বেশি বয়সি দাদার বিয়ে দিলেন অপরাজিতা আঢ্য, সবটা জানলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে শতগুণ…
Aparajita Adhya: বন্ধুমহলে সকলেই বলেন, অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য নাকি লাভগুরু। অনেকের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি নাকি দেখেই বলে দিতে পারেন কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে। এবার নিজের দাদার বিয়েটাও দিয়ে দিলেন দায়িত্ব নিয়ে। পুরো ঘটনা জানলে অভিনেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বাড়বে।
লোকে বলে, তিনি নাকি লাভগুরু। অনেকের ঘটকালি করেছেন। এবার নিজের দাদার বিয়ে দিলেন অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য। সহজ-সরল ছেলেকে কে বিয়ে দেবেন, কে বিয়ে করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেন অভিনেত্রীর মা। মনে-মনে একজন পাত্রীও ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেননি। ছেলের বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দিতে পারেননি। তার আগেই তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে গিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষ একা বাঁচতে পারে না। একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। মায়ের সেই অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ করলেন অপরাজিতা। দাদার বিয়ে দিলেন মায়ের সেই পছন্দ করা পাত্রীর সঙ্গেই। ফেসবুকে মাকে খোলা চিঠি লিখেছেন অপরাজিতা। সঙ্গে শেয়ার করেছেন দাদার বিয়ের বেশকিছু ছবিও। মন ভাল হয়ে যাবে…
অপরাজিতা তাঁর পোস্টে লিখেছেন:
“মা এটা তোমার গল্প। যতদিন বেঁচেছ কোনওদিন ভাল করে, আরাম করে বাঁচতে পারনি। সবসময় ভয় তাড়া করত তোমায়। তোমার ছেলের কী হবে, তোমার ছেলে আর পাঁচজন মানুষের মতো স্বাভাবিক নয়। অত্যন্ত সরল আর সব ছেলের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। কী হবে তোমার ছেলেটার। যদিও তোমার মেয়ে আছে, সে সব দায়িত্ব-কর্তব্য করতে পারে। কিন্তু তবুও তোমার কোথায় একটা ভয়, কোথায় একটা শঙ্কা, একটা অবিশ্বাস কাজ করত। তুমি না থাকলে ছেলে কী করে বাঁচবে। ছেলে কী করে থাকবে। তুমি কখনও একা থাকাতে বিশ্বাসী ছিলে না। তুমি অসম্ভব বিয়েতে বিশ্বাসী ছিলে। তুমি সব সময়ে মনে করতে একা বাঁচা যায় না। যদিও আমরা সকলে পৃথিবীতে একাই আসি আর একাই যাই। তবু এই পৃথিবীলোকে বাঁচার জন্য বোধহয় একজন সঙ্গীর খুব দরকার। তুমি সারাক্ষণ সবাইকে বলতে, আমার ছেলের কী করে বিয়ে হবে। আমার ছেলেকে কে বিয়ে করবে। আমার ছেলেকে কে বিয়ে দেবে। তোমার পছন্দ করা পাত্রী রানীদিদি। কিন্তু সেই সময় রানীদিদির সঙ্গে বিয়ে দেওয়াটা সম্ভব হয়নি। আসলে সময়ের আগে কিছুই হয় না। সেটা তুমিও জানতে, কিন্তু মানতে না। মনে-মনে কোথাও অসম্ভব চেয়েছিলে যে, এই পাত্রীর সঙ্গেই তোমার ছেলের বিয়ে হোক।
পৃথিবীলোকের এটাই মজা! কেউ যদি সত্যি মন থেকে কিছু চায়, তা হলে মৃত্যুর পরেও সেটা সত্যি হয়। আজকে তো তুমি শরীর নামক খাঁচায় বাঁধা নেই। সারা বিশ্বে, সারা অন্তরীক্ষে, সর্বত্র তুমি বিরাজমান। তুমি পরমাত্মার সঙ্গে লীন হয়ে গেছ। এবং আজকে তুমি দেখছ, তোমার মৃত্যুর এক বছর ৮ মাস পর তোমার ছেলে বিবাহিত। তুমি আজকে হয়তো আনন্দে আনন্দলোকে লীন হয়ে গেছ। আজ বোধহয় তুমি সবচেয়ে বেশি শান্তি পেয়েছ–তোমার ছেলে বিবাহিত এবং তোমার পছন্দ করা পাত্রী তোমার পুত্রবধূ। আর আমার শান্তি, আমি আমার সবটুকু দায়িত্ব যা-যা তোমাকে বলেছিলাম, সবটা পালন করতে পারলাম। এখনও অনেক পথ বাকি। আমি আছি মা। আমি থাকব। ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার গন্তব্যে, তোমার আগামী জন্মের যাত্রী হতে পারো। প্রণাম নিও মা। আজ তুমিও যতটা খুশি, তোমার ছেলেও ততটাই খুশি। আজকে সত্যি-সত্যি আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। তুমি একটা কথা সবসময় বলতে, better late the never। আজ সেটাই প্রমাণ হল। আর এটাও প্রমাণ হল, তুমি যতই চাও সময়ের আগে কিছু হয় না।”