Valentine’s Day: ‘যে কোনও জন্তুকেই মানুষের থেকে বেশি বিশ্বাস করি’, বলছেন প্রাক্তন আরজে অয়ন্তিকা
অয়ন্তিকা চক্রবর্তী। প্রাক্তন আরজে ঠিক কতটা পশুপ্রেমী তার আন্দাজ পাওয়া যাবে অয়ন্তিকার ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক পেজ থেকেই। সেখানেই অয়ন্তিকার সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গেও আলাপ হবে আপনার।
শহর জুড়ে যেন প্রেমের মরশুম… আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন’স ডে। ভালবাসার দিন। বাস্তব জীবনে এই দিনকে যতই মেটেরিয়ালিস্টিক করে দেখা হোক না কেন, আদতে আজ কিন্তু ভালবাসা উদযাপনের দিন। তা সে আপনি যাকেই ভালোবাসুন না কেন, কাল না হয় তাকে একটু স্পেশ্যাল ফিল করালেন। আর এই ভালবাসা যে শুধু মানুষের প্রতিই হতে হবে, এমনটা কিন্তু নয়। আপনি যদি হন পশুপ্রেমী, তাহলেও কাল জমিয়ে উদযাপন করুন আপনি। আদরের পোষ্য যারা আপনার সন্তানসম, তাদেরকেই মন খুলে বলে ফেলুন ‘আই লাভ ইউ’। আসলে ভালবাসা যেমন বয়স-স্থান-কাল মানে না, তেমনই কার প্রতি আপনি ভালবাসা প্রকাশ করবেন, কীভাবে করবেন, কোন দিনে করবেন, কেন করবেন… এই সবই একান্তভাবে আপনার ব্যক্তিগত ‘চয়েস’। আর সত্যিই তো ভালবাসার জন্য কি কোনও একটা নির্দিষ্ট দিন হওয়া সম্ভব? আর যাঁরা তথাকথিত প্রেমিক-প্রেমিকার ‘মেটেরিয়ালিস্টিক লাভ’-এ বিশ্বাসী নন, বরং তাঁদের কাছে পশুপ্রেমই আসল, তাঁরা কী করবেন?
ভালবাসার এই বিশেষ দিনের ঠিক আগে ‘পেট লাভ’ অর্থাৎ পোষ্য প্রেম এবং ‘অ্যানিমাল লাভ’ অর্থাৎ পশুপ্রেম নিয়ে কলকাতার এক ইনফ্লুয়েন্সার পশুপ্রেমীর সঙ্গে কথা বলেছে TV9 বাংলা। তিনি অয়ন্তিকা চক্রবর্তী। প্রাক্তন আরজে ঠিক কতটা পশুপ্রেমী তার আন্দাজ পাওয়া যাবে অয়ন্তিকার ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক পেজ থেকেই। সেখানেই অয়ন্তিকার সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গেও আলাপ হবে আপনার। পেট লাভার অয়ন্তিকার ভ্যালেন্টাইনস ডে কি ওদের জন্যই নিবেদিত? তথাকথিত ভালবাসার দিনে পশুপ্রেমে কীভাবে মজে থাকবেন তিনি, অয়ন্তিকার পোষ্যরাই কি তাঁর ভ্যালেন্টাইন… চলুন দেখা যাক।
ভ্যালেন্টাইনস ডে অয়ন্তিকার কাছে ঠিক কীরকম?
আমি আসলে কখনওই সেভাবে এই বিশেষ দিনটা সেলিব্রেট করিনি। স্কুলে পড়তে অবশ্য গিফট পেতাম। তখন সেটা ভালও লাগত। মনে হত বাহ্, লোকজন বেশ পাত্তা দিচ্ছে। কিন্তু ওখানেই ইতি। তারপর থেকে না কেউ আমার জন্য, না আমি কারও জন্য… ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্য়ে বিশেষ কিছু করিনি।
তবে মানুষ হিসেবে আমি কিন্তু প্রবলভাবে ভালবাসায় বিশ্বাসী। আর তাই চেষ্টা করি সব সম্পর্কেই ভালবাসার রেশ রেখে যেতে। নিজের সময়, এনার্জি সর্বোপরি নিজেকে যুক্ত করি একটা সম্পর্কে। কারও প্রতি যদি আমাকে কোনও ধারণা পোষণ করতে হয়, তাহলে চেষ্টা করি সেখানে ভালবাসার রেশ রাখতে। সেটা যেরকম সম্পর্কই হোক, নেগেটিভ ভাবনাগুলো দূরে রাখারই চেষ্টা করি। আর আমি মনে করি সব দিনই যদি একটু ভালবাসা যায় তাহলে মন্দ কী…
আপনার মেয়ে দুনি একমাস বয়স থেকে তোমার পোষ্যদের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছে… ভালবাসার দিনে দুনিকে কী বার্তা দেবেন?
পোষ্যদের প্রতি আমাদের ভালবাসা তো নিঃস্বার্থ হয়। কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে না। ওদের দিক থেকেও বহিঃপ্রকাশটা কিন্তু তেমনই। আমার মেয়েকে আমি এটাই দেখাই। এই যে সহাবস্থান, এটা খুব জরুরি। কাউকে ভালবাসলে সেটা একটু প্রকাশ করাও প্রয়োজন। আমার মা-বাবা আমায় কখনও গলা জড়িয়ে বলেননি যে, তাঁরা আমায় ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু তাই বলে কী বাসেন না? অবশ্যই ভালবাসেন। কিন্তু কোথাও বোধহয় একটু বলতেও হয়। আমি তো প্রায় রোজই দুনিকে বলি ‘দুনি আই লাভ ইউ’। পাল্টা জবাব দেয় দুনিও। এর থেকেই ও শিখবে আশা রাখি। কারণ হয়তো এখন যত শুনবে, ভবিষ্যতে ততই বলবে। আমার জীবনে প্রতিদিনই ভালবাসার ছোঁয়া রয়েছে। সেটা মেয়ের ক্ষেত্রে হোক বা পোষ্যরা কিংবা অন্যত্র। সবাইকে তাই এটাই বলব যে, ভালবাসার ওই রেশটুকু থাকা প্রয়োজন।
অয়ন্তিকা কী কুকুরপ্রেমী না বিড়াল?
আমি পশু প্রেমী। সবই আমার ভাল লাগে। এমনকি টিকটিকিদেরও বেশ মিষ্টি লাগে আমার। কোনও সরীসৃপ নিয়েও আমার সমস্যা নেই। আমার তো কুমিরকেও সুন্দর লাগে। তাই নিজেকে পেট লাভার বলার পরিবর্তে পশুপ্রেমী বলতেই আমি বেশি পছন্দ করি। কোথাও বেড়াতে গেলে আগে সেখানকার চিড়িয়াখানায় যাই। তাই বলে সব প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় আটকে রাখার বিষয়টা আমি মোটেই সমর্থন করি না। কিন্তু যেসব প্রাণী হয়তো বন-জঙ্গলে থাকতে পারবে না, তাদের বসবাসের জন্য যদি কোনও উপযুক্ত জায়গা হয় তাহলে ক্ষতি কী। এই ধরনের স্যাংচুয়ারিতে আমি যাই। জীববৈচিত্র্য, পাখিদের আনাগোনা দেখি। ভাল লাগে এগুলো আমার।
পশুপ্রেমী অয়ন্তিকা কি নিরামিষাশী?
প্রসেসের মধ্যে আছি। অনেক কিছুই ছেড়ে দিয়েছি। তবে ধীরে-ধীরে এগোচ্ছি। কারণ সবটাই তো সিস্টেম। আচমকা একদিন সকালে উঠে বললাম আজ থেকে ভেজ খাবো, ওটা হয় না। সময় লাগে।
পশুপ্রেমী হতে গেলে কি নিরামিষাশী হওয়া প্রয়োজন?
একেবারেই না। আমাদের জীবনচক্র তো খাদ্য-খাদকের সম্পর্কে দাঁড়িয়ে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে একটা জিনিস। কতটা আমাদের প্রয়োজন আর কতটা আমরা করছি। আশপাশে যা আছে, তার উপর ভিত্তি করেই বাঁচতে হবে। ঈশ্বর সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু খেয়াল রাখা উচিত যে আমরা সেইসব সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করছি নাকি করছি না।
পোষ্যদের মান-অভিমান বুঝতে পারেন কীভাবে?
খুবই সহজ। ওদের হয়তো আমাদের মতো ভাষা নেই। কিন্তু তা-ও বেশ বোঝা যায় সবকিছুই। আসলে এমন অনেক মানুষও তো থাকেন, যাঁরা হয়তো সেভাবে নিজেদের হাবভাব প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু অনেকদিন তাঁদের সঙ্গে থাকলে যে কেউ বুঝতে পারবেন। একই ব্যাপার হয় পোষ্যদের ক্ষেত্রেও। ওদের কাছাকাছি অনেক দিন থাকলেই বোঝা যায় ওদের মান-অভিমান।
মানুষ না পোষ্য, আপনার কাছে কে বেশি ভরসাযোগ্য?
এনিটাইম, পশুপাখি-জীবজন্তু। আমার কাছে একজন ভীষণ ভাল মানুষের থেকে একটা খারাপ কুকুর অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য। পশুপ্রেমী আমি,তাই মানুষের থেকেও বেশি ওদেরই বিশ্বাস করি। যদি ভোট করতে বলা হয় তাহলে একজন সাধু-সন্ন্যাসী ধরনের মানুষ আর একটা বদরাগী, মেজাজি কুকুর যার কামড়ে দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে, ওর মধ্যে আমার ভোট যাবে ওই কুকুরটার দিকেই। আমি যেকোনও জন্তুকেই মানুষের থেকে বেশি বিশ্বাস করি। অনেক ছোট থেকেই ওদের সঙ্গে বড় হয়েছি। তাই ওদের সমস্ত অভিব্যক্তি বোঝার ক্ষমতা আমার তৈরি হয়েছে। এটা অবশ্য সাংঘাতিক কোনও ব্যাপার নয়। একটানা অনেকদিন কোনও মানুষের সঙ্গে থাকলে যেমন আমরা তাদের বুঝতে পারি, জীবজন্তুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক একই।
একুশ শতকের সভ্য সমাজে দাঁড়িয়েও চারপাশে যে জীবজন্তুদের প্রতি এত নিষ্ঠুরতা হয়, রাগ হয় না আপনার?
নাহ। রাগ করে চিৎকার করে ওসব ছেড়ে দিয়েছি। বরং সেইসব মানুষদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আসলে সবটাই অন্তর আত্মার চেতনার উপর নির্ভর করে। মানুষের ভিতরটাই যদি না বদলাল, তাহলে কী হবে বকে-ধমকে, মেরে? কোনও লাভ নেই। আসলে যাঁরা পশুপ্রেমী, তাঁরা কিন্তু কখনও না-কখনও animal cruelty-র সঙ্গে যুক্ত থেকেছে। সেটা জেনে হোক বা না-জেনে। আমার জীবনেও হয়েছে। এটা আমি কোথাও বলি না সেভাবে। ছোটবেলায় বাড়িতে একটা বদ্রিকা টিয়া পাখি ছিল। খুব শখ ছিল ওর মাথায় হাত বোলাব। বুঝিনি যে ওকে একবার ধরার বাসনা পাখিটাকে আমার কাছ থেকে চিরদিনের মতো কেড়ে নেবে। আমার ওকে বারবার ধরতে চাওয়া আর ওর পালানোর ঘটনায় ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিছুদিন পর মারাও যায়। এই ঘটনাটা ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল আমার শিশুমনে। সেই তখন থেকেই জীবজন্তুকে দেখার নজরটা আমার বদলে গিয়েছে। অনেককেই দেখি কুকুরপ্রেমী। কিন্তু পোষা কুকুর বাইরে নিয়ে বেরোলে নেড়ি কুকুর চেঁচালেই তাদের দিকে তেড়ে যান, মারতে যান। আমি ওরকম পশুপ্রেমী নয়। ছোটবেলায় কেউ কুকুর বিড়ালের সঙ্গে খারাপ কিছু করলে চরম দুর্ব্যবহার করতাম তার সঙ্গে। ওরা আমায় কিছু বলত না। কিন্তু শোধ তুলত অবলা জীবগুলোর উপর। তাই রাগ করে চিৎকার-চেঁচামেচি করা ছেড়ে দিয়েছি। বরং বোঝানোর চেষ্টা করি। আর তাতেও যাদের চেতনার উন্মেষ হয় না তারা আসলে নিকৃষ্ট প্রজাতির।
আচ্ছা পশুপ্রেমী না হলে কি তাহলে অয়ন্তিকার বাড়িতে এন্ট্রি নেই?
এ বাবা, না না একেবারেই তা নয়। কেউ বিড়াল, কুকুর ভাল না-ই বাসতে পারেন। ভয়ও পেতে পারেন। তবে তিনি যখন আমার বাড়ির অতিথি, তখন তাঁকে স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়া আমার কর্তব্য। একইসঙ্গে তাঁর ভয় কাটিয়ে সহজ করে দেওয়ার চেষ্টাও আমি করি। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একদিনে হয় না। তবে চেষ্টা করলে হয়। আমি তো পেরেছি। এই যে দুনি আমি আর আমার বাকি সন্তানরা এত ভিডিয়ো করি, তার একটাই লক্ষ্য: মানুষ যেন জীবজন্তুর উপর নিষ্ঠুর আচরণ না করে। পশুপ্রেমী হতে হবে না। কিন্তু নিষ্ঠুরও হয়ো না। এটুকুই বলার। অবলা জীবদের ভালবাসলে কিন্তু আমাদের চারপাশের সমাজটা আরও সুন্দরই হবে।
আরও পড়ুন- Valentine’s Day: টিন্ডার-প্রেম… App মুঝে অচ্ছে লগনে লগে