এমনটা যে হতে পারে তা গত জানুয়ারিতেও ভাবতে পারেননি তিনি। ভারতে এসেছিলেন এই জানুয়ারিতেই। ইচ্ছে ছিল দেশ ঘুরে দেখবেন। উঠেছিলেন মুম্বইতে। এর মধ্যেই তাঁর দেশে লাগল যুদ্ধ। আর ‘উলুখাগড়া’ মেয়েটির ভারত ভ্রমণের উচ্ছ্বাস ম্লান করে দিন ‘রাজার দল’।
সাবরিনা, পেশায় সে মডেল, বাড়ি ইউক্রেনে। আজ তাঁর দু’চোখ জুড়ে শুধুই শূন্যতা। কী হবে পরিবারের, কেমন আছেন তাঁরা। আদৌ ভবিষ্যতে দেখা হবে তো তাঁদের সঙ্গে… এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় তাঁর হৃদয়। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে বেশ কিছুটা দূরে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী এলাকা খেরসনেই সাবরিনার বেড়ে ওঠা। এই যুদ্ধ তিনি আগে দেখেননি। দেখেননি মানুষের হাহাকার।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, “খবর দেখে চলেছি ক্রমাগত। এই কি আমার দেশ! আমার ভয় লাগছে। আমি কি দুঃস্বপ্ন দেখছি? আমার পরিবার ওখানে রয়েছে। ওদের আবার দেখতে পাব তো?” এখনও বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি তাঁর, কথা হয়েছিল পরিবারের সঙ্গে। তাও যুদ্ধ শুরুর একেবারে গোড়ার দিকে। কাঁদতে কাঁদতে সাবরিনা বলে চলেন, “আমার পরিবারকে এত ভয় পেতে আগে দেখিনি। বোমার শব্দে ঘুম ভাঙছে ওদের। খেরসন, আমার বাড়ি খুব শান্ত জায়গা। খুব নিরিবিলি একটা ছোট্ট গ্রাম। কিন্তু আজ তাতে বারুদ-বোমার দমবন্ধ করা ধোঁয়া, কান ফাটানো আওয়াজ। আমাদের তো বেসমেন্ট নেই যে সেখানে গিয়েও পরিবার আশ্রয় নেবে। বাড়িতেই নিজেদের বন্দি করেছেন তাঁরা। কিন্তু এভাবে কতদিন? খাবারও তো শেষ হয়ে আসছে।”
রাশিয়ার হুঁশিয়ারি সম্পর্কে বহু আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন তিনি। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই যে হামলা হতে পারে তিনি বোঝেননি, এই অবস্থায় দেশেও ফিরে যাওয়ার জো নেউ তাঁর। তিনি ভারতে, তিনি সুরক্ষিত। কিন্তু যেখানে গোটা পরিবারকেই কাটাতে হচ্ছে বিনিদ্ররজনী সেখানে সাবরিনার মন কি ভাল থাকে? আপাতত একমনে একটাই প্রার্থনা করে চলেছেন প্রথম বার ভারতে আসা মেয়েটি। পরিবার ভাল থাকুক। সুন্দর সকালে খেরসনের বাড়িতে আবারও একসঙ্গে খিলখিলিয়ে উঠুক তাঁর পরিবার, উজ্জ্বল ভোর মুছে দিয়ে যাক যুদ্ধের বিষবাষ্প।