AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

এই বছর দুর্গাপুজোয় ‘বহুরূপী’ কেন টেক্কা দিল?

এই বছরের সেরা পারফরম্যান্স কোনটা? 'মানিকবাবুর মেঘ'-এ চন্দন সেন বা 'চালচিত্র এখন'-এ অঞ্জন দত্ত-র কাজ মাথায় রেখেও বলা যায়, শিবপ্রসাদ এগিয়ে। কৌশানী চক্রবর্তী কি জীবনের প্রথম সুপারহিট ছবি করলেন? উত্তর খুঁজতে বসে মনে হয়, কৌশানীর কেরিয়ারের মোড় ঘোরালো এই ছবি।

এই বছর দুর্গাপুজোয় 'বহুরূপী' কেন টেক্কা দিল?
| Edited By: | Updated on: Oct 12, 2024 | 3:06 PM
Share

ভাস্বতী ঘোষ

এটা সিনেমা। বাংলা ধারাবাহিককে বড় পর্দায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা নয়। এবার দুর্গাপুজোর সবচেয়ে বড় ছবি যে ‘বহুরূপী’ সেটা সিনেমা হলে দেখলেই আঁচ পাওয়া যাবে। প্রেক্ষাপট ধরিয়ে দিই। একজন ডাকাতের গল্প। ডাকাতের চরিত্রটা করেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ডাকাত-জন্মের যে গল্প, সেটা আকর্ষণীয়। সেই ডাকাত কীভাবে ছ্যাঁচড়াপুরে এসে পৌঁছাল, কেন পৌঁছাল, কীভাবে ডাকাতির দল তৈরি করল, সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ছবিজুড়ে। ডাকাত যখন আছে, পুলিশের সঙ্গে তাঁর টেক্কার গল্প থাকবেই। কে কাকে টেক্কা দিল, উত্তর ছবির শেষে। পুলিশের চরিত্রটা করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। ‘বহুরূপী’-র জোরের জায়গা চিত্রনাট্য। সত্য ঘটনা নির্ভর করে বোনা হয়েছে চিত্রনাট্য। বহু বছর ধরে পরিচালকদ্বয় নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই গল্পের ম্যারিনেশন করেছেন বলে টলিপাড়ায় শোনা যায়। সেই পরিশ্রমের ফলই বড় পর্দায় ধরা পড়ে। তাঁরা ডাকাতের চরিত্রটি তৈরি করার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যত্নবান হয়েছেন বলেই মনে হল। শেষ দশ বছরে বাংলা ছবির যেসব চরিত্রের কথা ঘুরফিরে আসে সিনেমাপ্রেমীদের চর্চায়, তার মধ্যে অবশ্য়ই থাকবে বিক্রম প্রামাণিক চরিত্রটা। এই চরিত্রকে ঘিরেই আগামী ছবির প্রেক্ষাপট সাজানো যায়। বিক্রম প্রামাণিকের সঙ্গে যেহেতু ঝিমলি চরিত্রটির বিয়ে হয়, তাই কৌশানী মুখোপাধ্যায় অভিনীত সেই চরিত্রও নজর কেড়ে নিয়েছে।

কেন ‘বহুরূপী’ এই সময় দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ? এমন একটা ছবি, যা বিনোদন আর বার্তাকে মিলিয়ে বক্স অফিসে ঝড় তুলতে সক্ষম, এই বছর তার অপেক্ষা ছিল। সামগ্রিকভাবে বাংলা ছবির ব্যবসায় এখন মন্দা। তাই টিকে থাকতে গেলে, এমন কিছু ছবি তৈরি করতেই হবে পরিচালকদের। লক্ষণীয়, বাংলার একজন কিংবদন্তি আর একজন সুপারস্টারের ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে বক্স অফিসে এগিয়ে গিয়েছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অভিনীত ছবিটি। এই দুর্গাপুজোর সেরা পারফরম্য়ান্স তাঁর। আবীর চট্টোপাধ্যায়ের কথা এখানে উল্লেখ না করার কারণ হল, চিত্রনাট্য শিবপ্রসাদকে যে সুযোগ দিয়েছে, আবীরকে তা দেয়নি। আবীর অবশ্য ভালো কাজ করেছেন। পুলিশ অফিসার আবীরের বউয়ের চরিত্র করেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। আবীর-ঋতাভরীর যে অংশ রয়েছে ছবিতে, তার দৈর্ঘ্য কিছুটা কমলে ভালো হত বলেই মনে হল। ছবির ক্লাইম্যাক্সের সঙ্গে ঋতাভরীর চরিত্রের যে যোগ, সেটাও জোরালো নয়। এই ছবিতে সঙ্গীত হেঁশেল সামলেছেন বনি চক্রবর্তী। দু’টো গান চিত্রনাট্যের জন্য অপরিহার্য। আবীর-ঋতাভরীর রোম্যান্টিক গানটা বাড়তি মনে হল। ‘ডাকাতিয়া বাঁশি’ গানটা সিনেমা হলে দেখতে দুর্দান্ত লাগে। এই গান থেকেই ছবির ‘বহুরূপী’ যোগ শুরু। চিত্রনাট্যে যেভাবে এই পেশার সাহায্য় নিয়ে এগিয়েছে, সেটা ইন্টারেস্টিং।

এই বছরের সেরা পারফরম্যান্স কোনটা? ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এ চন্দন সেন বা ‘চালচিত্র এখন’-এ অঞ্জন দত্ত-র কাজ মাথায় রেখেও বলা যায়, শিবপ্রসাদ এগিয়ে। কৌশানী চক্রবর্তী কি জীবনের প্রথম সুপারহিট (ব্লকবাস্টারের দিকে এগোবে ছবিটা আঁচ করা যাচ্ছে) ছবি করলেন? উত্তর খুঁজতে বসে মনে হয়, কৌশানীর কেরিয়ারের মোড় ঘোরালো এই ছবি। ছবিতে পার্শ্বচরিত্রদের অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি অনেক কিছুই আলাদা করে নজর কাড়ে। সম্পর্কের গল্পের বাইরে সত্য়ি যে বড় ব্য়াপারটা আছে এই ছবির, তাতে বলা যায়, ছবিটা টেক্কা দিতে পারে অনেক ছবিকেই। মজা হল, দর্শক হিসাবে বয়ে যেতে হয়। একটা সময় মনে হয়, এই ডাকাত যেন পুলিশকে টেক্কা দিতে পারে। দর্শককে এমন মানসিক দ্বন্দ্বে ফেলে দেওয়া চিত্রনাট্য বাংলা ছবির ইতিহাসে আছে। তবে বেশ কম। বিক্রম যেমন চ্যালেঞ্জ নিতে সদা প্রস্তুত, সেরকম পরিচালকদ্বয় যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ছবি তৈরি করেছেন, তার গভীরে গেলে মনে হয়, এবার দুর্গাপুজোয় সাফল্য শব্দটা ‘বহুরূপী’-র সঙ্গে সমার্থক।