Valentine’s Day: ‘বিরহ শব্দের অর্থ বিশেষভাবে রহ… আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন…’

TV9 Bangla Digital | Edited By: Sneha Sengupta

Feb 13, 2022 | 1:12 PM

চাতক বিশেষভাবে রহে! অন্যান্য কথায় তাঁর তৃষ্ণা পায় না। যখন দেখে আষাঢ় মাসে আকাশ কালো করে এসেছে, মেঘের জল পড়বে, তখন সে খায়। আমাদের এখন যা সময় এসেছে, তাতে আষাঢ় মাসে আষাঢ় মাস আসে না।

Valentines Day: বিরহ শব্দের অর্থ বিশেষভাবে রহ... আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন...

Follow Us

আর কোনও বিরহ নেই। আমি যা জেনেছিলাম, বিরহ শব্দের অর্থ ‘বিশেষভাবে রহ’। এই ‘বিশেষভাবে রহ’ বিষয়টা ঠিক কী, আমি তা জানি না। ধরুন লালনের একটি গান ‘চাতক পাখির এমনি ধারা, তৃষ্ণায় জীবন যায় গো মারা/অন্য বারি খায় না তারা মেঘের জল বিনে/অমৃত মেঘের বারি মুখের কথায় কি মেলে
চাতক স্বভাব না হলে…’ এই হল আমাদের কথা। যদি স্বভাব না থাকে তা হলে অন্যান্য বারি সকলে খেয়ে নেবে। আমার তৃষ্ণা পেয়েছে, যেখানে যা জল পাচ্ছি… নালার জল হোক, ট্যাপের জল হোক, মিনারেল ওয়াটার হোক… কিন্তু চাতক কে? যে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য প্রথম মেঘের জলের জন্য অপেক্ষায় থাকে। এই-ই হল বিরহী!

এই চাতক বিশেষভাবে রহে! অন্যান্য কথায় তাঁর তৃষ্ণা পায় না। যখন দেখে আষাঢ় মাসে আকাশ কালো করে এসেছে, মেঘের জল পড়বে, তখন সে খায়। আমাদের এখন যা সময় এসেছে, তাতে আষাঢ় মাসে আষাঢ় মাস আসে না। এখানে তো বারো মাস বৃষ্টির হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারিতে আষাঢ় মাস, ফেব্রুয়ারিতে আষাঢ় মাস, মার্চে আষাঢ় মাস, এপ্রিলেও আষাঢ় মাস। আমাদের আর সেই সব ব্যাপারই নেই কোনও। তাই মানুষও সেরকমই হয়ে গিয়েছে। যেখানে যা জল পায়, খেয়ে নেয়। জানুয়ারিতে খেয়ে নেয়, ফেব্রুয়ারিতে খেয়ে নেয়, মার্চ, এপ্রিল… সারা বছরই খেয়ে নেয়। বারোমাস তাঁরা খেতেই আসে কেবল। আসলে ভোগ! ভোগেই আছে কেবল!

একবার বীভৎস মজা করেছিলেন ঋত্বিক ঘটক তাঁর ‘সুবর্ণরেখা’ ছবিতে। বলেছিলেন, ‘বীভৎস মজা হচ্ছে, চলো দেখবে?’ কলকাতাতেও এক বীভৎস মজা হচ্ছে। আমরাও সেই বীভৎস মজার মধ্যেই আছি। এই কলকাতা আমার কাছে কেবল কলকাতা নয়। কলকাতা আমার কাছে রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর.. বিভিন্ন জায়গা। যা যা আছে, সবটাই কলকাতা। চোখ মেলে যা দেখতে পাই, তাই-ই আমার কাছে কলকাতা। এর বাইরে আমার কাছে আর কিছুই নেই। এটাই আমার দেশ। আসলে এটা একটা কল্পনা। আধ্যাত্মিক কল্পনা বলতে পারেন! মানুষ যেখানে খেতে চায়, সেটাই কলকাতা।… তার উপর যখন দিনান্তের মেঘ, দিনান্তের বেলা ঝরে যায়, অপাপবিদ্ধ কলকাতাও সেখানে রয়েছে। আমি বেশি কিছু ভাবতে পারি না। চোখের সামনে যা দেখি, সেটাই আমার কলকাতা। ভাল কিছু দেখতে পারলে ভাল, না হলে নেই।

এই যে বিরহের কথা বলছেন, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন… আমার ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন…’ এই যে দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে আমার ব্যথার পূজার হয়নি সমাপন। ‘ধূপ জ্বেলেছি মা গো মন্দিরে, দ্বীপ জ্বালি নাই/আমি সাজাইছি ফুলের বিছানা, দ্বীপ জ্বালি নাই মা গো/ধূপ জ্বেলেছি মন্দিরে… দ্বীপ জ্বালি নাই’। এটি ভবার গান, রবীন্দ্রনাথেরও গান। দু’জনের একই গান। বিরহ বলে আমি যা বুঝি, তা হল লুকিয়ে থাকা। আমায় যেন কেউ দেখতে না পায়। আমি সাধনায় আছি। আমি বিশেষভাবে আছি।

…আমরা তো দেবদাসের প্রজাতি, তাই আমরা চাই, আমাদের সকলে যেন দেখতে পায়। আমি মদ্যপান করব, আমি গঙ্গায় গিয়ে প্রায় ডুবে যাব… তারপর আমায় পুরোহিত বাঁচিয়ে আনবে। এত প্রেমে পড়ে গেলাম আর কী! বিরহ কিন্তু অন্য জিনিস। বিরহ কিন্তু মানুষকে জানতে দেয় না। আত্মহত্যার আগে ১৮ বছরের রোহিত ভেমুলা যে চিঠি লিখেছিল, সেটা সকলের পড়া উচিত।

আমার কথা হচ্ছে, এই ‘না জানানোর’ দুনিয়া আর নেই। সবাই আমরা বড্ড জানাতে চাই। আমরা যা দেখি, সবাই সবকিছু জানাতে চাই। আমার মা-ও জানাতে চায়। আমার প্রিয়তম বন্ধুর মা, প্রিয়তম বন্ধুর বাবা… সবাই জানাতে চায়। ওরা ফেসবুক করতে চায়। ওরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে চায়। ওরা জানাতে চায় ওদের আজকে কীরকম দেখতে লাগছে রান্নাঘরে। কালকে কেমন দেখতে লাগছে বারান্দায়। পরশু কীরকম দেখতে লাগছে বিয়েবাড়িতে… ওরা জানাতে চায়। এটা কিন্তু আমাদের বাবাদের মায়েরা কোনওদিন জানাতে চায় কি চায় না, সেটাই জানত না। এখন মানুষ সব জানাতে চায়। এই যে চাওয়া, এই চাওয়া মানুষকে কোথায় নিয়ে যাবে কেউ কিন্তু জানে না। এই ব্যথার পূজা কোনওদিনও ফিরে দেখবে কি না মানুষ, কেউ জানে না।

(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ

আরও পড়ুন: Valentine’s Day: ‘যে কোনও জন্তুকেই মানুষের থেকে বেশি বিশ্বাস করি’, বলছেন প্রাক্তন আরজে অয়ন্তিকা

আরও পড়ুন:Valentine’s Day Special: ‘লাভ মি থোড়া অউর’… ইশকওয়ালা LOVE এবং AAJ KAAL-এর ভাষা

আরও পড়ুন:Valentine’s Day: টিন্ডার-প্রেম… App মুঝে অচ্ছে লগনে লগে

Next Article