Sreelekha Mitra: সারমেয় নিয়ে ফের কটাক্ষের মুখে শ্রীলেখা, বিক্রি করতে চাইছেন নিজের বাসভবন
"প্লিজ় ভাববেন না আমি নাটক করছি, ওটা আমি ক্যামেরার সামনে ছাড়া করতে পারি না", হাপুস নয়নে কাঁদতে-কাঁদতে বলেছেন শ্রীলেখা।
একজন মানুষের জীবনে কতখানি সময়ের ব্যবধানে ওঠা-নামা থাকতে পারে? প্রতিপলকে যদি চমকাতে হয় কাউকে, একটা সময়ের পর হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অন্য রাস্তা খোঁজাও যায় না। এমনটাই মনে করেন অনেকে। ঠিক যেমনটা মনে করছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। ফের প্রিয় সারমেয়দের নিয়ে কটাক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে শ্রীলেখা। নিতে চলেছেন বড় সিদ্ধান্ত।
দক্ষিণ কলকাতার একটি সুন্দর সাজানো অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন দমদমের মেয়ে শ্রীলেখা মিত্র। রক্তজল করা পয়সায় কিনেছেন সেই অ্যাপার্টমেন্ট। সাজিয়েছেন মনের মতো করে। বাড়ির চিরস্থায়ী বাসিন্দারা সকলেই মেয়ে – শ্রীলেখা, তাঁর মেয়ে মাইয়া ও এক বয়স্ক দিদা। ফলে ‘গার্লি’ রঙে ও আসবাবে সাজিয়েছেন বাড়িখানা। এই তিনজন বাদেও বাড়িতে থাকে আরও তিনটি প্রাণী – চিন্তামণি, আদর ও করণ। চিন্তামণি বিদেশি বিগল সারমেয়। আদর ও করণকে রাস্তা থেকে তুলে এনে সন্তান স্নেহে লালন করছেন অভিনেত্রী।
এছাড়াও, অ্যাপার্টমেন্টের আশপাশে থাকা পথ কুকুরদের দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন শ্রীলেখা। তাদের নিয়মিত টিকাকরণ করিয়েছেন, যাতে কারও সংক্রমণ না ছড়ায়। নিজে গিয়ে তাদের খাইয়ে আসেন প্রতিদিন। এরজন্য কম লড়াই করতে হয়নি শ্রীলেখাকে। প্রতিনিয়ত বিরোধিতা করেছেন অ্যাপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দারা। সেসব লড়াই সামলেছেন। কাউকে কাউকে পাশে পেয়েছেন। এসব তোয়াক্কা না করেই লকডাউনে কুকুরগুলোর দেখভাল করেছেন। মুখে তুলে দিয়েছেন খাবার-জল। কিন্তু শুক্রবার (০৫.১১.২০২২) যা হল, তাতে মন-মানুসিকতা একেবারে ভেঙে গিয়েছে শ্রীলেখার।
দুটি লাইভ করেছেন অভিনেত্রী। প্রথমটি গন্ডগোল হওয়ার সময়, অন্যটি গন্ডগোলের পরে। প্রথম লাইভে দেখা যায়, আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দারা এসে পথ-কুকুরদের প্রতিপালন নিয়ে তীব্রভাবে কটাক্ষ করছেন শ্রীলেখাকে। তাঁর সঙ্গে বচসা চলাচ্ছেন। শ্রীলেখাও বিরোধিতা করছেন। পরের লাইভে কান্নায় একেবারে ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। সেখানে তিনি সাফ জানিয়েছেন, “অনেক কষ্ট করে অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছি। আমার রক্ত জল করা পয়সায় কেনা। কিন্তু যা হচ্ছে আমি এখানে থাকতে পারছি না। ওরা আমার হাত ধরেছে, আমাকে পাগল বলেছে, বলেছে আমার বাড়ির বাইরে নোংরা- আবর্জনা ফেলে দেবে, কুকুরকে বিষ খাইয়ে মারবে… এত নেতিবাচকতার মধ্যে আমি হেরে গিয়েছি। আমি এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকব। যাঁরা কুকুর ভালবাসেন না, আমার থেকে এই অ্যাপার্টমেন্ট কিনে নিন। আমি আর এখানে থাকব না।”
লাইভে কাঁদতে-কাঁদতে তাঁর জীবনের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের কথা বলেছেন শ্রীলেখা। বলেছেন, “কিছুদিন আগে আমি বাবাকে হারিয়েছি। আমার এই বাড়িতে আমি আছি, বুড়ি দিদা আছে, আমার মেয়ে দুই বাড়ি মিলিয়ে থাকে। আর আমার পোষ্যরা আছে। আমি এতকিছু সহ্য করতে পারছি না। আমি কুইট করলাম। এখানে আর থাকব বা।”
এর আগেও আবাসনে শ্রীলেখার প্রকাশ্য সারমেয় মমতা দেখে বিরোধিতা করেছেন অনেকে। তিনি লড়াই করেছেন। কিন্তু বদ্ধপরিকর হয়ে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করার কথা কখনও বলেননি তিনি।
ভালমন্দ মিলিয়ে শ্রীলেখার জীবন। প্রতি পলকে পালটে যায় তাঁর জীবনের সুখ-দুঃখ। আজ ভাল, কালই বেদনা ঘিরে ধরে। কিছুদিন আগের কয়েকটি ঘটনা বললেই বুঝবেন। কুকুর দত্তক নেওয়ার শর্তে শশাঙ্ক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কফি ডেটে গিয়েছিলেন শ্রীলেখা। তারপর জুরিখে বেড়াতে গেলেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারলেন সেই কুকুরটি মারা গিয়েছেন। জুরিখ থেকে আঁচ পাওয়া গেল তাঁর যন্ত্রণার। সেই যন্ত্রণা কিছুটা ভুলে ভেনিস গেলেন। সেখানে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হলেন। ভেনিসের মাটিতে দেখানো হল তাঁর ছবি ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ক্যালকাটা’। ফিরে এসেই জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু বাবাকে হারালেন শ্রীলেখা। সেই থেকে ক্রমাগত লড়ে চলেছেন। বাবাকে হারানোর বেদনা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি শ্রীলেখা। আর আজ এই ঘটনা। এরই নাম জীবন। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, ফের লড়াইয়ে ফিরবেন শ্রীলেখা। এত সহজে ‘কুইট’ করার পাত্রী তিনি নন।
আরও পড়ুন: Aryan Khan Drug Case: জামিনের শর্ত মতো শুক্রবার এনসিবি অফিসে হাজিরা দিতে গেলেন আরিয়ান