পাকিস্তানে ভারতীয় মেয়ের স্পর্ধা! মৃত্যুফাঁদ থেকে কীভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন উজমা?
ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই-কমিশন। চিত্কার করতে করতে হাই-কমিশনের মেন বিল্ডিংয়ের দিকে ছুটছেন বোরখা পরা এক মহিলা। নিরাপত্তাকর্মীরা আটকে দেওয়ায় ওখানে দাঁড়িয়েই আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। কে, এই মহিলা? আত্মঘাতী জঙ্গি? কী তাঁর মতলব? হাই-কমিশনের নিরাপত্তারক্ষীদের তখন নাজেহাল অবস্থা। এটা ২০১৭ সালের ৭ মে’র ঘটনা। ওইদিন এক অভূতপূর্ব সঙ্কট, এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সাক্ষী হন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী-অফিসাররা। ১৮ […]

ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই-কমিশন। চিত্কার করতে করতে হাই-কমিশনের মেন বিল্ডিংয়ের দিকে ছুটছেন বোরখা পরা এক মহিলা। নিরাপত্তাকর্মীরা আটকে দেওয়ায় ওখানে দাঁড়িয়েই আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। কে, এই মহিলা? আত্মঘাতী জঙ্গি? কী তাঁর মতলব? হাই-কমিশনের নিরাপত্তারক্ষীদের তখন নাজেহাল অবস্থা। এটা ২০১৭ সালের ৭ মে’র ঘটনা। ওইদিন এক অভূতপূর্ব সঙ্কট, এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সাক্ষী হন ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী-অফিসাররা। ১৮ দিন পর ওই বোরখা পরা মহিলা নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, পাকিস্তান একটা মৃত্যুফাঁদ। ওখানে ঢোকা সহজ, বেরনো প্রায় অসম্ভব। এই সব কথা তিনি বলতে পেরেছিলেন, কারণ তখন তিনি ভারতে ফিরে এসেছেন।

দ্যা ডিপ্লোম্যাট ছবির দৃশ্য
ওই মহিলা, উজমা আহমেদের কথা আপনাদের অনেকেরই মনে থাকতে পারে। উজমা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। মালয়েশিয়ায় বেড়াতে গিয়ে এক পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে উজমার বন্ধুত্ব হয়। সেখান থেকে প্রেম। সেই বন্ধু তাহির আলিকে বিয়ে করতে তাহিরের সঙ্গেই তিনি যান পাকিস্তানে। তবে সেখানে উজমার জন্য অপেক্ষা করছিল একরাশ দুঃস্বপ্ন। জানতে পারেন তাহির বিবাহিত। অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারতে ফিরতে চেয়েছিলেন। পারেননি। উল্টে মারধর করে জোর করে তাঁকে নিকাহনামায় সই করানো হয়। ৭ দিন এ অবস্থায় কাটানোর পর ৭ মে হাতে একটা মাদুর নিয়ে ভারতীয় হাই-কমিশনের উদ্দেশ্যে রওনা হন উজমা। সঙ্গে তাহির। উজমা জানিয়েছিলেন, বিয়ের উপহার হিসাবে দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে তাঁর পরিবার। হাই-কমিশনের ভিসা অফিসে গিয়ে সেই টাকা নিতে হবে। কেননা, ভারত থেকে সরাসরি পাকিস্তানে টাকা পাঠানো যায় না। আর উজমা বলেছিলেন, বাপের বাড়িতে উপহার পাঠানোর জন্য পাকিস্তানে তৈরি রেশমের মাদুর নিয়ে যাচ্ছেন। তাহিরকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে হাই-কমিশনে ঢুকে পড়েন উজমা। চিত্কার, কান্নাকাটি জুড়ে দেন।
ভারতীয় অফিসারদের জানান, পাকিস্তানে গত কয়েকটা দিন তাঁর নরকের মতো কেটেছে। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে পাকিস্তানে আনা হয়েছে। জোর করে নিকাহমানায় সই করানো হয়েছে। অকথ্য নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় ১ ব্যবসায়ীর কাছে বেচে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, উজমা যে সত্যি কথা বলছেন, তার কোনও প্রমাণ ছিল না। হাইকমিশনে এমন ঘটনা ঘটলে, অভিযোগকারীকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ফেরত পাঠানোই দস্তুর। কিন্তু, সেদিন ডেপুটি হাই-কমিশনার জেপি সিং সে পথে হাঁটেননি। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল সামনে দাঁড়ানো মহিলা মিথ্যে বলছেন না। তাই হাইকমিশনেই তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জেপি সিং-কে বলেছিলেন যে ওই মহিলা সত্যিই ভারতীয় কিনা, আগে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যদি ভারতীয় হন, তা হলে দিল্লি যত দূর সম্ভব যাবে এবং তাঁকে ভারতে ফেরাবে। উজমা যে মিথ্যে বলেননি, তার প্রমাণ পেয়েই অল-আউট ঝাঁপিয়েছিল পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশন। তাঁর স্ত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পাক হাইকোর্টে মামলাও করেছিল তাহির। উজমাকে ফেরানোয় অন্য জটিলতাও ছিল। কিন্তু সব জট কাটিয়েই তাঁর ঘরে ফেরার ব্যবস্থা হয়। ভারতীয় দূতাবাসে থাকার সময় একাধিকবার উজমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন সুষমা স্বরাজ। ভারতে ফেরার পর বিদেশমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন উজমা। সে দৃশ্য গোটা দেশ দেখেছিল। গতকাল দেশজুড়ে মুক্তি পায় শিবম নায়ারের তৈরি ছবি দ্য ডিপ্লোম্যাট। জেপি সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জন আব্রাহাম। আট বছর আগে উজমার অবিশ্বাস্য হোম-কামিংয়ের গল্প বলেছে এই ফিল্ম।





