Lata Mangeshkar: “গান গাওয়া আমি কখনও থামাব না। যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব, আমার সঙ্গেই বিদায় নেবে সঙ্গীতও’’

‘আমরা আগে যে ধরনের কাজ করতাম তার সঙ্গে এখনকার কাজের কোনও তুলনা চলে না। বর্তমানের কাজ তেমন ভালো নয়।’ সেইসঙ্গে তিনি একটু বিশ্রামেরও দাবি করেছেন,— ‘অনেক হয়েছে গান! যথেষ্ট কাজ করেছি।’

Lata Mangeshkar: গান গাওয়া আমি কখনও থামাব না। যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব, আমার সঙ্গেই বিদায় নেবে সঙ্গীতও’'
কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 06, 2022 | 9:50 PM

ভারতের সবচাইতে জনপ্রিয় এবং প্লেব্যাক সঙ্গীত শিল্পী লতা ৯২ বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন। কেন তিনি গান গাইতেন? কোন ধরনের গান ছিল তাঁর নিজের পছন্দের? গান ছাড়া আর কী কী জানতেন লতা? কেমন ছিল তাঁর সঙ্গে বোন আশার সম্পর্ক?

অনেকেই হয়তো জানেন না, লতা মঙ্গেশকরের ফটোগ্রাফির শখ ছিল। ফটোগ্রাফি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান অনেকেরই বিস্ময়ের কারণ ছিল। বহু প্রিয় ফটোগ্রাফারের সঙ্গে দেখা হলে ফ্ল্যাশ এবং অ্যাপার্চার ফটোগ্রাফি নিয়ে আলোচনা করে কাটিয়ে দিতেন অনেকখানি সময়। এমনকী দরকার পড়লে জেনেও নিতেন ক্যামেরার টুকটাক নিয়মকানুনও। গানের অন্তর্নিহিত বক্তব্য নিয়ে ভাবতেন লতা। গানের কথা ভাবিয়ে তুলত তাঁকে। তবে সবার আগে ভাবতেন মানুষের কথা। লতা মঙ্গেশকরের বয়স তখন প্রায় আশি। সেই বয়সেও নিজের কণ্ঠ নয়, ভরসা রাখতেন মানুষের উপর। এতটাই বিনয়ী ছিলেন লতা। পরিচিত এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে আলোচনার পর জানিয়েছিলেন, তিনি করতে চলেছেন নতুন অ্যালবাম ‘সাদগি’। সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ময়ূরেশ পাই-এর সঙ্গে কাজ করেছিলেন লতা। টি –সিরিজ সংস্থা ছিল সেই অ্যালবামের পরিবেশক। মোট আটটি গান ছিল সেই অ্যালবামে। কয়েকটি রোমান্টিক, কিছু বিষাদের, কিছু দর্শনের।

বোনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন মন খুলে। জানিয়েছেন, লোকে বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে গুজব ছড়ায়। বাস্তবে তাঁর সঙ্গে আশার কোনও প্রতিযোগিতাই নেই। তাঁরা পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকেন। এমনকী পাশাপাশি ফ্ল্যাটে একটি দরজা খুললেই একে অপরকে দেখা যায়!

যে সময়ে লতা ব্যক্তিগত অ্যালবাম প্রকাশ করছিলেন, ততদিনে গানের জগতে বিস্তর পরিবর্তন চলে এসেছিল। ইন্টারনেটে গান শোনার রেওয়াজ ততদিনে শুরু হয়ে গিয়েছে। সেসব নিয়ে লতা খুব একটা বিচলিত ছিলেন না। তাঁর মতে, তাই বলে শিল্পী তাঁর কাজ করা থামিয়ে রাখতে পারে না। পাইরেসি আছে বলে কি ফিল্মেও গান দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে?

বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি লতা বীতশ্রদ্ধ ছিলেন? না হলে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছিলেন কেন? এই প্রসঙ্গে তিনি অকপট— ‘আমরা আগে যে ধরনের কাজ করতাম তার সঙ্গে এখনকার কাজের কোনও তুলনা চলে না। বর্তমানের কাজ তেমন ভালো নয়।’ সেইসঙ্গে তিনি একটু বিশ্রামেরও দাবি করেছেন,— ‘অনেক হয়েছে গান! যথেষ্ট কাজ করেছি।’

আর মানুষের যে তাঁর গান শুনে আশ মেটে না? তার বেলা? এই প্রসঙ্গে লতা জানিয়েছিলেন, ‘সেই জন্যই তো আমি ইয়াশজি, এআর রহমানের সঙ্গে কিছু কাজ করেছি। তবে এখন থেকে আমি গান করবে আমার আমরা অনুভব থেকে। আমার মর্জি হলে তবেই গান করব।’

সাধারণ মানুষ তাঁকে সুর সম্রাজ্ঞী বলতেন। আর নিজেকে গায়িকা হিসেবে কতখানি উচ্চস্তরের ভাবতেন লতা মঙ্গেশকর? যখনই তাঁকে এই প্রশ্ন করা হতো, তখনই বোঝা যেত একজন মানুষ হিসেবে, একজন শিল্পী হিসেবে তিনি ঠিক কতখানি বিনয়ী ছিলেন— ‘আমার মনে হয় না, আমি তেমন বড় মাপের গায়িকা। আমার নিজের পুরনো মরাঠি গান আর উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শুনতে বেশি ভালো লাগে।’ এখানেই শেষ নয়। তিনি বরং তাঁর তুলনায় নবীনদেরই গায়কীর প্রশংসা করতেন। বারবার তাঁর মুখে শোনা যেত সোনু নিগম, উদিত নারায়ণ, অলকা ইয়াগনিক, সুনীধি চৌহান, শ্রেয়া ঘোষালের কথা।

কিন্তু লতার তুলনা কোন সঙ্গীত শিল্পী? এই প্রশ্নে স্মিত হেসে লতা জানিয়েছিলেন— ‘আমি খুব সাধারণ গায়িকা। তবে গান গাওয়া আমি কখনও থামাবো না। যখন আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব, আমার সঙ্গেই আমার সঙ্গীতও বিদায় নেবে।’ সত্যিই তাই, এ কেমন বসন্ত এল এদেশে? যখন আর কোকিলের কণ্ঠই বিদায় নিয়েছে অন্য দেশে, যে দেশ থেকে আর ফেরা যায় না!

তথ্য সৌজন্যে টাইমস অফ ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন:  Lata Mangeshkar: সাদা শাড়ি ও হিরের গয়না কেন পছন্দ, অকপটে জানিয়েছিলেন সুরের রাণী