রঙিন হওয়ার দিন আজ। দেশজুড়ে সকলেই আজ মেতেছেন রঙের উৎসবে। ফাল্গুনের এই পূর্ণিমা এক এক জায়গায় এক এক নামে পরিচিত। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম হয়েছিল এই পূর্ণিমার তিথিতে, তাই দোল পূর্ণিমাকে গৌরী পূর্ণিমা বলা হয়। দোল পূর্ণিমা অনেক পৌরাণিক ঘটনা। এই তিথিতে বৃন্দাবনে আবির ও গুলাল নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ, রাধা এবং তার গোপীগনের সঙ্গে হোলি খেলেছিল আর সেই ঘটনা থেকে উৎপত্তি হয় দোল খেলা। আবার বলা হয় এদিনই রাধাকৃষ্ণর মিলন হয়েছিল। ফলে দোলনায় তাদের দুজনকে বসিয়ে সাজিযে পুজো করা হয়। বছরের এই সময় রঙ লাগে প্রকৃতির মনেও। গাছে নতুন পাতা আসে, বাহারি ফুলে ঢেকে যায় চারপাশ।
হিন্দুশাস্ত্র মতে বিধবাদের যে কোনও আনন্দ-অনুষ্ঠান, শুভ কাজ, দোল- এসব থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়। সাদা শাড়িতে তাঁদের জীবন থেকে যাবতীয় আনন্দ যেন শুষে নেওয়া হয়। কিন্তু বৃন্দাবনের বিহারী মন্দিরে সেই চিত্র খানিক আলাদা। বিহারী মন্দিরে ৭ দিন ধরে ৭ রকমের হোলি খেলা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এসে জড়ো হন সেই অনুষ্ঠানে। দোলযাত্রার আগের দিন এখানে হয় ফুলন ওয়ালি হোলি। সেদিনও সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়ে বাঁকে করে বিহারিকে আনা হয় মন্দির প্রাঙ্গনে। আর এদিন মূলত খেলা হয় লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে।
প্রাচীন কাল থেকেই বিধবাদের এই উৎসবে আসা নিষেধ। শুভ উৎসবের নানান কাজ থেকে বঞ্চিত থাকেন বিধবারা। কিন্তু এখন পাগল বাবার আশ্রমে একত্রিত হন। তাঁরাও মনের আনন্দে হোলি খেলেন। বৃন্দাবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে এটি কিন্তু একটি। এদিন সাদা শাড়ি আর রঙিন গুলালে বিধবাদের যে অপরূপ সুন্দর লাগে, সেই দৃশ্য থেকে কিন্তু চোখ ফেরানো দায়। ২০১৩ সাল থেকে প্রাচীন প্রথা ভেঙে বিধবারাও সকলে অং নেন এই উৎসবে। কোভিডের কারণে গত দু বছর উৎসব বন্ধ ছিল। কিন্তু এবছর আবার সবাই তাঁরা একত্রিত হয়েছেন। এদিন ভেষজ লাল আবিরে একে অন্যের মুখ রাঙিয়ে দেন। বৃন্দাবনে বসবাসকারী বিধবাদের করুণ অবস্থা দেখেই ১০ বছর আগে সুপ্রিক কোর্ট এই রায় দিয়েছিল। এরপর থেকে তাঁরাও সব কিছু ভুলে অংশ নেন এই আনন্দ অনুষ্ঠানে। দোলের আনন্দের ভাগীদার সকলেই। রঙের মধ্যে নেই কোনও বিব্দ। তা যেন আরও একবার প্রমাণিত।
আরও পড়ুন:Viral Video: বি-টাউনে হোলি-র গালা পার্টি, রঙিন শাহরুখ-গৌরীর কাণ্ড-র স্মৃতিতে বিভোর নেটপাড়া