তিনি যেমন ভাল অভিনেত্রী, তেমনই সুদক্ষ পরিচালক। কার্শিয়ংয়ের ডাও দিলের মেয়েটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কেরিয়ারের শুরুটা কাটিয়েছিলেন মুম্বইয়ে। সেখানে চুটিয়ে অভিনয় করেছিলেন হিন্দি সিরিয়ালে। তারপর যা হয় আরকী। বিয়ে হয়, সংসার নামের বস্তুটি আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে… মুম্বই ছেড়ে সোজা চলে আসেন কলকাতায়। স্বামী কৌশিকের পাকাপোক্ত ঘরণী হয়ে ওঠেন। ছেলে উজানই হয়ে ওঠে ধ্যানজ্ঞান। কাজও করেছেন তার মধ্যে। কিন্তু যেভাবে তিনি করতে পারতেন, তা হয়তো হয়ে ওঠেনি। পরিবারে তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করেন কৌশিক-উজান দু’জনেই। কৌশিক এখন একজন প্রতিষ্ঠিত পরিচালক। উজানেরও অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়ে গিয়েছে। উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পাড়ি দিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঝাড়া হাত-পা মা চূর্ণী তাই নিজের দিকে তাকানোর সময় পেয়েছেন। সেই সময়ই সুযোগ এল মুম্বই থেকে। ফোন এল করণ জোহরের প্রযোজনা সংস্থা থেকে। আলিয়া ভাট, রণবীর সিং রয়েছেন সেই ছবিতে। আর রয়েছেন ধর্মেন্দ্র, জয়া বচ্চন, শাবানা আজ়মির মতো অভিনেতারা। কলকাতার আরও এক অভিনেতা রয়েছেন। তিনি টোটা রায় চৌধুরী। TV9 বাংলাকে দেওয়া একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে চূর্ণী আগেই জানিয়েছিলেন হিন্দি ছবিতে তাঁর প্রথম কাজের অভিজ্ঞতার কথা। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন ছবির শুটিংয়ের কিছু বিশেষ মুহূর্তে।
যে ছবি চূর্ণী শেয়ার করেছেন তাতে রয়েছেন আলিয়া ভাট, করণ জোহর, রণবীর সিং ও চূর্ণী নিজে। ছবি মুক্তি পাবে ২০২৩ সালে। ছবিটি নিয়ে দারুণ উত্তেজিত চূর্ণী। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “লেজেন্ডদের সঙ্গে ফ্লোর শেয়ার করে আমি সত্যি অভিভূত। ধর্মাজি, জয়া বচ্চনজি, শাবানা আজ়মিজি… এবং হ্যাঁ অবশ্যই আলিয়া ভাট এবং রণবীর সিং। দু’জনেই অসামান্য অভিনেতা এবং সুইটহার্ট। ধর্মা প্রযোজনা সংস্থার ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ পরিচালনা করেছেন অন্যতম করণ জোহর। ২০২৩ সালে আসছে…”
একান্ত সাক্ষাৎকারে TV9 বাংলার পক্ষ থেকে চূর্ণীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল পরিচালক হিসেবে করণ জোহরকে কীরকম মনে হয়েছে? উত্তরে চূর্ণী বলেছিলেন, “এই এক্সপিরিয়েন্সটার জন্যই তো অপেক্ষা করে ছিলাম। ওঁর সঙ্গে কাজ করব। ওঁর পরিচালনা সামনে থেকে দেখব। আগে তো মুম্বইয়ের কোনও ছবিতে আমি কাজ করিনি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হল। আমার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। করণের পরিচালনা খুব কাছ থেকে দেখলাম। প্রত্যেকটা বিষয়ে ওঁর খুব নজর। এক দণ্ড নিজে বসে থাকেন না। বারবার উঠে এসে আমাদের বলে যান কী করতে হবে। অনেক সময় অভিনয় করেও দেখান করণ।”
ছবিতে কাজ করতে গিয়ে অভিনেতা হিসেবে অনেক স্বাধীনতা পেয়েছেন চূর্ণী। বলেছিলেন, “করণ ওঁর অভিনেতাদের ইমপ্রোভাইজ় করতে দিতে বিশ্বাসী। একেবারেই গুরুগম্ভীর মানুষ নন। আমরা খুবই মজা করে কাজটা করেছি। তবে কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস করণ। ওঁর নেতৃত্বে সকলেই মন দিয়ে কাজ করেছে।”
আলিয়া ভাট ও রণবীর সিংয়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে চূর্ণী বলেছিলেন, “সকলেই খুব উষ্ণ। সকলেরই কথাবার্তা খুব সুন্দর। কাজ করার সময়ও কোনও অসুবিধে হয়নি। সবচেয়ে বড় বিষয়, প্রত্যেকেই একে-অপরকে প্রশংসা করেন। রণবীর আলাদা করে আমার প্রশংসা করেছেন। আমার অভিনয়ের একটা বিশেষ জায়গা ছিল। সেটা নিয়ে পরদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বাহবা দিয়ে যান। খালি বলেন, “তুমি কী ভাল করেছ?” সেটা আবার আমাকে অভিনয় করে দেখালেনও। বলেন, “এটাই তো করা উচিত। একটা স্ক্রিপ্ট পেয়ে নিজের মতোই তো করা উচিত।” আলিয়াও খুবই ওয়ার্ম।”
ছবিতে ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে চূর্ণী বিশেষ একটি অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছিলেন, “আমার তো সৌভাগ্য ওঁর সঙ্গে কাজ করলাম। কী যে মাটির মানুষ কী বলব। আমার হাত ধরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। দু’টো হাতের মধ্যে আমার হাত মুঠো করে ধরে বলেন, “বেঙ্গলি আই”। আমাকে দেখলেই বলেছেন, বেঙ্গলি আই! বাঙালিদের খুব শ্রদ্ধা করেন ধর্মেন্দ্রজি। ওঁর পরিচিত বাঙালিদের কথা বারবার বলছিলেন।”