নকশি কাঁথায় অন্য স্বপ্ন সেলাই

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস

Aug 15, 2021 | 8:56 AM

একসময়ে দুই বাংলার মহিলাদের দুপুর কেটে যেত কাঁথার এফোঁড় ওফোঁড় সেলাইয়ে। আজও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে সেই রেওয়াজ বর্তমান। বাংলার নিজস্ব কাঁথার চাহিদা এখনও সারা দুনিয়া জুড়ে।

নকশি কাঁথায় অন্য স্বপ্ন সেলাই

Follow Us

নন্দন পাল

এখন আমরা যে সার্কুলার ইকোনমি (Circular Economy) বা জিরো ওয়েস্টের (Zero Waste) কথা বলি, গ্রামবাংলার শতাব্দী প্রাচীন নকশি কাঁথা সেই সার্কুলার ইকোনমির অভ্যাসকে দীর্ঘদিন ধরেই লালন পালন করে আসছে। পুরানো পরিধেয় কাপড় বা অল্প ছিঁড়ে যাওয়া শাড়িকে কাঁথার রূপ দিয়ে আবার নবীকরণ (Recycle) করার রেওয়াজ দুই বাংলার ফোক আর্ট (Folk Art) বা লোকশিল্প হিসাবে স্বতন্ত্র স্বাক্ষর। শীতের কাঁথা তৈরি হয় টিপটিপ বৃষ্টি ধোয়া বর্ষার সময় থেকেই। বর্তমানে ড্রেস মেটেরিয়াল হিসাবে শাড়ি বা জ্যাকেটে কাঁথার সেলাই (Kantha Stitch) বেশ জনপ্রিয় এবং তার বাজারও বেশ সম্ভ্রান্ত।

একসময়ে দুই বাংলার মহিলাদের দুপুর কেটে যেত কাঁথার এফোঁড় ওফোঁড় সেলাইয়ে। আজও গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে সেই রেওয়াজ বর্তমান। বাংলার নিজস্ব কাঁথার চাহিদা এখনও সারা দুনিয়া জুড়ে। ইউরোপ, আমেরিকা আর আফ্রিকাতে ব্যাপক চাহিদা বাংলার কাঁথার। সেই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু প্রান্তিক মানুষ ও অতিমারীর লক ডাউনে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের নিয়ে বাংলার নকশি কাঁথাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নিলেন পেশায় শিক্ষক পিনাকী গুহ খাসনবিস। তাঁর কিছু সহকর্মীর আত্মীয় কাঁথা তৈরি করে থাকেন। সেখান থেকেই প্রথম নকশি কাঁথা তৈরির ভাবনা মাথায় আসে পিনাকীর। তারপর অতিমারীর লক ডাউনে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এবং যারা প্রান্তিক মানুষজন তাঁদের একজোট করে নকশি কাঁথার বিপণনের পরিকল্পনা করেন এই শিক্ষক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পিনাকী আবেদন করেন যারা এই কাঁথাগুলি কিনতে আগ্রহী তাঁরা যেন অগ্রিম টাকা জমা দেন। বাকি টাকা কাঁথা হাতে পাবার সময় দিতে হবে। অর্ডার আসা শুরু হয়। আর সেই টাকায় নতুন শাড়ি আর ধুতি কিনে পিনাকী পৌঁছে দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা , উত্তর ২৪ পরগনা , বাঁকুড়া সহ বাংলার অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে থাকা কাঁথা শিল্পীদের কাছে। নকশা আঁকা শুরু করে পিনাকীর ছাত্ররা। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু আর এখন অবসর সময়কে ব্যবহার করে কিছু মানুষ বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পাচ্ছেন। গ্রামের প্রান্তিক মহিলারা পাচ্ছেন স্বনির্ভরতার আস্বাদ।

গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের প্রতিভা এখন ছড়িয়ে পড়েছে শুধু রাজ্যে বা দেশেই নয় দেশের বাইরেও। সুদূর নাইজেরিয়া আর মার্কিন মুলুকেও পাড়ি দিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা ছোট নাগপুর মালভূমির মহিলাদের তৈরি কাঁথা। শুধুমাত্র সমাজের প্রান্তিক মানুষদের তৈরি বলেই নয় কাঁথা গুলো মানুষকে আকর্ষণ করছে তাদের স্বতন্ত্র রঙ বাহারি নকশার কারণেই। আর পিনাকী বলছেন, “এই কাজে আমার কোনও কৃতিত্ব নেই, বাংলার শিল্পীদের তৈরি অসাধারন সব শিল্পকর্ম গুলো আমি কেবল পৌঁছে দিচ্ছি মানুষের কাছে ,আমি বাহক মাত্র।”

আরও পড়ুন: Indian Idol: সৃষ্টি হবে ইতিহাস, ১২ ঘণ্টা ধরে চলবে ফিনালে, কী কী চমক থাকছে?

Next Article