Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘জওয়ান’, ‘পাঠান’ অসহ‍্য: আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত

Aditya Vikram Sengupta: "শুধু বাংলা ছবি নয়, হিন্দি ছবিতেও সেটা হয়। চরিত্ররা সব সময়ে ওভার স্মার্ট সংলাপ বলতে থাকে। সেটা তো বাস্তবে কখনও হয় না...!"

‘জওয়ান’, ‘পাঠান’ অসহ‍্য: আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 09, 2025 | 3:29 PM

এক অন্যস্বাদের ছবি ‘মায়ানগর’, পরিচালক আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত শহরের হৃদয়ে উঁকি মেরে যে গল্প বুনেছেন, তারই খোঁজ নিল TV9 বাংলা। 

‘মায়ানগর’ ছবিটা আপনি যখন তৈরি করা শুরু করেছেন আর শহরের দর্শক যখন দেখছেন, সেই সময়ের মধ্যে দশ বছরের ব্যবধান। শহরের রাজনৈতিক অবস্থা পালটেছে ক্রমশ…

আদিত‍্য: লেখা শুরু করেছি ২০১৫ সালে। ২০০৯-২০১০ থেকে শহর যেভাবে পালটেছে, এটা আমার তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া। তখন সরকার বদল ঘটে। তারপর আইটি, ফোনের প্রভাবে সব শহরই বদলেছে। কলকাতাও বদলেছে। মানুষের খিদে, অ্যাম্বিশন সব কিছু বাড়ছে। ২০১৯-এ শুট করেছি ছবিটা। এখন শহর আরও বদলে গিয়েছে। এই শহরের কিছু চরিত্রের গল্প। এই ছবিতে যাদের দেখবেন দর্শকরা, তাদের আমি দেখেছি। আমার আগের ছবিগুলোর চেয়ে এটা আলাদা।

কলকাতা শহরজুড়ে কতটা মায়া?

আদিত্য: ভীষণই মায়ার জায়গা কলকাতা। বাড়িতে যেরকম কাঁথার গন্ধে, দরজা-জানলায় একটা আরাম অনুভব করি আমরা, তেমনই শহরটায় অনেক অস্বস্তি, অনেক অসুবিধা। শহরটার সঙ্গে আমরা যে একটা কমপ্লিকেটেড রিলেশনশিপে আছি, সেটা ছবিটায় আছে।

আপনি কি বাংলা ছবি তৈরি করার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে গিয়েছেন?

আদিত্য: উদাসীন কারণ উত্‍সাহের অভাব রয়েছে। একটা সীমিত বাজেটে ছবি তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রেও উত্‍সাহের প্রয়োজন। এখানে সব ফোর্স বিপক্ষে। ১২ দিনে একটা ছবির শুটিং শেষ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। একটা ছবি করতে হলে অন্তত ৩০ দিন শুটিং করতেই হবে আমাকে। তারপর একটা ছবি করতে গেলে ফেডারেশনের অমুক নিতে হবে, তমুক নিতে হবে। এখানে যদি কেউ কারও জন্য কোনওরকম এক্সেপশন না করেন, তা হলে খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে কাজ করা। এই নিরিখে আমি ক্লান্ত। যদিও অনেক গল্প বলার আছে। আমি যে বাজেট ভাবছি, তার অর্ধেক বাজেটেও খুশি মনে গল্পটা বলতে পারি। কিন্তু এখানে ইউনিয়নের দিক থেকে সমর্থন পাচ্ছি না।

এই বাধা অতিক্রম করে বাংলা ছবি তৈরি করতে চান?

আদিত্য: বিষয়টা খুব ক্লান্তির। এমনকী গ্রান্ট নিয়ে ছবি তৈরি করাটাও সমস্যার। চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেটা করার আর এনার্জি নেই।

বাংলায় নতুন প্রজন্মের যেসব পরিচালক অন্যধারার ছবি তৈরি করতে চান, তাঁদের কাছে আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত উদাহরণ। আপনার মুখে এই কথাগুলো সেই নিরিখে খুব গুরুত্বপূর্ণ!

আদিত্য: গ্রান্টের রাস্তাটা সত্যিই ক্লান্তির। আর গ্রান্ট নিয়ে ছবি করতে হচ্ছে, কারণ আমি এমনিতে ছবি তৈরির পরিবেশ পাচ্ছি না। আমি হয়তো ভাবলাম ৬জন টেকনিশিয়ান নিয়ে একটা ছবি তৈরি করব, তখন ফেডারেশন বাধা দেবে। আবার আমি যদি ভাবি মুম্বই থেকে সব টেকনিশিয়ান নিয়ে আসব, তা হলে বাজেট বেড়ে যাবে!

শ্রীলেখা মিত্র, ব্রাত্য বসু বা যতজনকে আপনি কাস্ট করেছেন, সকলেই তাঁদের কাজে দুর্দান্ত। কাস্টিংয়ের প্রসেসটা কীরকম ছিল?

আদিত্য: শ্রীলেখার কথা প্রথম থেকেই মাথায় ছিল। ব্রাত্যদা সিজনড থিয়েটার অ্যাক্টর। সব কিছু খুব সহজ ছিল। আমি প্রচুর রিটেক করি। কিন্তু সেটা নিয়ে কারও কোনও অসুবিধা ছিল না। আমরা দুই বছর ধরে ছবিটার কাস্টিং করেছি। ৫০টা থিয়েটার গ্রুপ থেকে অডিশন করেছি। আমরা সব দৃশ‍্যের জন্য অনেক বার করে রিহার্সাল করেছি। তবে ছবিটা দেখার সময় কারও মনে হবে না, ওঁরা কেউ অভিনয় করছেন।

বাংলা ছবিতে অধিকাংশ সময়ে অভিনেতাদের দেখে বোঝা যায় তাঁরা অভিনয় করছেন। এই ব্যাপারে আপনি কতটা বিরক্ত?

আদিত্য: শুধু বাংলা ছবি নয়, হিন্দি ছবিতেও সেটা হয়। চরিত্ররা সব সময়ে ওভার স্মার্ট সংলাপ বলতে থাকে। সেটা তো বাস্তবে কখনও হয় না!

আপনার প্রাক্তন স্ত্রী জোনাকি ভট্টাচার্য এই ছবিটায় কাজ করেছিলেন। তারপর বিচ্ছেদ হয়েছে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

আদিত্য: বিচ্ছেদ হয়েছে মানে আমরা বিয়েটা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেখুন, বিয়ের প্রধান সমস্যা হলো, ওটার সঙ্গে প্রধান দু’ জন ছাড়াও সকলে জড়িত। সেখানে চারপাশের সকলের চাহিদা জড়িয়ে যায়। বিয়েটা অলমোস্ট একটা শোবিজ। এটা রিলেশনশিপ হলে আপনি হয়তো এই প্রশ্নটাই করতেন না। আমি যাঁকে ডেট করেছি, তাঁকে নিয়ে এই প্রশ্নটা আসে না। তবে বিয়েটা আমরা শেষ করলেও, আমার ছবিতে জোনাকির সাংঘাতিক কনট্রিবিউশন রয়েছে। আমাদের ওয়ার্কিং রিলেশনসিপটা খুবই ভালো ছিল।

সামগ্রিকভাবে বাংলা ছবির মান পড়ছে, এই আলোচনা আমরা দশ বছর ধরে করছি। তাতে লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না। আপনি যখন বাংলা ছবি দেখেন, মনে হয় কি বাংলা ছবি পিছিয়ে পড়ছে?

আদিত্য: বাংলা ছবির মান পড়ছে, এই ব্যাপারে আমার হ্যাঁ বা না, এরকম একটাই কিছু মনে হয় না। হিন্দি ছবিও একদম উচ্ছন্নে গিয়েছে। যা ইচ্ছা তাই হচ্ছে। পাঠান, জওয়ান অসহ্য। সেলিং পয়েন্ট বা প্রশংসার মানদণ্ড হলো টাকা! ২০০ কোটি বা কত কোটি। সেটা জেনে আমি কী করব? একটা সংস্থা কত ব্যবসা করেছে তাই জেনে কি আমি নির্ধারণ করি সেটার পাউডার ভালো কিনা? সিনেমা কত ভালো করে তৈরি করা হয়েছে বা সমাজে তার কী প্রভাব, সেসব নিয়ে কোনও আলোচনা নেই! এটাই বিরক্তিকর। রেস্তোরাঁয় গিয়ে আমি দেখি খাবার ভালো কিনা। তাঁদের কত ব্যবসা জেনে ঠিক করব নাকি সেখানে যাব কিনা? এটা আমার কাছে অদ্ভুত। বাংলায় তা-ও এই ব্যবসার আলোচনা ইদানীং শুরু হয়েছে। আমার মনে হয়, বাংলা ছবির এখনও খিদে আছে নতুন বিষয় নিয়ে ভেবে ছবি তৈরি করার। ফেডারেশনের চাপ না থাকলে, একটু স্বাধীনতা পেলে আরও কিছু ভালো বাংলা ছবি তৈরি হবে বলে আমার বিশ্বাস।

কোন-কোন বাংলা ছবি ভালো লাগলো?

আদিত‍্য: ‘খাদান’ ভালো লাগল। বাণিজ্যিক ছবির ট্রু ফর্ম। কোনও ভান নেই। ‘দশম অবতার’ আমার জমজমাট, এন্টারটেনিং লেগেছে। ‘পুরাতন’ আমি এডিট করেছি। গান ছাড়া ছবিটা ভালো লেগেছে। ডিটেকটিভ ছবি আমি কিচ্ছু দেখি না।

দেবকে আপনি পছন্দ করেন। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চান?

আদিত‍্য: দেব খুব জেনুইন। খুব সৎ। দেবের সঙ্গে আমার একটা ছবি করার ইচ্ছা আছে।

এই মুহূর্তে প্রেমের জীবনটা কীরকম?

আদিত‍্য: প্রেম করছি একজন বন্ধুর সঙ্গে। তাঁকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। এটাই বলতে পারি, প্রতিটা দিন যখন আমরা একসঙ্গে বাঁচছি, সেটা উপভোগ করছি। প্রতিটা দিন ওঁর সঙ্গে যে আছি, সেটা একটা চয়েস।আজকে আছি ওঁর সঙ্গে, কেন আছি, সেটা জানি না, এরকম নয়। আর গুরুত্বপূর্ণ হলো গ্রোথ। ওঁর সঙ্গে থেকে প্রতিদিন গ্রো করছি। আমি নিজেকে বেশি ভালোবাসতে শুরু করি ওঁর সঙ্গে থাকলে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি কারও জন‍্য কিছু স‍্যাক্রিফাইস করে দিলাম, এটা ভীষণ বোকা একটা কথা। নিজেকে ভালোবাসাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে ভালোবাসলেই অন‍্যকে ভালো রাখা যায়।

একটা লাভ স্টোরি তৈরি করতে চান?

আদিত‍্য: আমি রেডি তৈরি করার জন‍্য। শুধু প্রযোজক পেতে হবে।

শেষ প্রশ্ন। আরজি কর কাণ্ডের মধ‍্যে দিয়ে আপনার মায়ানগর গেল। কী অনুভূতি?

আদিত‍্য: শহরটা অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। লোকজন খুব পাল্টে গিয়েছেন। মানুষের ব‍্যবহার খারাপ হচ্ছে। কথায়-কথায় মারপিট হচ্ছে। এগুলোর মাঝেও হয়তো একটু আশায় ছিলাম। ভাবছিলেন শহরটাকে ঘিরে হয়তো আশা আছে। আরজি কর হওয়ার পর ওঁরা নিজেরাই বুঝিয়ে দিলেন, ‘কোনও আশা রেখো না! যতটুকু রাখছ ওটা ভুল। অতটুকু আশাও রেখো না’। এটা খুব দুঃখের জায়গা। এমন ঘটনার যে এই কনক্লুশান হতে পারে, এটা চিন্তার বাইরে। সেদিন রাতে যা ঘটেছে সেটা ইতিহাসের অংশ। তারপর সেটাকে এত লঘু করে দেওয়া আর দুর্গাপুজোর পর সব বদলে যাওয়া, এটা অদ্ভুত। আমি পলিটিকালি ইনক্লাইনড নই। তবে এটা অনুভব করার জন‍্য বোধহয় পলিটিকালি ইনক্লাইনড হতে হয় না।