নন্দন পাল: বাঙালির বাড়িতে লক্ষ্মীর আরাধনা হলেই ঘট, সরা, বাতাসা, আম্রপল্লবের মতই যে অনুষঙ্গ মাথায় আসে তা হল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া কালজয়ী গান ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, আমার এ ঘরে থাকো আলো করে’। এই গানটির দুটি ভার্সান দু’বার রেকর্ড করা হয়। প্রথম বার চলচ্চিত্রের জন্য। সেই গানের সঙ্গীত আয়োজন করেন রবীন সরকার।
প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতকার ভি বালসারার সহায়ক ছিলেন রবীন সরকার। ১৯৫৯ থেকে বালসারার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রবীনবাবু ছিলেন বালসারার সঙ্গে। নিজেও কাজ করেছেন বহুবার সঙ্গীত আয়োজক বা মিউজিক অ্যারেঞ্জার হিসেবে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী গান ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে’ প্রথমবার রেকর্ড করা হয়েছিল ছায়াছবির জন্য। সঙ্গীত আয়োজকের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমানে প্রবীণ রবীনবাবু। সেই ছবির পরিচালক ছিলেন কনক মুখোপাধ্যায় আর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছোটভাই অমল মুখোপাধ্যায়। ছবির নায়ক-নায়িকা ছিলেন শমিত ভঞ্জ এবং মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়।
বুধবার সকালে TV9 বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রবীনবাবু বলেছেন, “বর্তমানে যে গানটা আপনারা শোনেন, সেই গানটি আসল গান নয়। এটা নতুন করে রেকর্ড হয়েছিল। আসল গান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই ছবি মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছুদিন পর গ্রামাফোন কোম্পানি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হিট গানের একটি এলপি রেকর্ডের সংকলন তৈরি করতে চায়। সেই কাজ শুরু করতে গিয়ে গ্রামাফোন কোম্পানির নজরে আসে, তাঁদের কাছে গানটি যে ফরম্যাটে রয়েছে তাতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আসল গান। তা আর কোনওমতেই উদ্ধার করা সম্ভব নয়। অতএব পুনর্নির্মাণ হয় গানের। রেকর্ডিংও হয়। সেটিই বর্তমানে শোনা যায়। কী ছিল আসল ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে’ গানটিতে? রবীন সরকার বলছেন শঙ্খ নয় বরং ঘুঙুর দিয়ে শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া তাঁর আয়োজন করা ওই প্রথম ভার্সানের গানটি। শেষও হয়েছিল ঘুঙুর দিয়েই। গানটির অপূর্ব বিশেষত্ব ছিল সানাইয়ের ব্যবহার। সানাই বাদক আলি বাজিয়েছিলেন সানাই। তিনি পরবর্তীকালে আকাশবাণীতে নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় ভার্সানের রেকর্ডিংয়ের সময় আলির ডেট পাওয়া যায়নি। নাকি পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় বা অন্য কোনও কারণে আলিও তাঁর সানাইকে ব্যবহার করেনি।”
রবীনবাবুর কথা অনুসারে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কালজয়ী গান ‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে’-এর প্রথম ভার্সানটিতে লিপ দিয়েছিলেন মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়। পিকচারাইজ়েশন হয়েছিল মৌসুমি লক্ষ্মী পুজো করতে করতে গাইছেন এই গান।
আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay: বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই এল বর সন্ধ্যাকে বিয়ে করতে
আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay Obituary: তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান