আমার মায়ের বাড়ি দুর্গাপুরে। কলকাতায় থাকার প্ল্যান নেই। ইনফ্যাক্ট কোনওবারই থাকি না। এ বারও দুর্গাপুর যাচ্ছি। পুজোটা বাবা, মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে তরপর ফিরব। এ বারের মতোই আগের বারের পুজোতে করোনার জন্য ভয় ছিল। দুর্গাপুরেই ছিলাম আমরা। একদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলাম। আসলে এখন তো পুজো আমার মেয়ের। এখন একটু বড় হয়েছে যদিও। বুঝিয়েছি পুজোর ব্যাপারটা। জন্মের পর থেকে করোনার মধ্যেই বড় হচ্ছে।
মেয়ের জামা আমি গোনারও সময় পাইনি। রোজ বাড়ি ফিরে দেখতাম নতুন প্যাকেট রাখা থাকছে। ২৫টা পেরিয়ে গিয়েছে। আর আমার পুজোর শপিং আলাদা করে অনেকদিন যাবৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সারা বছর কাজের প্রয়োজনেই নতুন জামা কিনতে হয়। যেটা যখন প্রয়োজন। গত বছরের নতুন জামা পরে রয়েছে এখনও। পরা হয়নি। কোথাও বেরোনো নেই, শুধু শুটিং করি। সেখানে আর কত নতুন জামা লাগবে? এ বছর শাড়ি হয়েছে নতুন। নিজের মেকআপ কেনারও সময় হয়নি।
আমরা ছোটবেলায় বেড়াতে চলে যেতাম। অষ্টমীর দিন। ষষ্ঠী, সপ্তমী কাটিয়ে বেড়াতে যেতাম, লক্ষ্মী পুজোর পর ফিরতাম। এক মাস ছুটি থাকত তো। আমি ভীষণ ঠাকুর দেখতাম। পাড়ার পুজো, গলির পুজো সব ঠাকুর দেখতাম। এখন সে অভ্যেস আর নেই। দুর্গাপুরে কলকাতার মতো ভিড় আমার ছোটবেলায় হত না। ফলে চুটিয়ে ঠাকুর দেখতাম।
পুজোর সময় খাওয়াদাওয়া চিরকালই আমার কাছে বড় ব্যাপার। এ সময় একেবারেই মেনটেন করি না। সারা বছরও আলাদা করে ডায়েটে বিশ্বাস করি না। আর এই পুজোর ছুটির মধ্যে মায়ের হাতে আমার সব পছন্দের রেসিপি খেয়ে ফেলতেই হবে। অষ্টমীর দিন লুচি, আলুরদম। দুপুরে মাছ, মাংস। অষ্টমীর দিন বাড়িতে কম খাবার খাওয়াই যাবে না। অনেক কিছু খেতে হবে। হা হা হা…। বাবা রেস্তোরাঁর খাবার পছন্দ করে না। বাড়িতেই আয়োজন হয়। আমিও বাড়ির খাবার ভালবাসি। মায়ের বহাতে বিভিন্ন ধরনের কচুর আইটেম, যে কোনও মাছ, লইট্যা মাছ, চুনো মাছ মায়ের হাতের স্পেশ্যাল… সব কিছু সারতেই হবে পুজোর মধ্যে।
আপনাদের সঙ্গে মজার একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি…। আমার পুজোয় প্রেম মানে ছিল ঝাড়ি মারা প্রেম। পুজোও শেষ। প্রেমও শেষ। প্রেমের ভাগ্য আমার কোনওকালেই প্রসন্ন নয়। খুব যে প্রেম করেছি তা নয়। দু-এক পিসই হয়েছে। বরাবরই সিরিয়ার প্রেমে বিশ্বাস করি। কিন্তু পুজোতে বেরিয়ে যদি ঝাড়ি নাই মারা হল, তা হলে পুজোর সাজ ঠিকঠাক হয়নি বলে মনে হয়। মুখে কেউ বলত না। কিন্তু মনে মনে সবাই তাই ভাবত। আমার বাড়ি আসলে খুব কড়া ধাতের ছিল। ছোটবেলায় কেউ প্রোপোজ করলে বলতাম, মা বকবে। প্রেম করা যাবে না। আমাকে প্রোপোজ করে লাভ নেই। বিয়ে করতে চাইলে বাবার সঙ্গে কথা বল। এটা বলে দিতাম। পুজোর সময় স্কুটিতে আমি আর বোন বেরতাম। মোটর সাইকেলে বাবা, মা আসত। তখন আমাদের গাড়ি ছিল না। স্কুটি, আর মোটরসাইকেলে ভাগাভাগি করে আমি, বোন, বাবা, মা পুজোয় বেরতাম। ছেলের দল আমাদের দেখে বলত, ‘হ্যালো মামনি!’ সেটা দেখে বাবা পিছন থেকে জোরে জোরে হর্ন দিত। হা হা হা…। ওরা তো জানে না, পিছনে বাবা, মা আসছে…।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: স্কুলে যাওয়ার পথে রোজ মূর্তি গড়া দেখতাম, সেটা ভুলব না: তনুশ্রী ভট্টাচার্য