জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক তিনি। অতনু ঘোষ। লকডাউনে বহু মানুষ ছবি দেখে দিন কাটাচ্ছেন আর অতনুবাবু লকডাউনে বাড়িতে থেকে ২৭ মিনিটের একটি ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। ছবির নাম ‘অনুভবে অতিমারী’—Panedemic peceptions। লকডাউনে মানুষের অনুভূতি-উপলব্ধির কথা ফুটে উঠেছে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে। সে ছবি অনলাইনে মাত্র পঞ্চশা টাকা খরচ করে দেখাও যাচ্ছে। লকাডউনের মধ্যে আবার কোনও গল্প ভাবতে শুরু করে ফেলেছেন পরিচালক। কিন্তু এত সবের মধ্যে এক টুকরো ঘটনা ভাগ করে নিলেন অতনুবাবু। তিনি এবং তাঁর বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার দিতে আসা ভদ্রলোকের গল্প। তিনি ফেসবুকে লিখলেন,
‘বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার দিতে আসে অশোক। সিনেমায় পার্ট করার ইচ্ছে। আমি পাত্তা দিইনা। এবার নিজেই চিত্রনাট্যে তাঁর ভূমিকা খুঁজে বার করেছে।
—‘এই যে হুহু করে গ্যাসের দাম বেড়ে গেল, এই ব্যাপারটা ছবিতে আনুন না দাদা’
মেনে নিলাম, আনা যায়। আনা উচিৎ। ‘তাহলে আমার একটা সিন ঢোকে আর কি!’ মুখে এক গাল হাসি।
—‘দাম কেন বাড়ছে জিজ্ঞেস করলে তোমার ডায়লগ কি হবে?’ ভাবলাম, জব্দ করেছি। লাজুক হেসে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল।
—’বলবো, ওটা ওপরমহল থেকে করেছে। আমি তো চুনোপুঁটি!’
পরিচালক চুপ। চুনোপুঁটি কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার সত্যিই অশোককে একটা পার্ট দিতে হয়!’
Tv9 বাংলার পক্ষ থেকে তাঁকে ফোনে ধরার পর প্রশ্ন করা হয়, আপনার ছবিতে অশোকের রোল বাঁধা তাহলে ? শুনে একগাল হেসে বললেন “মা বেঁচে ছিলেন যখন, তখনও অশোক বারবার বলতো ছবিতে পার্ট করবে, মা ওর কথা শুনে বলতেন, একটা ছোট্ট কোথাও ঢুকিয়ে দে না?…আসলে কী বলুন তো ওকে একটা ছোট্ট পার্ট অর্থাৎ সিনো চোখের পলকে ও আসবে আর চলে যাবে, তাতে কি ওর সন্তুষ্টি হবে না ওর গোটা পরিবার, যাঁরা ওকে দেখবে বলে সিনেমাহলে আসবে? তাঁদের আশ মিটবে? আমার নিজের ভীষণ খারাপ লাগে এভাবে বললে…কিন্তু এটা ঠিক ওঁর চুনোপুটি কথাটা খুব অবাক করে দিয়েছে। সত্যিই তো আমিও তো অশোকের দলেই পড়ি। পেট্রোল-ডিজেল কিংবা রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে…আমাদের মতো চুনোপুটির কষ্টের কথা কি ওপরমহল ভাবছে? অশোকের কথাগুলো এখনও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি তো চুনোপুঁটি…”