Chandreyee Ghosh: মায়েরা এসে ধন্যবাদ জানিয়ে যেত, ‘কটকটি’র নাম করে খাওয়াই: চান্দ্রেয়ী ঘোষ

Viral News: সমাজে আমার কাছে ভিলেন হচ্ছে পুরনো বেশ কিছু চিন্তাধারা। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি।

Chandreyee Ghosh: মায়েরা এসে ধন্যবাদ জানিয়ে যেত, 'কটকটি'র নাম করে খাওয়াই: চান্দ্রেয়ী ঘোষ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 07, 2023 | 12:36 PM
জয়িতা চন্দ্র
চান্দ্রেয়ীর কাছে খলনায়িকার সংজ্ঞাটা কী?
খলনায়ক বা খলনায়িকা চরিত্রের মধ্যে আমি সবার আগে যে বিষয়টা দেখি, তা হল, সেই মানুষটির বা চরিত্রটির মোটিভটা কী? সে কী চায়? একটা মানুষের জীবন তো চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে দিয়েই এগোয়, আমি খোঁজার চেষ্টা করি তাঁদের পয়েন্টটা কী? কারণটা কী? যার জন্য তাঁরা বিশ্বাসের সঙ্গে এমনটা করে। সেটার উপর অনেকটা নির্ভর করে আমি চরিত্রটাকে কীভাবে গ্রহণ করছি। তার বাকি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝার চেষ্টা করি। চরিত্রের জীবনের খামতিটা বোঝার চেষ্টা করি। একজন খলনায়ক বা খলনায়িকার জীবনেরও তো গল্প থাকে। সেই স্ট্রাগলটা জানা জরুরি বলে আমি মনে করি। প্রতিটা নায়িক-নায়িকার বা খলনায়ক-খলনায়িকার স্ট্রাগলের পিছনেই আসল কারণটা লুকিয়ে থাকে। তাই আমি মনে করি খলনায়িক বা খলনায়িকাদের কাছে এই ভিলেন ওঠার পিছনে একটা যুক্তি থাকে।
ছোটপর্দার খলনায়ক-নায়িকাদের কোথাও ক্লান্তি নেই? 
এক্ষেত্রে বলব, জীবনদর্শনটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খলনায়ক বা খলনায়িকার একটা আলাদা ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতার জায়গাটাও খুব চমকপ্রদ। আদৌ তাদের হাতে ক্ষমতা থাকছে কি না থাকছে না, তার থেকেও বড় হয়ে ওঠে তাঁদের বিশ্বাস যে, এটা আমার। এটা আমার প্রাপ্য। সবের ওপর একটা কন্ট্রোল। সবটা তাদের মনের মতো হবে, এমন একটা বিশ্বাস। বিশেষ করে ধারাবাহিকে এমনটাই হয়। তখনই তৈরি হয় মতবিরোধ। যখন দেখা যায় একজনের পছন্দ-ভাললাগা এমন দিকে যাচ্ছে, যেখানে সে ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে, ছিনিয়ে নিতে, তখনই বিষয়টা পাল্টে যেতে থাকে।

ভিলেন তকমাটা সব চরিত্রের জন্য খাটে? 
আমি মনে করি, জীবন মানুষকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলে পরীক্ষা নেয়। যেখানে আমাদের ইন্টারপ্রিটেশনটা পাল্টে যায় সময় ও ব্যক্তি বিশেষে। ধারাবাহিকে হয়তো খুব সহজ, ছোট্ট-ছোট্ট বিষয় দেখানো হয়, যেমন, কেউ নুন মিশিয়ে খুশি, কেউ আবার জল ফেলে দিচ্ছে, আমি কিন্তু ধারাবাহিকের বাইরে বেরিয়েই এই উত্তরটা দিচ্ছি। দিনের শেষে তো মানুষ, অনেক পরিস্থিতিতেই এমন কিছু করে বসে, যা হয়তো তাঁর থেকে কেউ আশা করেনি। আমরা অনেক সময় বলি দেখবেন, ‘এ বাবা, ও ওটা করে ফেলল? ওর কাছ থেকে এটা আশা করিনি।’ ফলে মানুষের ইনসিকিওরিটির জায়গাটায় আঘাত করলে কিছু মানুষ সেটাকে সুন্দরভাবে সামলে নিতে পারেন, তবে অনেকেই আছেন যাঁরা পারেন না। তাঁরা ছটফট করে ওঠেন। তাঁরা চিৎকার করে ওঠেন। আবার দাবিও ফলাতে থাকেন। ‘আমি কেন পাব না’, ‘আমি কেন পারব না’, ‘আমি কেন নই…’ এই পাওয়া, না-পাওয়ার ব্যালান্সটা একটা মানুষ জীবনে এক-এক রকমভাবে সামাল দেন। তখনই অনেকে এই ভিলেন তকমাটা পেয়ে যায়। অত বড় কিছু হয়তো তিনি করলেন না, কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে এমন জাঁতাকলে ফেলে দিল যে, সে নিজেও বুঝল না এটা কী হচ্ছে…। তাঁর কাছে নিজের সাপেক্ষে থাকা যুক্তিটুকুই সম্বল হয়ে দাঁড়ায়।
ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লেখার সময় কী এই সূক্ষ্মতাটা বজায় থাকে বলে আপনি মনে করেন? 
ধারাবাহিকের চরিত্রের একটা কন্টিনিউটি থাকে। এক-একটা পথ ধরেই এক-একটা চরিত্র এগোতে থাকে। সেটাই সিরিয়ালে মূলত দেখে থাকি। এবার ফিরি ব্যক্তি জীবনে, ধরুন আমি বা আপনি কাউকে অজান্তেই হয়তো কষ্ট দিয়েছি। হয়তো এমন কিছু করেছি যেটাতে পরেও আমরা অনুতপ্ত বোধ করছি, সেখানে আমি সেই ব্যক্তিটার জীবনে ভিলেন হলাম কি হলাম না, সেটা খুব প্রাসঙ্গিক। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটা নয়। সেখানে দেখা যায়, ভিলেনরা ধারাবাহিকভাবেই হয়তো কারও ক্ষতি করার চেষ্টা করছে বা জেনেই অন্যায় করে চলেছে।
সিরিয়াল থেকে কি দাপুটে খলনায়িক-খলনায়িকা চরিত্র হারিয়ে যাচ্ছে?
দেখুন, দাপুটে চরিত্রের অভাব খুঁজে পাচ্ছি, এটা বলব না। যেটা বলা চলে, সেটা হচ্ছে যে, ছোটপর্দায় খলনায়ক বা খলনায়িকার একটা এক্সট্রিম ভার্সান দেখানো হয়। রিয়েল লাইফে তো একটা মানুষের জীবনে অনেকগুলো স্তর থাকে। পর্দায় মূলত ‘খল’ বিষয়টার ওপরই জোর দেওয়া হয় এই ধরনের চরিত্রের ক্ষেত্রে। মানে অধিকাংশ ধারাবাহিকেরই এটাই ছক। আর সঙ্গে কিছু ছকভাঙা চরিত্র তো থাকেই।
বারবার খলনায়িকা হতে-হতে অভিনয়টা একঘেয়ে হয়ে ওঠে না? 
না, আমি উল্টে খুব আনন্দের সঙ্গে নেগেটিভ চরিত্র করে থাকি। আমার এই ধরনের চরিত্রকে উপস্থাপন করতে ভালই লাগে। প্রতিটা মুহূর্তে নিজের ভিতর একটা যুদ্ধ চলে। ভাল-মন্দ, ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়… এক অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি এই যে, আমি-ই সব, এটাকে প্রমাণ করার একটা বাড়তি তাগিদ থাকে। এইটা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং। মানবিক দিকটাকে তোয়াক্কা না করে লক্ষ্যটা এমনভাবে স্থির করে ফেলা, যে সে ওই পথেই হাঁটবে। আর অন্য কোনও বিষয় সে ভাবতে রাজি নয়। যে দর্শক দেখছেন, তার মনে এই চরিত্রের ক্ষমতার প্রতি সেই বিশ্বাস যোগানোটাও কঠিন।

‘কটকটি’ রিয়েল লাইফে কতটা ভিলেন? 
ওরে বাবা, অনেক-অনেক মজার ঘটনা জড়িয়ে আমার এই চরিত্রের সঙ্গে। বাচ্চারা আমায় দেখে রীতিমত ভয় পেত। মায়েরা এসে আমায় ধন্যবাদ জানিয়ে যেত, আপনার নাম করে খাওয়াই, পড়তে বসাই। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা।
চান্দ্রেয়ীর কাছে এই সমাজের ভিলেন কে? 
সমাজে আমার কাছে ভিলেন হচ্ছে পুরনো বেশ কিছু চিন্তাধারা। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি। এগুলোই আমাদের প্রতিটা মুহূর্তে পিছনে টেনে ধরছে। প্রতিটা মুহূর্তে এগুলোই আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে। সবকিছুর বদল ঘটছে। তাল মিলিয়ে প্রকৃতি বদলাচ্ছে। কেবল কিছু বিশ্বাস, কিছু ধারাবাহিকভাবে চলে আসা নিয়ম-নিষেধ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আটকে দিচ্ছে। বাড়তে দিচ্ছে না প্রাণ খুলে। এই একপেশে জীবনদর্শন, একপেশে চিন্তাভাবনাই বর্তমানে প্রগতির পথে ভিলেন বলে আমি মনে করি। এগুলো ঝেড়ে ফেলার সময় এসেছে।
আর ব্যক্তি জীবনে? 
না, তেমন কোনও ভিলেন আমি পাইনি। অনেকেই হয়তো অনেক কিছু করেছেন। যার জন্য আমি কষ্ট পেয়েছি। তবে পরবর্তীতে বোঝারও চেষ্টা করেছিলেন, যে সে কেন এমনটা করল? হয়তো কোনও অক্ষমতা থেকেই তৈরি হওয়া রাগে করে ফেলেছেন। মাঝে মধ্যে এই বিষয়গুলো সমস্যা সৃষ্টি করে ঠিকই, তবে এটাই তো জীবন।