‘মাস্ক পরলে চিনতেই পারছে না’, করোনাবিধি শিকেয় তুলে আজব দাবি প্রার্থীদের

উত্তরবঙ্গে কয়েকজন মানুষের মধ্যে করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়েছে, এদিকে জলপাইগুড়ি শহরে একুশের বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021) প্রচারে বেরনো প্রার্থীদের ব্যাখ্যা, "মাস্ক পরলে মানুষ আমাকে চিনতে পারছে না। তাই মাস্ক খুলে প্রচারে নেমেছি।''

'মাস্ক পরলে চিনতেই পারছে না', করোনাবিধি শিকেয় তুলে আজব দাবি প্রার্থীদের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 21, 2021 | 4:56 PM

জলপাইগুড়ি: এ বলে আমায় দ্যাখ তো ও বলে আমায়। দেখাটাই বড় কথা। নাহলে মানুষ চিনবেন কী করে! আর ভোটই বা দেবেন কাকে। তাই মাস্কবিহীন মুখে প্রচারে ঝড় তুলছেন ডান-বাম প্রার্থীরা। শিকেয় উঠেছে করোনা স্বাস্থ্যবিধি। প্রার্থীদের এই রবিবাসরীয় প্রচার দেখলে  কারও মনে প্রশ্ন উঁকি দিতেই পারে, করোনা কি বিদায় নিয়েছে? অন্তত জলপাইগুড়িতে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী প্রচার চাক্ষুষ করলে এমনটাই মনে হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলিই নয়। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা বেশিরভাগ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। আর এতেই আতঙ্কিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মুষ্টিমেয় মানুষজন।

জলপাইগুড়ি শহরে একুশের বিধানসভা ভোটে (West Bengal Assembly Election 2021) প্রচারে বেরনো প্রার্থীদের ব্যাখ্যা, “মাস্ক পরলে মানুষ আমাকে চিনতে পারছে না। তাই মাস্ক খুলে প্রচারে নেমেছি।” রবিবাসরীয় প্রচারে নেমে ঝড় তুললেন জলপাইগুড়ি বিধান‌সভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌজিত সিংহ। এদিন সকালে জলপাইগুড়ি‌র দিনবাজারের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।

এমনিতেই তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের একাংশই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। দলের অন্দরের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ অনেকটা কাটিয়ে রবিবাসরীয় প্রচারে নামেন জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) প্রার্থী সৌজিত সিংহ। পেশায় আইনজীবী এই বিজেপি প্রার্থী রবিবার সকালে দলীয় কর্মীদের নিয়ে জলপাইগুড়ি দিন বাজারে প্রচারে বের হন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে পরিচয় পর্ব সেরে নেওয়ার পাশাপাশি বিজেপি‌-কে ভোট দেওয়ার জন্য সকলের কাছে আবেদন করেন তিনি। সবই হয়েছে, শুধু মাস্ক দেখা যায়নি কারও মুখে। এ নিয়ে কী বলছেন বিজেপি প্রার্থী নিজে? সৌজিত সিংহের যুক্তি, “একথা ঠিক যে বিভিন্ন রাজ্যে করোনা আবার বাড়ছে। তাই কোভিড বিধি মেনে চলা উচিৎ। মুখে অবশ্যই মাস্ক পরা উচিৎ। কিন্তু মাস্ক পরলে মানুষ আমাকে চিনতে পারছে না। তাই সাময়িক ভাবে মাস্ক খুলে রেখেছি।”

রবিবাসরীয় প্রচারে পিছিয়ে ছিল না তৃণমূল (TMC)। যুব তৃণমূল নেতা কর্মীদের নিয়ে রবিবার সকালে প্রচারে নামেন জলপাইগুড়িতে সদর বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রদীপ কুমার বর্মা। রবিবার শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকার সঙ্গে সঙ্গে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনেও প্ৰচার করেন তিনি। দোকানদার ও বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।পরিচয়পর্ব সেরে তাঁদের কাছে ভোটও চাইলেন। তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী‌রা যখন শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে ঝড় তুলছেন তখন গ্রাম‍্য এলাকায় জোরদার প্রচার চালাতে দেখা গেল রাজগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রতন রায়কে। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী রতন রায় রবিবার প্রচার চালালেন জলপাইগুড়ি শহরের পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর এলাকায়।

তবে বাম কিংবা ডান, কোনও রাজনৈতিক দলকেই এদিন কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ নেতা ও কর্মীদের মুখে মাস্ক তো ছিলই না, এমনকি সামাজিক দুরত্ব পর্যন্ত মানতে দেখা যায়নি তাঁদের কাউকে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মকবুল হোসেন নামে এক তৃণমূল নেতা বলেন, “আমরা চাইনা করোনা আবার ভয়াবহ রুপ ধারন করুক। কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই সবাইকে মানতে হবে। আমরা এরপর থেকে অবশ্যই সব নিয়ম মেনে চলব।”

আরও পড়ুন: বাংলায় ভোটে কি প্রার্থী মিঠুন? জল্পনা উস্কে নাম উঠল কলকাতার ভোটার তালিকায়

আবার মাস্ক না পরা নিয়ে জলপাইগুড়ি দিন বাজারে রানা দাস নামে এক ব্যবসায়ী জানালেন, “মাস্ক এখন কেউ পরেনা। সবাই পরলে আমিও পরব।” বিপ্লব দাস নামে এক সচেতন নাগরিকের কথায়, “করোনা শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলছি। কিন্তু এখন অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরছেনা। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। আর এতেই আমাদের বিপদ বাড়বে।” এ নিয়ে করোনা বিষয়ক উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাক্তার সুশান্ত রায় টেলিফোনে জানান, “উত্তরবঙ্গে কয়েকজন মানুষের মধ্যে করোনার নতুন স্ট্রেইন ধরা পড়েছে। এই স্টেইন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিপদ বাড়বে। তাই আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করে যাচ্ছি। কিন্তু বড় অংশের মানুষ কথা শুনছে না। এতে বিপদ বাড়তে পারে।” বিধায়ক পদপ্রার্থীরা সেই বার্তা শুনছেন তো?