AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

কাশ্মীর টু রাজস্থান! ভ্রমণ পিপাসু সত্যজিৎ যেখানে গিয়েছেন, ফেলুদাও পিছু পিছু…

সত্যজিতের সিনেমা বা গল্প মানেই, চিত্রনাট্যের সঙ্গে ক্রমাগত চরিত্রের দেখা সাক্ষাৎ বা দ্বন্দ্ব। পথের পাঁচালী সেই  গ্রাম হোক কিংবা মহানগরের কলকাতা শহর। সত্যজিতের ফ্রেমে চরিত্র আকার পায়, কোনও এক বিশেষ স্থানকে কেন্দ্র করেই। সত্যজিৎ তাঁর ছবির ফ্রেমও আঁকেন সেই হিসেবে। অনেকে ফিল্ম সমালোচকরা মনে করেন, সত্যজিতের কৌতুহলি এবং ভ্রমণ পিপাসু মন চরিত্রকে আঁকতেন সেই জায়গায় চরিত্রগুলোকে কল্পনা করেই।

কাশ্মীর টু রাজস্থান! ভ্রমণ পিপাসু সত্যজিৎ যেখানে গিয়েছেন, ফেলুদাও পিছু পিছু...
Image Credit: Social Media
| Updated on: May 02, 2025 | 6:57 PM
Share

এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ রায় পুত্র সন্দীপ রায় বলেছিলেন, বাবা যেখানে যেখানে গিয়েছেন, ফেলুদাও সেই পথে হেঁটেছেন। সত্য়জিৎ রায় যে ভ্রমণ পিপাসু ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু নয়। সিনেমা হোক বা উপন্যাস কিংবা ছোট গল্প, তাঁর লেখাতে বরাবরই কোনও জায়গা বিশেষ চরিত্র হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ফ্রেমে বা প্রতিটি লাইনে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাই বুঝিয়ে দিত, সত্যজিতের নখদর্পণে রয়েছে সেই জায়গাটি। আসলে, সত্যজিতের সিনেমা বা গল্প মানেই, বিশেষ জায়গার সঙ্গে ক্রমাগত চরিত্রের দেখা সাক্ষাৎ বা দ্বন্দ্ব। পথের পাঁচালী সেই  গ্রাম হোক কিংবা মহানগরের কলকাতা শহর। সত্যজিতের ফ্রেমে চরিত্র আকার পায়, কোনও এক বিশেষ স্থানকে কেন্দ্র করেই। সত্যজিৎ তাঁর ছবির ফ্রেমও আঁকতেন সেই সমীকরণে। অনেকে ফিল্ম সমালোচকরা মনে করেন, সত্যজিতের কৌতুহলি এবং ভ্রমণ পিপাসু মন চরিত্রকে আঁকতেন সেই জায়গায় চরিত্রগুলোকে কল্পনা করেই। কীভাবে চরিত্রগুলো সেই বিশেষ জায়গায় আচরণ করবে, তা মিলিয়ে দেওয়াই ছিল সত্যজিতের কলমের ম্যাজিক। আর তাই তো দুর্গা-অপু, কাশফুলের বনে মিশে যেতেন অনায়েসে। যেখানে কাশফুল মোড়া ফ্রেম ঢেকে দিয়েছিল ‘পথের পাঁচালী’র দুই চরিত্রকে! যেন কাশফুল ও রেলগাড়িই মুখ্য হয়ে উঠেছিল ফ্রেমে। ফিল্ম সমালোচকরা মনে করেন, যেহেতু পথের পাঁচালীর চরিত্র হয়ে উঠেছিল সেই গ্রাম, সেহেতু সত্যজিতের ফ্রেমে রেলগাড়ি দেখার দৃশ্যে গ্রামের কাশফুল বনই গুরুত্ব পেয়েছিল। যাকে শুধু অনুসরণ করেছিল দুর্গা ও অপু।

সত্য়জিতের এই ভ্রমণ পিপাসু মনের সন্ধান সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তাঁর ফেলুদার গল্পে। ফিল্মবোদ্ধারা সত্যজিতের ফেলুদা গল্পকে দুভাগে ভাগ করে থাকেন। প্রথমত, রহস্য উন্মোচন ও সমাধান করতে ফেলুদা আগে থেকেই জেনে বুঝে যে জায়গায় পৌঁছয়। দ্বিতীয়ত, ফেলুদা ছুটি কাটাতে গিয়েছেন আর কাকতালীয়ভাবে সেখানেই ঘটে যায় এমন অঘটন, যার সমাধানের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ফেলুদা।

সত্যজিতের সৃষ্টি ফেলুদার লেখায় প্রথম থেকেই স্থান বা জায়গা, পুরো গল্পকে আকার দেয়। সোনার কেল্লায় রাজস্থান। কৈলাশে কেলেঙ্কারিতে এলোরার কৈলাশ মন্দির। বেনারস ছাড়া তো জয় বাবা ফেলুদা ভাবাই যায় না। ঠিক যেমন, বাদাশাহি আংটি গল্পের আসল রহস্য লুকিয়ে ছিল লখনউয়ের ভুল ভুলাইয়াতে। সত্যজিৎ তাঁর গল্পে রহস্যকে দানা বাঁধানোর জন্য বেনারস, রাজস্থান, লখনউকে অনেক সময়ই চরিত্রের উপরে গিয়ে বর্ণনা করেছেন। গল্পকে মলাট দিতে সত্যজিতের এমন বর্ণনা, ফেলুদার রহস্য সমাধানকে আরও গতি প্রদান করত।

সন্দীপ রায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গুপি গাইন বাঘা বাইন ছবির শুটিংয়ের সময় জয়সলমেরের কেল্লাকেই হাল্লা রাজার কেল্লা বানিয়ে ছিলেন সত্যজিৎ। এবং সোনার কেল্লাতেও ব্যবহার হয়েছিল সেই কেল্লাই। কেল্লা এক, গল্প আলাদা। সত্যজিৎ রায় কখনই বুঝতেই দেননি দুটি ছবিতেই ব্যবহার হয়েছে একই কেল্লা।

১৯৮৭ সালে দেশ পত্রিকার পূজা বার্ষিকীতে প্রকাশিত হয় ভয়ঙ্কর ভূস্বর্গ গল্পটি। সেখানেও কাশ্মীর হয়ে ওঠে এক প্রধান চরিত্র। সত্যজিৎ পুত্র সন্দীপ রায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বয়েজ অপ পেপার নামে একটি ম্যাগাজিন রাখতেন বাবা। কাশ্মীর ভ্রমণে বেশ কিছু ছবি সেই ম্যাগাজিনে পাঠিয়ে ছিলেন। ওই পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল বাবার তোলা কাশ্মীরের ছবি। পুরস্কারও পেয়েছিল। ভূস্বর্গ ভয়ঙ্করের গল্পের মধ্যে সেই ছবিগুলোই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। বাবা একবারই কাশ্মীর গিয়েছেন। আর শেষ জীবনে যখন ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর লিখেছিলেন, তখন সেই ভ্রমণ ও ছোটবেলার স্মৃতিই গল্পে উঠে এসেছিল।