা দিদিকে এত ভালবাসা দিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গেই দিদি অন্যায় করেছেন। বিজেপি সরকার তিন তালাক বিল এনেছিল। দিদি বিরোধ করেছিলেন। এখন যখন তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, দিদি কট্টরপন্থীদের সমর্থনে যান। ভোটব্যাঙ্কের কথা ভাবেন”
“দিদিকে পশ্চিমবঙ্গের সকল মা-বোনেরা অনেক সাহায্য করেছিল। কিন্তু এখন তাঁদের সন্তান-স্বামীদের প্রাণ হারাতে হচ্ছে. তাঁরা রক্তকান্না কাঁদছেন।”
দিদি ভাইপোর জন্য বড়বড় স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু বাংলার মানুষ সব বুঝে গিয়েছে। দিদিকে প্রথম দফা থেকেই হারাতে শুরু করে দিয়েছে। হার নিশ্চিত দেখে দিদি বাংলার বাইরের রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বারাণসী এমনি এমনি বলছেন না। নির্বাচনের পর ভাইপো তৃণমূলের খেলা খেলবে। এ জন্য বাংলার লোকজন ঠিক করে নিয়েছে খেলা শেষ হবে: মোদী
“এই নির্বাচনে বাংলার জনতা বিজেপির থেকে ১০ পা এগিয়ে আপনাকে হারানোর জন্য এগিয়ে এসেছে। আদরনীয় দিদি আপনি বিজেপিকে হারানোর চেষ্টা তো করতে পারেন কিন্তু বাংলার জনতাকে কী করে হারাবেন? সাতজন্মেও আপনি বাংলার জনতাকে হারাতে পারবেন না”
“প্রত্যেক দিন আসল পরিবর্তনের ঢেউ বোনেদের চোখে দেখতে পাচ্ছি। তরুণদের উৎসাহে দেখতে পাচ্ছি। জনতার সামনে কারোর অহংকার চলবে না। কিন্তু দিদি এটা বুঝতেই পারেন না। এখন দিদি নির্বাচন কমিশনকে কটুক্তি করছে। এখন দিদি ইভিএমকে কটুক্তি করছে। দিদি এখন তাঁর দলের পোলিং এজেন্টদেরও কটুক্তি করছেন। দিদি এতটা হতাশ হয়ে গিয়েছেন যে বাংলার ভোটারদের বদনাম করছেন।”
আসল পরিবর্তনের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এই মহাযজ্ঞ তোষণকারী, তোলাবাজদের শাস্তি দেবে। এখন বাংলায় উন্নতির ডবল ইঞ্জিন চলবে। সোনার বাংলার সংকল্প সম্পূর্ণ হবে। এই পবিত্র ভূমি মাফিয়াদের কাছ থেকে মুক্তি পাবে। বিজেপি সরকার বাংলাকে নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ দেবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রশাসন নেবে, তোলাবাজরা নয়: মোদী
কৃষ্ণনগরে মঞ্চে উঠেই মোদী বলেন, “জয় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, জয় নিতাই, মহাপ্রভুর এই ভূমিকে প্রণাম। হরে কৃষ্ণ”
মোদী বলেন, “ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের সাথে আছি, সাথে থাকব, নতুন বছরে নতুন বাংলার উদয় হবে। নতুন প্রজন্ম নতুন বাংলাকে উজ্জ্বলিত করবে। কমল ছাপ তৃণমূল সাফ। ভারত মাতা কি জয়। ভারত মাতা কি জয়।”
“বাংলার এই জায়গা প্রথম যাঁরা বিজেপির ওপর ভরসা রেখেছিলেন। আপনাদের জন্য বিজেপি কাজ করবে। সংকল্প পত্রে যে কথা বলা হয়েছে তা সব পালন করা হবে। শিলিগুড়িতে আইটি ক্ষেত্রের বিকাশ হোক তার জন্য বিজেপি সরকার কাজ করবে। পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। টুরিজ়ম ও কানেকটিভিটির উন্নতি হবে।”
মোদী বলেন, “দু’দিন আগে জলপাইগুড়ির এক চা-কর্মী বোনের কথা আমি পড়ছিলাম। সাংবাদিকদের তিনি অসুবিধার কথা বলছিলেন। আমি বলছি, বিজেপি সরকার আপনাদের জন্য দিনরাত কাজ করবে। অসমে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার ঘর হাসপাতাল, স্কুল সব দিয়েছে। বাংলায় বিজেপি সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই আপনাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু হবে। পিএম কিসান সম্মান নিধির ১৮ হাজার টাকা দ্রুত আপনাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই তার সঙ্গে আয়ুষ্মান ভারত চালু করা হবে।”
‘চোরের মা’-এর গল্প শোনালেন মোদী। তৃণমূল সরকারের ‘তোলাবাজি’কে কটাক্ষ করতে গিয়ে মোদী জানান, দিদি বলছেন ২০০-৫০০ ই তো কাটমানি নিচ্ছে। আমি ছোটবেলার একটা গল্পের কথা বলছি। সেখানে এক চোরের ফাঁসি হওয়ার আগে সে তাঁর মায়ের নাক কেটে নিয়েছিল। আর বলেছিল, “তুমি যদি আমায় ছোট ছোট চুরির সময় আটকাতে তাহলে আজ আমার ফাঁসি হত না।” দিদিও সেই একই রকমের কথা বলছেন।
“আমরা শৌচালয় বানিয়ে দিয়েছি। উজ্জলা গ্যাস কানেকশন দিয়েছি। কিন্তু দিদির তোলাবাজরা সেখানেও লুঠ করা শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি এলে কাটমানি ছাড়াও সব সুবিধা পাবেন।”
“দিদি বলে আপনারা টাকার জন্য আসেন। আপনারা কি টাকার লোভে এসেছেন? এসব বলে আপনাদের আত্মসম্মানে আঘাত করেছেন কি না? মমতা দিদি সবাই আপানার তোলাবাজদের মতো হয় না। এরা কষ্ট করে নিজেদের রোজগারে খাবার খান, তবু আত্মসম্মান ভোলেন না।”
দিদি কোনও সুবিধা দেননি। কেন্দ্র লকডাউনে যে চাল পাঠিয়েছিল, সেটাও তৃণমূল লুটে নিয়েছে। আমি যে চাল পাঠিয়েছিলাম, তাতেও কাট কোম্পানি এসে গিয়েছিল: মোদী
এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর শেখাচ্ছেন কীভাবে নিরাপত্তাকর্মীদের ঘেরাও করে বুথে হামলা করতে হয়: মোদী
“হার দেখে দিদি আমার ওপর রেগে যাচ্ছেন। পঞ্চায়েতের মতো ছাপ্পা ভোট করতে না পেরে দিদি নারাজ। ১০ বছর কী করেছেন তা তো বলতে পারেন না। যেখানে যান, স্রেফ মোদীকে কটুক্তি করেন। ভাইপোর কাজের হিসেব দিতে হবে তো না কি? কিন্তু হিসেব দেয় কি? স্রেফ কটুক্তি করে।”
“দিদি এত অহঙ্কার? এমন ভাবনা, তফসিলি ভাই বোনেদের আপনি আপনার পার্টি, আপনার নেতার কেন এত ঘৃণা? এটাই দিদির আসল চেহারা। উনি তফসিলিদের ওপর রেগে আছেন, কারণ তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন।”
“দিদি লিখে রাখুন বাংলার মানুষ এখানেই থাকবেন। যেতে হলে আপনাকে সরকার থেকে যেতে হবে। দিদি-ও-দিদি, আপনি বাংলার ভাগ্যবিধাতা নয়।”
“সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো দেখলাম দিদির পর্যটনমন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন। বিজেপিকে ভোট দিলে ছুড়ে ফেলে দেবেন বলছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েও কি গণতন্ত্রে এ কথা বলতে পারি? কিন্তু দিদির মন্ত্রী ক্যামেরার সামনে এ কথা বলছে।”
“দিদি আর তৃণমূলের মনের মতো বাংলা চলবে না। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে কোচবিহারের ঘটনার তদন্ত দাবি করছি। দিদি এই হিংসা, সকলকে উস্কানি, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার এই কাজ আপনাকে বাঁচাতে পারবে না।” কার্যত কোচবিহারে হিংসার ঘটনায় মমতাকেই কাঠগড়ায় তুুললেন মোদী।
“কোচবিহারে যা হয়েছে তা দুঃখজনক। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে আমি তা নিয়ে শোক প্রকাশ করছি। পরিবারকে সমবেদনা।”