মুনমুনের আগে এক সন্তান জন্মেছিল সুচিত্রা সেনের, জানতেন?

Suchitra Sen Acid Attack: সুচিত্রার স্বামী দিবাকর নাকি তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছিলেন। খানিকটা নাকি মুখও পুড়েছিল। কিন্তু চরম ক্ষতিটা করতে পারেননি। এই স্বামী সারাটাজীবন অনেক বেগ দিয়েছিলেন সুচিত্রাকে। সেই বিশ্রী সংসারে কীভাবে টিকে ছিলেন সুচিত্রা জানেন? জানলে শরীর শিউরে উঠবে...

মুনমুনের আগে এক সন্তান জন্মেছিল সুচিত্রা সেনের, জানতেন?
মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, স্বামী দিবাকর সেনের সঙ্গে সুচিত্রা।
Follow Us:
| Updated on: Apr 17, 2024 | 6:24 AM

‘অভিনয় করার সময় আমাকে ও টাচ করবে না’–এই কালজয়ী সংলাপ যিনি বলেছিলেন, তিনি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ‘সপ্তপদী’র ‘রিনা ব্রাউন’-এর যতটা দাপট পর্দায় ছিল, ঠিক ততটাই কি দাপট ছিল ব্যক্তিজীবনে? নাকি তিনি ছিলেন পরিস্থিতির শিকার? লোকে বলে, সুচিত্রার দাম্পত্যজীবন নাকি এক্কেবারেই সুখের ছিল না। অ্যাসিড ছুড়ে তাঁর অমন সুন্দর মুখটা নাকি ‘বিশ্রী’ করে দিতে চেয়েছিলেন স্বামী দিবানাথ সেন। কী ঘটেছিল সুচিত্রা সেনের সঙ্গে?

রমা দাশগুপ্ত। বাংলাদেশে জন্ম। করুণাময় দাশগুপ্ত এবং ইন্দিরা দাশগুপ্তর সন্তান। রমা, হেনা, লীনা, রুনা এবং দুই ভাই নিমাই ও গৌতমকে নিয়ে ভরা সংসার দাশগুপ্তদের। একবার সপরিবারে পুরী বেড়াতে গিয়েছিলেন এই রমা। সেখানে গিয়েই নাকি কপাল পাল্টায় শ্যামা, অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটার। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের ঠাকুরমার চোখে পড়েন রমা। দিবাকরের জন্য তাঁকে আদর্শ জীবনসঙ্গী মনে করেছিলেন এই বুড়ি মানুষটা। রমার বাড়িতে তখন কড়া শাসন। বিয়ের জন্য এক্কেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। মাত্র ১৬ বছরেই মনের অমতে এবং বাড়ির ইচ্ছেতে দিবাকরের পরিবারে গিয়ে উঠলেন রমা। ৩৬ নম্বর বালিগঞ্জ প্লেসের প্রাসাদোপম বাড়িটায় তখন হাতে গোনা কয়েকটা প্রাণী বাস করে। মন টিকত না রমার। এদিকে দাশগুপ্ত পরিবার দারুণ খুশি। নিজেরা বদ্যি, তাই ‘সুযোগ্য’ ধনী বদ্যি পরিবারে বিয়ে দিতে পেরে কন্যাদায়গ্রস্থ করুণাময় তুষ্ট। মেয়ের মনের খোঁজ নিলেন না। মেয়ের জন্য একফোঁটাও করুণা হল না করুণাময়ের।

দূর থেকে বিরাট বাড়িখানা দেখে অনেকেই মনে করতেন বাড়ির কর্তৃ না হয় কত সৌভাগ্যময়ী। আসলে রমা যে পরিস্থিতির শিকার। তা মনে করতেন তাঁর প্রিয়জনেরা। ঢাকার গ্যান্ডেরিয়ার জীবন ফেলে, বাবা-মা, ভাই-বোনদের ছেড়ে বিরাট বাড়িটায় ডুকরে কাঁদতেন রমা। তাঁর পটলচেরা চোখ থেকে অশ্রু পড়ত অহর্নিশ। বিয়ের পর রমা জানতে পারলেন স্বামীর জীবন কতখানি বেপরোয়া। সেই বেপরোয়া ছেলেকে সঠিক পথে ফেরাতেই দিবানাথের পিতা আইনজীবী আদিনাথ অমন সুন্দরী স্ত্রী ঘরে এনেছেন তাঁর জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলতেন, দিবানাথ তো শায়েস্তা হলেনই না, বরং রমার গোটা জীবনটা জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেল।

এই খবরটিও পড়ুন

দিবানাথের সঙ্গে রমার বিয়ের এক বছরের মধ্যে পর নাকি তাঁদের এক সন্তানের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সেই পুত্র সন্তান বাঁচেনি। পরিবার থেকে কটাক্ষ সহ্য করতে হয়েছিল সেই রমাকেই। আর ওদিকে সুন্দরী বউকে বাড়িতে বসিয়ে-বসিয়ে খাওয়াতে নারাজ ছিলেন দিবানাথ। স্ত্রীর রূপের সদ্ব্যবহার যাতে সঠিকভাবে হয়, তাই নাকি তাঁকে সিনেমাপাড়ায় নিয়ে এসেছিলেন দিবানাথ। রাতারাতি পাল্টে যায় রমার জীবন। নামটাও পাল্টে যায়। বাংলার রুপোলি পর্দায় আবির্ভূত হন এক অপরূপা–রমা হন আমাদের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। সুপারস্টার হলেও রোজগারের সব টাকাই তাঁর থেকে কেড়ে নিতেন দিবানাথ।

দিবানাথের ইচ্ছা ছিল স্ত্রীকে হাতের পুতুল করে রাখবেন। কিন্তু সুচিত্রা ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। পর্দায় উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেনের জুটি হিট করতেই পাল্টে গেল সমীকরণ। অর্থ-খ্যাতি-জনপ্রিয়তা-ক্ষমতায় সুচিত্রা পেলেন নিজের পায়ের তলার শক্ত জমি। স্বামীকে নাকি আর তোয়াক্কাই করতেন না মিসেস সেন। দিবানাথ নাকি সুচিত্রাকে উত্তমের সঙ্গে পর্দায় দেখে আর সহ্যই করতে পারতেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে আজও সকলে বলাবলি করেন, রাগের মাথায় নাকি সুচিত্রার মুখে অ্যাসিড ছুড়তে চেয়েছিলেন তাঁর স্বামী দিবানাথ। যাতে মহানায়িকার মুখটা চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তিনি অসফল হয়েছিলেন। মুখের সামান্য ক্ষতি হলেও সুচিত্রার এই চরম ক্ষতিটা করতে পারেননি দিবানাথ।

এই ঘটনার পরই নাকি স্বামীকে ত্যাগ করেছিলেন সুচিত্রা। ডিভোর্স না হলেও আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। স্টুডিয়োতে শুটিং করতে-করতে স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন মহানায়িকা। নিজেই হাত দিয়ে মুছে ফেলেছিলেন সিঁদুর। পর্দার সেই দাপুটে সুচিত্রা সেন কিন্তু নিজের সংসারে সুখী হতে পারেননি একটা দিনের জন্য। তবে নিজের মূল্য়বোধ থেকে সরেননি একটা দিনের জন্যেও। স্বামীর সঙ্গে থাকেননি বলে জুটিয়ে ফেলেননি কোনও প্রেমিক। একাই মেয়ে মুনমুনের বিয়ে দিয়েছিলেন। রাজপরিবার খুঁজে বের করেছিলেন মেয়ের জন্য। একাই নিজেকে গুঁটিয়ে ফেলেছিলেন। অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। আড়াল ছেড়ে লোকের সামনে দাঁড়াননি একটা দিনের জন্যেও। মৃত্যুর সময়ও মহানায়িকাকে শেষবারের জন্য কেউ দেখেননি। সত্যিই প্রদীপের নীচে কতই না অন্ধকার থাকে! মধ্য গগনের তারাটাও কেমন মেঘে ঢাকা…