বাজেট নেই, আছে শুধু বাজে খবর; পুজো করার মন নেই কারও

প্রথম ঢেউয়ের পর পুজোয় বাজেট ছিল ৭-৮ লক্ষ। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সে বাজেট নেমে তলানিতে ঠেকছে। বড়জোর লাখ দুয়েক।

বাজেট নেই, আছে শুধু বাজে খবর; পুজো করার মন নেই কারও
এত মৃত্যু কোনও পুজো দেখেছে কি আগে কখনও?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 07, 2021 | 11:24 AM

প্রীতম দে

মুদিয়ালীর পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তালিকায় রয়েছেন কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।

“এত মৃত্যু নিয়ে পুজো করা যায়?” প্রশ্ন মুদিয়ালির সম্পাদক নাম অশোক দে’র। পুজোর রীতিনীতি নিয়ে কোনও আপোস করেন না। বিসর্জনের দিন বিসর্জন দেন। তাই-ই রেড রোডের শোয়েও যান না। সেই কারণে প্রতিমা দেড় লাখ এবং দেড় লাখই থাকবে। তাছাড়া নো থিম।

ব্যাক টু বেসিকস। থিম শুরুর প্রথম বাজেটে ফিরে যাচ্ছে অধিকাংশ বড় পুজো। প্রথম ঢেউয়ের পর পুজোয় বাজেট ছিল ৭-৮ লক্ষ। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর সে বাজেট নেমে তলানিতে ঠেকছে। বড়জোর লাখ দুয়েক। এই দু’ লাখ বাজেট দিয়েই অনেকে শুরু করেছিলেন থিম পুজো ২০০১ সাল নাগাদ।

দেশপ্রিয় পার্ক এখনও কিছু ঠিক করে উঠতে পারেনি। পুজো আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে কর্মকর্তাদের মনে। গতবারের বাজেট ছিল ১৫ লাখ টাকা। স্বাভাবিকভাবে বাজেট থাকে অর্থাৎ ২০১৯ করোনার আগে বাজেট ছিল ৮০ লাখ। ক্লাবের দশ-বারো জনের মতো এখনও করোনা আক্রান্ত। এখনও অনেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন।

৬৬ পল্লির পুজোর নেতাকেই কেড়ে নিয়েছে করোনা। “গতবার ৭-৮ জনের হল। সবাই সেরে গেল। এবার আমার আর রজতদার (রজত সেনগুপ্ত, সভাপতি)। পুজোর আসল লোকটাই রইল না,” ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় বলেন ৬৬ পল্লির কর্মকর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায়। ২১ লাখ বাজেটের পুজো গতবারে নেমেছিল ১০-এ। এবারে ৪-৫ লাখে ঠেকবে।”

উত্তর কলকাতার গৌরিবেড়িয়া সর্বজনীন। দুই সহ-সভাপতিই আর নেই (অনীশ দেব ও কমল কৃষ্ণ সাহা)। আরও দুই সদস্য (স্বপন মুখোপাধ্যায় ও কৌশিক পোদ্দার)। মোট চারজন। আর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন আরও ৬ জন। ৩২ লাখ থেকে বাজেট নেমে এসেছে ১২ লাখে।

নেতার পুজোর মধ্য়ে অন্য়তম ত্রিধারা। নব-নির্বাচিত বিধায়ক হিসেবে দেবাশিস কুমারের প্রথম পুজো। সবচেয়ে বড় কথা হল ত্রিধারার এবারে ৭৫ বছরপূর্তি। অনেক প্ল্যান ছিল। কিন্তু এখন সেসব মনে হচ্ছে না। ৯০% সদস্যের করোনা হয়েছিল। বাড়ির অনেকেই আর নেই এবারের পুজো দেখার। “মন ভেঙে গেছে। শুধু চারিদিক থেকে বাজে খবর। গত বারের পুজোটা নমো-নমো করে হয়েছে। এবারে তা-ও হবে না। যেটুকু না করলে নয়,” বললেন গার্গী মুখোপাধ্যায়, ত্রিধারার কর্ত্রী। ৩০ লাখের পুজোর বাজেট গতবারেই নেমেছিল ৩ লাখে। এবার আরও নীচে নামবে।

আর এক নেতা অতীন ঘোষের পুজো হাতিবাগান সর্বজনীন। কমিটির ১১ জনের করোনা হয়েছিল। ববি হাকিমের পুজো চেতলা অগ্রণীর ছবিও একই। ত্রাণ দিতে গিয়ে করোনা হয়েছিল চেতলা অগ্রণীর সদস্যের। ক্লাবের সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে অনেকেরই হয়েছে করোনা। আশঙ্কাজনক অবস্থা থেকেও ফিরে এসেছেন। কিন্তু মন নেই যেন এবারে। বাজেট নামবে ১৫ লক্ষতে। কারণ এবারের পুজোয় থিম নয়, মানুষের জন্য খরচ করছেন তাঁরা।

পুজো ফোরামের সম্পাদক শাশ্বত বসু যে ধারণার কথা বললেন, তা অনেকটা এরকম: ৫০০টি পুজো কমিটির ২ জন করে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ১০০০-এ। আসল সংখ্যাটা নিশ্চিত আরও বেশি।

এত মৃত্যু কোনও পুজো দেখেছে কি আগে কখনও?

গ্র্যাফিক্স ও অলংকরণ- অভীক দেবনাথ