National Award Winner Kalkokkho: ‘ছবিটা চলতে দেওয়া হল না…’, আক্ষেপ জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ‘কালকক্ষ’ ছবির পরিচালকের কণ্ঠে

National Award: 'ছবিটা দর্শকেরা দেখুক', 'ছবিটা দর্শকদেরই জন্য', 'সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাঁধা গল্প', 'ছবির মধ্যে থাকা আবেগ', 'যন্ত্রণা, ভালবাসা, আশা-হতাশা সব উপকরণ রয়েছে',-- তবে এই আর্জি পৌঁছায়নি অনেকেরই কান পর্যন্ত... আক্ষেপ রাজদীপ-শর্মিষ্ঠার।

National Award Winner Kalkokkho: 'ছবিটা চলতে দেওয়া হল না...', আক্ষেপ জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত 'কালকক্ষ' ছবির পরিচালকের কণ্ঠে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 25, 2023 | 12:42 PM

ঠিক একবছর আগে, অর্থাৎ ১৯ অগস্ট, ২০২২, বাংলার বুকে মুক্তি পেয়েছিল এক অন্যস্বাদের ছবি। নাম, কালকক্ষ। নয়া পরিচালকদ্বয় শর্মিষ্ঠা মাইতি ও রাজদীপ পালের একবুক স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নের পাখায় এবার উড়ান পর্ব। ২৪ অগস্ট ২০২৩ জাতীয় পুরস্কার মঞ্চে সম্মানিত হল এই ছবি। বাংলার বুক থেকে সেরা বাংলা ছবি হিসেবে নির্বাচিত হল কালকক্ষ। প্রতিযোগিতায় ছিল বাঘাবাঘা ছবি, কিন্তু এই দৌড়ে যে কালকক্ষ নির্বাচিত হবে তা হয়তো অনুমাণ করতে পারেননি খোদ পরিচালক জুটি। আন্দাজ করতে পারেননি, কারণ ছবি মুক্তির পর যে পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছিলেন তাঁরা, সেই লড়াই আজও তাঁদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। ‘ছবিটা দর্শকেরা দেখুক’, ‘ছবিটা দর্শকদেরই জন্য’, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই বাঁধা গল্প’, ‘ছবির মধ্যে থাকা আবেগ’, ‘যন্ত্রণা, ভালবাসা, আশা-হতাশা সব উপকরণ রয়েছে’,– তবে এই আর্জি পৌঁছায়নি অনেকেরই কান পর্যন্ত… আক্ষেপ রাজদীপ-শর্মিষ্ঠার।

ছবির বিষয়বস্তু:

এক অন্য ধাঁচের বাড়ি। চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা অদ্ভুত সব চরিত্রের ফাঁদে এক ডাক্তার। প্রতিটা পদে যিনি পরিস্থিতির হাতে বাঁধা পড়ছেন। না, পরিস্থিতি ঠিক নয়, প্রকৃতির হাতে। বাড়ির মধ্যে থাকা তিন নারী চরিত্র যেন প্রকৃতিরই তিন রূপ, ধীরে ধীরে গ্রাস করছে মানুষের অহংকার, ঔদ্ধত্যকে। পদে-পদে জানান দিচ্ছে তাঁদের ক্ষমতা। না, গল্পের প্রতিটা ভাঁজে কেবল রহস্য-রোম্যাঞ্চ নয়, এই কাহিনি সাধারণের। এই কাহিনি লকডাউনের। যখন শিশুর থেকে প্রকৃতি কেড়েছে শৈশব, প্রাপ্তবয়ষ্কের থেকে প্রকৃতি কেড়েছে স্বাধীনতা, বার্ধক্য থেকে প্রকৃতি কেড়েছে তার স্বস্তি, শান্তি ও অবসর, তখন সেই কঠিন বাস্তবের মাটিতেই জন্ম নেয় ছবি ‘কালকক্ষ’র চিত্রনাট্য। ‘কালকক্ষ’র মুখ্য তিন চরিত্র মনে করিয়ে দেয় মানুষের জীবনে কেটে যাওয়া কঠিন লকডাউনের অভিশাপের কথা।

জাতীয় পুরস্কার পেয়ে TV9 বাংলাকে কী বললেন পরিচালক শর্মিষ্ঠা?

ভাবলেও কষ্ট লাগছে, ছবিটাকে আঁছড়ে, টেনে নামিয়ে দেওয়া হল। আমি বানিয়েছি বলে বলছি না, এই ছবিটা তো ইতিহাসে থাকার মতোই। এই ছবির গল্প সেই কথাই তো বলে, করোনা, অতিমারী, কীভাবে গ্রাস করেছিল, কীভাবেই বা মুক্তির আলো দেখেছিলাম আমরা, এটা তো তারই ডকুমেন্টেশন। এতো সাধারণ মানুষের ছবি। এই গল্প তো সকলের। এর অধিকারীও সকলেই। আমরা সেই দর্শকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। তবে এই ছবিটাকেই নন্দন ২ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। বড় প্রযোজনার ছবি নিয়ে ব্যস্ত তখন সিনেপাড়া। বাংলার দর্শক হয়তো ছবির নামটাই ভুলে গিয়েছিল। বাংলার দর্শককে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এই ছবিটা পুরস্কার পেয়েছে বলেই যে আমি এই জ্যঁরের বাইরে বেরবো না এমনটা নয়। আমি মনে করি বাণিজ্যিক ছবিরও প্রয়োজন রয়েছে। আমি যদি তেমন চিত্রনাট্য পাই, স্টারকাস্টদের নিয়ে ছবি করার সুযোগ পাই সেটাই করব। তবে কী বলতো, আমাদের প্রথম ছবি তো, প্রথম সন্তানের মতো, চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না।

জাতীয় পুরস্কার পেয়ে TV9 বাংলাকে কী বললেন ছবির আরেক পরিচালক রাজদীপ?

কালকক্ষ আন্তর্জাতিকস্তরে সম্মানিত হয়েছে। জাতীয়স্তরেও সম্মানিত হয়েছে। ছবিটা যখন মুক্তি পায় কিছু মানুষের ভালবাসাও পেয়েছিল, কিন্তু ছবিটাকে চলতে দেওয়া হল না। অনেক বাংলা ছবিকেই চলতে দেওয়া হয় না। এবার তো এটা নন্দন ২ কমিটির কাছে লজ্জার, গোটা বাংলার কাছে লজ্জার। জাতীয় স্তরে সেরা বাংলা ছবিকে নন্দন ১-এ চালানোর যোগ্য মনে করেননি এখানকার কর্তারা। এবার তাঁরাই ভাবুক… আজ আর আমি কী বলব। একটা সময় তো বলতে চেয়েছিলাম। চিৎকার করেছিলাম। শোনার কেউ ছিল না।

আজ সবাই প্রশংসা করছে, সত্যি ভাললাগছে। তবে এটাও ঠিক যে, যে ছবিটা জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে সেটাই ভাল বাকি সব খারাপ, কখনই নয়। সব ছবিরই একটা দর্শক থাকে। আমাদের জন্য এটা খুব গর্বের।

অরোরা প্রযোজক সংস্থার বর্তমান কর্ণধার অঞ্জন বসু TV9 বাংলাকে বললেন, ”ছবি মানেই কী নকল করা? ৪৫ বছর আগের স্মৃতিতে ফিরলাম। কালকক্ষ দিয়ে যখন নতুন করে কাজ শুরু করল অরোরা, আবারও প্রাপ্তী। অরোরা ধারা বজায় রাখতে পারল, এটাই আনন্দের। শর্মিষ্ঠা-রাজদীপ অনেক বড় পরিচালক হোক।”