পুজো মানে সব সময় আমার কাছে ত্রিধারা সম্মিলনী। সেটা বিয়ের আগে, বিয়ের পরে নাথিং হ্যাজ চেঞ্জড। পুরোটাই পাড়াতে আড্ডা মারার ব্যাপারটাই আছে। আমার মা বিয়েতে যে তত্ত্ব দিতে শুরু করেছিল, তারপর নববর্ষ, জামাইষষ্ঠী, পুজো… আমি এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। খুবই ভাল লাগে। আমি এখন জানি, এই সব অনুষ্ঠানে মা সাজিয়েই পাঠাবে। শুধু আমাদের জন্য তো নয়, শ্বশুরবাড়ির সকলের জন্যও পাঠায়। ত্রিধারার পুজোতে গৌরব থাকে। আমার কাছে পুজো মানেই এথনিক সাজগোজ। এটা আমার ছোটবেলা থেকেই ছিল। শাড়ি বা লেহেঙ্গা, আনারকলি, এ সবই পড়ি। সেটা বৃষ্টি হোক, গরম হোক, এথনিকই পরব।
সারা বছর আমাকে আপনারা জিমে অনেকটা সময় দেখতে পান ঠিকই। কিন্তু পুজোর পাঁচদিন জিম করি না। কিছুই করি না। জিমের জন্য পুজোর দিনগুলোতে সময় বের করতে চাইও না। ছোটবেলা থেকে পুজোর সময় পড়াশোনাও করতাম না। এখন কাজও করি না। কোনও জাজমেন্ট, কোনও ওপেনিংও করি না। কারণ ষষ্ঠী থেকে একদম মজা করার জন্য। এ বছর অনুষ্ঠান খুব কম হচ্ছে। আমার পঞ্চমী পর্যন্ত শুটিং আছে। সেটার বেশ রাত করে প্যাক আপ হচ্ছে। আর এ বছর অনুষ্ঠানের সংখ্যা অনেক কম। কোভিড প্রোটোকল মেনে পাড়াতেও কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না। স্টেজই করা হয়নি। করোনার জন্য কোনও অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না।
পুজোতে কখনও বেড়াতে যাইনি। যাবও না কখনও। ছোট, বড়, ধেড়ে আমার সববেলার সব কিছুই ত্রিধারাকে ঘিরে। রাত দশটায় প্যাকআপ হলেও এক ঘণ্টা পাড়ায় আড্ডা না মারলে মনে হচ্ছে পুজোটা মিস হয়ে গেল।
বাঙালির পুজোর প্রেম একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বাবাকে লুকিয়ে প্রেম করার চেষ্টা আমিও করেছি। আধ ঘণ্টার জন্য পালিয়ে গিয়ে কখনও। তারপর না পেরে পাড়াতেই এক সময় প্রেম করেছি। তারপর সেটাও হয়নি। ফাইনালি বাবা খুব একটা ধরতে পারেন না। কিন্তু মা ঠিক ধরতে পেরে যান। বাবা পরিচিত হলেও বাবা বুঝতে পারেন না। ছেলেরা যেমন হয় আর কি… ইনোসেন্ট…। মা ঠিক ধরে ফেলত প্রত্যেকবার। প্রতিবার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যেতাম।
আমি এখনও পুজোর সময় বাবার থেকে হাত খরচা নিই। আমার এখনও এই দশা। আমি ওদের কিনে দেওয়ার জায়গায় নেই। বাবা এখনও আমাকে পুজোর সময় নিয়ে গিয়ে শপিং করে। এই শিডিউলের মধ্যেও নিয়ে গিয়ে বাবা জামা, জুতো কিনে দেয়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি ওদের কিনে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। সেটা আমার ধৃষ্টতা বলে মনে করি। এ বছর আমার বর বাবা, মাকে কিনে দিয়েছে। আর আমি শাশুড়িদের, ননদদের, নন্দাইকে কিনে দিয়েছি। কিন্তু মা, বাবাকে কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই।
আর একটা সেলিব্রেশন হল সিঁদুর খেলা। আমি ছোটবেলা থেকেই পাড়ায়, মা, আন্টিদের সিঁদুর খেলতে দেখেছি। এতদিন পর্যন্ত সকলে আমাকে বা আমাদের সিঁদুর লাগিয়ে দিত। কিন্তু এ বছর আমি প্রথম ঠাকুরকে দিতে পারব। সেটা প্রপার বিবাহিতা হিসেবে। সেটার আলাদা ইমোশন তো কাজ করেই। মা তত্ত্বে পাঠিয়েছে সিঁদুর খেলার শাড়ি। ওটাই পরব।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: আমাদের বাড়িতে পুজো হয়, মা দুর্গা স্বপ্নে পাওয়া ঠাকুর: অন্বেষা হাজরা