স্নেহা সেনগুপ্ত
২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকে টানা অভিনয় করেছিলেন শাঁওলি চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় ‘সুবর্ণলতা’, ‘দেবদাস’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন। অরিন্দম শীলের ‘ভূমিকন্যা’তেও ছিলেন তিনি। ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন। সেই কারণেই সিরিয়াল থেকে দূরে ছিলেন শাঁওলি। মাঝে ‘মীরা’ সিরিয়ালে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ওয়েব সিরিজ়ের ডেটের সঙ্গে ক্ল্যাশ করে যাওয়ায় সরে আসতে হয়েছিল। তবে ফের তিনি ধারাবাহিকেই পুরোদস্তুর অভিনয় করছেন। এবার তাঁকে দেখা যাচ্ছে ‘আলতা ফড়িং’ মেগা সিরিয়ালে। এই ধারাবাহিকে নায়িকার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন শাঁওলি। মা ও মেয়ে দু’জনেই জিমন্যাস্ট। চরিত্রটি মনে ধরেছিল শাঁওলির। শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এর বাইরে আরও একটি পরিচয় আছে শাঁওলির। তিনি থিয়েটার-অভিনেত্রী। একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন এবং সেই সমস্ত অভিনয়ই দর্শকের মনে গেঁথে গিয়েছে। TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শাঁওলি বলেছেন অনেক কথাই…
নিয়মিত সিরিয়াল দেখা হয়?
না। দেখি না। কারণ সময় পাই না। তবে একটা সময় ‘গানের ওপারে’ দেখেছি।
‘আলতা ফড়িং’-এর নায়িকার সঙ্গে আপনার বয়সের পার্থক্য কতটা?
ওর ১৯। আমার ৩১। সে তুলনায় দেখতে গেলে অনেকটাই পার্থক্য। নায়িকা খুবই বাচ্চা মেয়ে। খুব ভাল নাচ করে।
ফট করে বয়সটা বলে দিলেন দেখছি… অভিনেত্রীরা তো বলতে চান না!
না বলেও উপায় নেই। কারণ বয়স বাড়লে সেটা ভাল মতোই বোঝা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, চরিত্রটা কী চাইছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বয়সের জন্য চরিত্র ফসকেছে?
বয়সের জন্য নয়। হাইটের জন্য ফসকেছে। অনেক সময় দেখা গিয়েছে আমার হিরো বেঁটে। এরজন্য অনেক ভাল পাঠ ফসকেছে। খুব রাগও হয়েছে।
আপনি এই সিরিয়ালে নিজেও জিমন্যাস্ট… কতখানি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?
সিরিয়ালের ক্ষেত্রে বিষয়টা কিন্তু এরকম একেবারেই নয়। যেদিন স্ক্রিনিং হয়, অনেকসময় সেদিনই গল্প লেখা হয়।
আপনি তো থিয়েটারও করেন… এখন কোন দলের সঙ্গে রয়েছেন?
এখন রয়েছি ‘হাতিবাগান সঙ্ঘারাম’-এর সঙ্গে। আমরা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রী ও বাইরের কিছু ছাত্র-ছাত্রী মিলে এই দলটা তৈরি করেছিলাম।
এই দলে তো অনির্বাণ ভট্টাচার্যও রয়েছেন…
হ্যাঁ। অনির্বাণদা আমাদের দলেরই অংশ।
অনির্বাণের পরিচালনায় ‘মন্দার’ দেখেছেন নিশ্চয়ই… কেমন লাগল?
দেখেছি। ভাল লেগেছে।
অনির্বাণ যে আপনাকে কাস্ট করলেন না, তাতে আপনার কোনও দুঃখ নেই?
না, একেবারেই দুঃখ নেই। আমি তো অনির্বাণদার সঙ্গে অনেকগুলো বছর ধরেই কাজ করছি। আমি জানি যে অভিনেতাকে যে চরিত্রে কাস্ট করার কথা, তাঁকে সেই চরিত্রেই কাস্ট করেন তিনি। সেখানে কোনও কমপ্রোমাইজ় করেন না। সেটা কিন্তু ‘মন্দার’-এর কাস্টিং দেখলেই বোঝা যায়। প্রচুর নতুন ছেলেমেয়ে কাজ করেছেন। প্রচুর দলের ছেলেমেয়েও কাজ করেছেন। নিশ্চয়ই আমার দরকার পড়েনি, তাই কাস্ট করেননি।
কার দলে প্রথম থিয়েটার?
ক্লাস ফোরে থাকাকালীন প্রথম দল জয়েন করি। জয়শ্রী ভট্টাচার্যর দলে নাটক করতাম। ১০ বছর সেখানেই ছিলাম। তারপর আরও ২-৩টে দলে থিয়েটার করেছিলাম।
এত ছোট বয়সেই দল জয়েন করেন?
আসলে ছোট থেকেই জানতাম অভিনেত্রী হব। বাড়িতেও কেউ আমাকে পড়াশোনায় জোর করেননি। সুতরাং, শুরু থেকেই বাড়ির সাপোর্ট ছিল। সকলেই ভিজ়ুয়াল আর্টস ও ফাইন আর্টসের সঙ্গে যুক্ত। বাবা পেন্টার, দিদি পেন্টার… মা জুয়েলারি মেকার। তাই চাপই ছিল না।
শাঁওলি কি খুব রাগী? অনেকেই কিন্তু সেটা মনে করেন…
ভয় পায়? তাই? ভয় পেতে শুনিনি। কিন্তু প্রথমবার আমাকে দেখলে অনেকে মনে করেন আমি গম্ভীর। সেটার কিন্তু অনেক সুবিধা আছে। অনেক ফায়েদা নেওয়া যায়। অপছন্দের মানুষকে এড়িয়ে চলতে সুবিধে হয়।
তা হলে তো অনেক পুরুষ ভয়েই কথা বলতে পারেননি?
এরকম নয়। কথা বলতে পেরেছেন। কারণ আমার খুবই তাড়াতাড়ি বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
‘ফেকবুক’, ‘মায়ার জঞ্জাল’, ‘সব ভূতুড়ে’-এর মতো ছবিতেও তো কাজ করেছেন… বিনোদনের সব মাধ্যমেই কাজ করে ফেলেছেন… সবচেয়ে কাছের কোনটা?
আমি সবেতেই কমফর্টেবল। ওরকমভাবে সত্যি ভাবিনি। ভাল চরিত্র হলে ভাল লাগে। কিন্তু থিয়েটারটাই বেশি কমফর্টেবল। কারণ, ওটা অনেকদিন থেকে করছি।
কোন পরিচালকের সঙ্গে বারবার কাজ করতে ইচ্ছে করে?
ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। ওঁর সঙ্গে ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ কাজ করেছি। দারুণ পরিচালক, দারুণ মানুষ। বারবার কাজ করতে চাই। ‘৭ নম্বর সনাতন সান্যাল’ ওয়েব মুভিতে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রীয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। কৌশিকদার পরিচালনায় কাজ করতে চাই। আপনার সঙ্গে একটা জিনিস শেয়ার করি…
কী?
‘৭ নম্বর সনাতন সান্যাল’-এর লুকটা দেখেই কিন্তু আমার ‘আলতা ফড়িং’-এর কাস্টিং হয়েছে।
টলিউডে কাস্টিং কাউচের মুখোমুখি হতে হয়েছে?
এই বিষয়টা নিয়ে আমি কিন্তু খুব একটা কিছু শুনিনি। আমার ক্ষেত্রে অন্তত হয়নি। আমি বাকিদের কথা বলতে পারব না।
মিটু মুভমেন্ট নিয়ে আপনার কী মতামত?
অপব্যবহার না হলে অবশ্যই হওয়া উচিত। আমি মিটুর পক্ষে। কিন্তু অনেক সময় ভুলভাবে লোককে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টলিউডের বাইরে বেরিয়ে কাজ করবেন কবে?
জানি না। অপেক্ষায় আছি আমিও। কোনও অডিশনের সুযোগ এলে অংশ নিই। এবার দেখা যাক কবে সুযোগ আসে।
শাঁওলির কি চরিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ছুৎমার্গ আছে?
আমার কাছে গল্পটা খুব গুরুত্ব পায়। সেখানে যদি আমার ১০ মিনিটের চরিত্রও থাকে, অসুবিধা হয় না। এরকম কাজ আমি করেওছি।
সাহসী কিংবা অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তো…
একাধিক করেছি। তাতে আমার আর কোনও অসুবিধাও নেই। আমি সাবলীলভাবেই করতে পারি। থিয়েটারেও করেছি। লাইভ পারফরম্যান্সে করেছি যখন, আর কোনও অসুবিধা নেই। যে-যে ওয়েব সিরিজ়ে এই ধরনের দৃশ্য করেছি, সেখানে সে রকম পরিচালকও পেয়েছি, যাঁরা আমার পাশে ছিলেন। খুব একটা অস্বস্তির মধ্যে কাজ করতে হয়নি।
আপনার কি মনে হয়, অন্তরঙ্গ দৃশ্য কি খুব লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে?
এখন সত্যিই দেখতে পাই, যে হয়তো দরকার ছিল না। কিন্তু তা-ও সিনটা রাখা হয়েছে। দর্শক কিংবা ব্যবসার কথা মাথায় রেখে রাখা হয়েছে। অনেক অভিনেতাই সেই সিনে অভিনয় করতে রাজি থাকেন।
সেক্ষেত্রে আপনি কি করেন?
আমরা ক্ষেত্রে সেরকম কিছু ঘটেনি, যেখানে মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয় সিন রয়েছে।
দর্শকের প্রশ্ন… অনস্ক্রিনে চুমুর দৃশ্যগুলো কি সত্যি? মানে সত্যি-সত্যিই চুমু খেতে হয়?
নিশ্চয়ই। খেতে হয়। এবার বিষয়টা নির্ভর করে কীভাবে শট নেওয়া হচ্ছে।
যাঁকে পছন্দ নয়, তাঁকেও চুমু খেতে হলে…?
সেটা যে যার মতো করে প্রসেস করে নেন। অভিনেতার নিজস্ব ব্যাপার। তবে আমার ধারণা, অভিনয় করার সময় সে সব বিষয় মাথায় থাকে না। চিত্রনাট্যের চাহিদাই হয়ে ওঠে আসল বিষয়। আমার তো কিছু-কিছু অন্তরঙ্গ সিন কেটে ইউটিউবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কী কাণ্ড!
বাড়িতে দেখেছে?
দেখলেও কিছু বলবে না। আমার বাড়ির লোকের কোনও অসুবিধা নেই।
আপনি তো লাকি?
তাঁরা বোঝেন, যে সেগুলো আমার কাজের সিন।
আরও পড়ুন: Arijit Singh Controversy: রূপরেখা নন, তবে কে ছিলেন অরিজিৎ সিংয়ের প্রথম স্ত্রী? কেনই বা ভেঙেছিল বিয়ে?